২১ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৫:০৫

আইএমএফ-এর ঋণ পরিক্রমা

-ইবনে নূরুল হুদা

কোভিডের নেতিবাচক প্রভাব ও ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে বিশ^ অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। আর তা থেকে আলাদা থাকেনি আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও। ফলে আমাদের অর্থনীতিতেও মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই। যা রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে দেশের আত্মসচেতন মানুষকে।

চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে সরকার অনেকটাই ব্যাংক ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে তা সকল সময়ের সীমা অতিক্রম করেছে। সঙ্গত কারণেই ব্যাংকগুলোতে বড় ধরনের তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

শুধুই কোভিড ও ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত নয় বরং লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও সীমাহীন অব্যবস্থাপনার কারণেই দেশে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আর চলমান সে সঙ্কট মোকাবিলার জন্য মূলত আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও নানাবিধ শর্ত পালনের সম্মতি সাপেক্ষে আইএমএফ এই ঋণ প্রদানের প্রাথমিক সম্মতিও দিয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের শেষে আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করবে এবং ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত আলোচনার জন্য আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহ সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে সরকার অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই আছে বলেই মনে হচ্ছে।

আইএমএফের শর্ত পূরণের অংশ হিসাবেই তড়িঘড়ি করে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর আগে গত আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে রেকর্ড পরিমাণে। আর গত জুনে দাম বাড়ানোর পর আবারো বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। বাকি আছে পানির দাম, তাও বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। এখানেই শেষ নয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেই দিয়েছেন যে, মাসে মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। একইভাবে আবারও সমন্বয় করা হবে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দামও। কারণ, সরকারকে এসব খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। এটাই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অন্যতম শর্ত। আইএমএফের ঋণের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই সরকার কিছু শর্ত পূরণ করা শুরু করে দিয়েছে। মূলত, যেসব শর্ত পূরণ করা সহজ, যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সেগুলোই সরকার দ্রুত করছে। কিন্তু অতীতেও দেখা গেছে যেসব সংস্কার অজনপ্রিয়, যার কারণে প্রভাবশালীরা চাপে পড়বে, তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে, সেসব শর্ত শেষ পর্যন্ত খুব একটা বাস্তবায়িত হয় না। এবারও বোধহয় তার অন্যথা হচ্ছে না। আর সরকার আইএমএফের ঋণ পাওয়ার জন্য সে নেতিবাচক পথেই অগ্রসর হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে জনস্বার্থের বিষয়টি কোনভাবেই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না বরং শ্রেণি-তোষণকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ফলে দেশে গণঅসন্তোষ দেখার দেয়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। যদিও সরকার বিষয়টিকে মোটেই আমলে নিচ্ছে না বরং আপাতত ঋণ পাওয়ার জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এক্ষেত্রে অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণের কারণে দেশে দেশে সামাজিক অসন্তোষ দেখা দেয়ার নজীরও রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা, আফ্রিকার মিসর, মরক্কো, নাইজেরিয়া এবং এশিয়ায় ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ মানুষকে এ জন্য রাস্তায়ও নামতে হয়েছিল। পাকিস্তানও শর্ত পূরণ করতে পারছে না বলে ঋণ আটকে আছে। যদিও দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে, এমন কিছু তারা করতে চায় না। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই ব্যতিক্রম। কারণ, প্রস্তাবিত ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ও স্বার্থের কথা কোনভাবেই ভাবা হচ্ছে না।

জানা গেছে, আইএমএফের কাছ থেকে সর্বশেষ বাংলাদেশ ঋণসহায়তা পেয়েছিল ২০১২ সালে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ২০১০ সালেই আইএমএফ থেকে ঋণ চাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। পরের বছর সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে আইএমএফের কাছে ঋণসহায়তা চান তিনি। এরপর ২০১২ সালের ২৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফকে চিঠি লেখা হয়। পরের মাসে, ১১ এপ্রিল আইএমএফ বোর্ড ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে এবং পরের মাসেই ঋণের প্রথম কিস্তি পায়। বর্ধিত ঋণ সুবিধা (ইসিএফ) নামের সেই কর্মসূচি চলে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।

সেই ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু থেকে ঋণের শেষ কিস্তি পাওয়া পর্যন্ত সময়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল পাঁচবার, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় আটবার এবং পানির দাম বাড়ানো হয় পাঁচবার। তবে সার্বিক দিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভর্তুকি কমানোর শর্ত মেনে সরকার এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করলেও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের কারণে বেশ কিছু সংস্কার সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নতুন ভ্যাট আইন। ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে ভোটের আগে ভ্যাট আইন করবে না বলে সরকার জানিয়ে দিলে আইএমএফ ঋণের কিস্তি এক বছর আটকে রেখেছিল। ২০১৬ থেকে নতুন আইন বাস্তবায়ন করা হবে, এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরই আইএমএফ ২০১৫ সালের নভেম্বরে শেষ দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করেছিল।

