২০ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১১:০০

৭৮ লাখ ডলার বেশি ব্যয়ে চাল ক্রয়

চুক্তির পর চালের দাম কমে গেছে, আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি থেকে যখন-তখন বেরিয়ে আসা যায় না -খাদ্য সচিব

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে প্রতি টনে প্রায় ৩৯ ডলার (৩৮.৭৫) বেশি দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করছে সরকার। এতে ২ লাখ টন চাল আনতে প্রায় ৭৮ লাখ ডলার (৭৭.৫০) বেশি ব্যয় হবে। টাকার অঙ্কে অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ ৮২ কোটি টাকার বেশি (১ ডলার সমান ১০৬ টাকা হিসাবে)। খাদ্য মন্ত্রণালয় ৪৩১ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলারে প্রতি টন চাল কেনার জন্য ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। অথচ বেসরকারি পর্যায়ে প্রতি টন চালের বাজার মূল্য ৩৯৩ থেকে ৩৯৭ ডলার। এ হিসাবে সরকারকে প্রতি টনে সর্বোচ্চ প্রায় ৩৯ ডলার বেশি ব্যয় করতে হবে। বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন।

রোববার নিজ কার্যালয়ে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমরা আগে কিনেছি। ক্রয় চুক্তির পরপরই দাম কমে গেছে। চাল তো আমদানি করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি মেনেই চুক্তি করা হয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা বাজার দরের চেয়ে প্রতি টনে ৮০ ডলার কম দামে ৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল আমদানি করেছি। এবার চুক্তি করেই ফেলেছি। আমরা চাইলে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু স্বীকৃত নিয়ম রয়েছে। চাইলেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা যাবে না।

এখন বেরিয়ে আসলে পরে আমরা তাদের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে আন্তঃরাষ্ট্রীয় লেনদেন করতে পারব না। তাছাড়া বিশ্বময় খাদ্য সংকট রয়েছে। আমরা চাল চাই। টাকা এখানে কোনো বিষয় নয়। কারণ সরকার মানুষকে অভুক্ত রাখতে চায় না। দেশের ভেতর থেকে চাল কেনা সম্ভব ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, কথা তো একই, দেশের ভেতর থেকে চাল ক্রয় করলে, সেই শূন্যতা পূরণের জন্য বেসরকারি ভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে সরকারি গুদামে চাল ও আটা প্রায় ১৯ লাখ টন মজুত আছে।

জিটুজি প্রক্রিয়ায় ২ লাখ টনের বাইরেও আরও ১ লাখ টন আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কিনবে সরকার। ইতোমধ্যে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ওই চাল কেনার অনুমোদন দিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ভারতের দুটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ লাখ টন করে ২ লাখ টন। আর দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫০ হাজার টন করে উন্মুক্ত দরপত্রে ১ লাখ টন চাল কেনা হবে। দেশে ডলার সংকট বিরাজ করছে। এই সময়ে সবচেয়ে কম দামে যেখান থেকে চাল পাওয়া যাবে, সেখান থেকে সরকারের চাল কেনা উচিত ছিল বলে মনে করছেন খাদ্য বিভাগের অনেক কর্মকর্তা।

বেশি দামে চাল আমদারি বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক যুগান্তরকে বলেন, সরকার একটু অপেক্ষা করে ভালোভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ শেষে ক্রয় করা উচিত ছিল। তাড়াহুড়ো করা ঠিক হয়নি। এতে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আমদানির মধ্যেও মধ্যস্থতাকারী থাকে। এখানেও মধ্যস্থতাকারী আছে। তারাই সরকারকে বিভ্রান্ত করেছে। সার আমদানিতেও একটি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সব সরকারের সময় এরা সক্রিয় থাকে। এদিকে খাদ্য বিভাগের কয়েক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, একাধিক ব্যক্তি ভারত সরকারের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে লোকাল এজেন্ট হিসাবেও কাজ করেন। মধ্যস্বত্বভোগীর বিষয়ে খাদ্য সচিব ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তারা খাদ্য বিভাগের কেউ নন। তারা ভারত সরকারের লোকাল এজেন্ট। তারা কাস্টমস দেখভাল করেন। ট্রাক ঠিক করেন। আনা-নেওয়ার যাবতীয় কাজ তারা তদারকি করেন।

জানা গেছে, সরকারি পর্যায়ে চাল কেনার আলোচনা শুরু হয় অক্টোবরে। আলোচনা চূড়ান্ত হয় ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। ওই সময়ের রপ্তানি মূল্য অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় দুটি সংস্থার সঙ্গে চাল আমদানির দরদাম ঠিক হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র দেওয়া হয়েছে ডিসেম্বরে। কম দামে পর্যাপ্ত চাল আমদানির জন্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ডিসেম্বরে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফরে যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় চাল আমদানির আশ্বাস পায়নি প্রতিনিধি দলটি। ফলে অনেকটা নিরুপায় হয়ে ভারতের কাছ থেকে চাল কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি করা চালের ৭০ শতাংশ চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে আনা হবে। আর ৩০ হাজার টন ট্রেনে আসবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/636681