২০২৪ সালের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাই এখন সরকার নির্বাহী আদেশে সরকারি নানা পরিষেবার দাম বাড়ালেও নির্বাচনের ঠিক আগে আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কার কতটা করতে পারবে, তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সরকারের জন্য খুব একটা সহজসাধ্য হবে বলে মনে হয় না। কারণ, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই সরকারকে সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাই এমন কোন সিদ্ধান্ত সরকার নিতে চাইবে না যাতে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের জন্য ঋণ পাওয়াটা জরুরি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশ এর আগে ১২ বার আইএমএফের ঋণ পেয়েছে। ১৯৭২ সালে সদস্য হওয়ার পর আইএমএফ থেকে প্রথম ঋণ নেয়া হয় ১৯৭৪ সালে। ২০১২ সালে নেওয়া সর্বশেষ ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেটাই ছিল আইএমএফের কাছ থেকে নেওয়া সর্বোচ্চ ঋণ। আর এবার বাংলাদেশ পাবে আরও বেশি ৪৫০ কোটি ডলার। এই অর্থের মধ্যে ৩২০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বর্ধিত ঋণ সুবিধার (ইসিএফ-ইএফএফ) আওতায় এবং বাকি ১৩০ কোটি দেয়া হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায়। তাই এই অর্থ দিয়ে সরকার চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট কতখানি মোকাবেলা করতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ থাকছে।

মূলত, আইএমএফের ঋণ শর্তের ধরন প্রায় একই রকম। দেশে দেশে পার্থক্য থাকে না। তবে তারা সব ঋণ একসঙ্গে ছাড় করে না। সাত কিস্তিতে তা দেওয়া হয় এবং প্রতি কিস্তি দেওয়ার আগে আইএমএফ শর্ত বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করে। বাংলাদেশ প্রথম কিস্তিতে পাবে ৪৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এর পর থেকে ৬৫ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার ডলার করে ৬ কিস্তিতে বাকি অর্থ দেয়া হবে। সুতরাং শর্ত পূরণ না করলে পরবর্তী কিস্তিগুলো স্বাভাবিকভাবেই আটকে যাবে।

কখন কোন শর্ত পূরণ করতে হবে, তা আইএমএফ প্রকাশ করবে বোর্ডের অনুমোদনের পর। তবে আলোচনা পর্যায়ে এ নিয়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। তখনো বেশ কিছু সংস্কার করণীয় নিয়ে বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে। মূলত পাঁচ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশকে গ্রহণ করতে হবে। যেমন, সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতির কাঠামো আধুনিক করা, আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, বাণিজ্য পরিবেশ ভালো করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়ানো। এই পাঁচ ধরনের বিষয়ের মধ্যে মূল বিষয়গুলো হচ্ছে, সরকারের ভর্তুকি কমাতে হবে, যাতে সরকার বেশি অর্থ উন্নয়ন ও সামাজিক খাতে ব্যয় করতে পারে। এ জন্য সরকারকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানি ও সারের দাম বাড়াতে হবে। এই পাঁচ পণ্যেই সরকারকে বেশি ভর্তুকি দিতে হয়। সরকার এ কাজ সহজেই করে ফেলছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর শর্তও এবার রয়েছে। এ জন্য নানা খাতে যেসব কর ছাড় দেয়া হয়, তা কমাতে বলেছে আইএমএফ। নির্বাচনের আগে সরকার তা কতটা করবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। বিষয়টি নিয়ে সরকার পড়েছে উভয় সঙ্কটে। কিন্তু তারা এ সঙ্কট কীভাবে সামাল দেবে তা নিয়ে আগাম কোন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।

আসলে মূল্যস্ফীতি কমাতে বাংলাদেশ মুদ্রানীতিকে তেমন ব্যবহার করছে না। মুদ্রানীতিকে আধুনিক করতে প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদহার নীতি নমনীয় ও বাজারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতাতেই বাংলাদেশ প্রথম সুদহার বাজারব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়েছিল। সেই সুদহার এই সরকার আবার ৯ শতাংশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আইএমএফ এই নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে বলেছে। ব্যবসায়ীদের খুশি রাখার এই পথ থেকে নির্বাচনের আগে সরকার সরে আসতে পারবে কি না, সেটাও এখন দেখার বিষয়। আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুত বা রিজার্ভ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। সরকারের হিসাবে এখন রিজার্ভ হচ্ছে ৩ হাজার ২৫২ কোটি ডলার। কিন্তু এই অর্থের মধ্যে ৮১০ কোটি ডলার বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দিয়েছে, যা চাইলেই সরকার ব্যয় করতে পারবে না। এই অর্থ হিসাব থেকে বাদ দিতে বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা মেনেও নিয়েছে।

দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে এখন ব্যাংক খাত। আইএমএফ খেলাপি ঋণ কমানো, সরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে আমলা পরিচালকদের বাদ দেয়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানো, বেসরকারি ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং পুঁজিবাজারকে উন্নত করার কথা বলেছে। সরকারের জন্য এটিই হবে সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা এই খাত দখল করে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও পৃষ্ঠপোষকতা আছে।

রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফান্ড (আরএসএফ) নামের একটি নতুন তহবিল আইএমএফ গঠন করেছে গত বছরের ১৩ এপ্রিল। যেসব স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে আছে, তারা এই তহবিল থেকে ঋণ পাবে। ইতিমধ্যে বারবাডোজ, কোস্টারিকা ও রুয়ান্ডা এই ঋণ পেয়েছে। এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই ঋণ পেতে যাচ্ছে। ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ১৩০ কোটি ডলার এই ঋণ। এই ঋণ পরিশোধের সময় ২০ বছর, আর এর বাড়তি সময় বা গ্রেস পিরিয়ড হচ্ছে সাড়ে ১০ বছর।

জানা গেছে, ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ৩২০ কোটি ডলার বাংলাদেশ বাজেট সহায়তা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। বাকি ১৩০ কোটি ডলার খরচ করতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করার মতো কর্মসূচিতে। সুতরাং আগামী বাজেটে অর্থ ব্যয়ের জন্য সরকারের হাতে বাড়তি অর্থ থাকবে। আইএমএফ ছাড়াও বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকেও বাজেট সহায়তার অর্থ চেয়েছে সরকার। এখন এই অর্থ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ধরনের ভোটের ও জনতুষ্টির প্রকল্পে সরকার ব্যয় করবে, নাকি অর্থনৈতিক সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য লক্ষ্যভিত্তিক কর্মসূচি নেয়া হবে, সেটাই প্রশ্ন। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় রাস্তা প্রশস্ত করা, হাওড়ে উড়ালসেতু নির্মাণ বা নির্বাচনের জন্য ইভিএম প্রকল্প নিয়ে কথা উঠেছে। সামনে আরও ভোটের প্রকল্প আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মূলত, সরকার দেশের চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার কথা বলে আইএমএফ-এর কাছ দ্রুত ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছে। আর ঋণ প্রাপ্তিতে আন্তর্জাতিক এই অর্থনৈতিক সংস্থাটি যেসব শর্ত আরোপ করছে সেসবের অংশবিশেষ খুব দ্রুততার সাথেই বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু এক্ষেত্রে জনস্বার্থের কথা চিন্তা করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) বক্তব্য হলো, সহজ শর্ত বাস্তবায়ন করছে সরকার। কিন্তু রাজস্ব বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতে সুশাসন আনা বা খেলাপি ঋণ কমানোর মতো কঠিন বিষয়গুলো সরকার আসলে কতটুকু করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে। যেহেতু ৪২ মাসের ঋণ কর্মসূচি, ফলে ব্যাংক ও রাজস্ব খাতের কাঠামোগত সংস্কারের কাজে হাত দেওয়াই উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মূলত, সরকার ঋণপ্রাপ্তিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু আইএমএফ-এর শর্ত পূরণ করতে যেয়ে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সে বিষয়টি মোটেই বিবেচনা করা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটির শর্ত পূরণ করতে যেয়ে বিভিন্ন সেবাখাত থেকে সরকার ভর্তুকি প্রত্যাহার করছে। ফলে বিদুৎ, গ্যাস, জ¦ালানি ও পানির দাম লাগামহীনভাবেই বেড়ে চলছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজার পরিস্থিতিসহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর। আর এসব শর্তই পূরণ করা হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। কিন্তু যেসব শর্ত পূরণ করতে গেলে বিশেষ শ্রেণির অসুবিধা হয় বা সরকারের ক্ষমতার রশিতে টান পড়ে সেসব পুরোপুরি উপেক্ষা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে আলোচনার মাধ্যমে আইএমএফ-এর শর্তাবলী পুনর্বিন্যাস হওয়া দরকার। শুধুই ঋণ প্রাপ্তির জন্য এমন শর্ত মেনে নেয়া উচিত নয় যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে।

https://dailysangram.com/post/514261