১০ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:২৫

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সুপারিশ

বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই সরকারের আমলে ২০১০ সাল থেকে গ্রাহক পর্যায়ে ৯ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১০ সালের মার্চে প্রথম বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩ টাকা ৯২ পয়সা। পরের বছর (২০১১ সাল) গ্রাহক পর্যায়ে দুই দফা বাড়ানোর ফলে বিদ্যুতের গড় দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৪ টাকা ৬৭ পয়সা।

২০১২ সালেও খুচরা বিদ্যুতের দাম দুই দফা বাড়ানো হয়। এর মধ্যে মার্চে বাড়ে ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে ১৫ শতাংশ। এতে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের গড় মূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ৫ টাকা ৭৫ পয়সা। এরপর ২০১৪ সালের মার্চে বিদ্যুতের দাম ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৬ টাকা ১৫ পয়সা। আর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তা ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে হয় ৬ টাকা ৩৩ পয়সা।

এদিকে ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ৬ টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর সর্বশেষ ২০২০ সালের মার্চে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্যহার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে গড় মূল্যহার দাঁড়ায় ৭ টাকা ১৩ পয়সা।

সম্প্রতি আবারো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। সেই হিসেবে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৭ দশমিক ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২৩ পয়সা হওয়ার কথা। এতে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ ভাগ। এদিকে এই দাম বাড়ালেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। যা অনাকাক্সিক্ষত ও অযৌক্তিক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

গত ৮ জানুয়ারি সকাল থেকে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনের একটি অডিটরিয়ামে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সংক্রান্ত গণশুনানি শুরু হয়। এই শুনানিতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি এই সুপারিশ করেছে। শুনানিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বললেও মানসম্মত সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেনি বিতরণ কোম্পানিগুলো। যা আত্মসচেতন মানুষের মধ্যে রীতিমত বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। শুনানিতে পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি টন কয়লার দাম ২৩০ ডলার এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে। কিন্তু বিআরসি পাইকারি মূল্য বৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না।

গত ২১ নবেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরপর বিদ্যুতের খুচরা দাম বৃদ্ধির আবেদন করে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো। সবগুলো প্রতিষ্ঠান বলছে পাইকারি দাম বৃদ্ধির পর খুচরা দাম না বাড়ালে তারা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

শুনানিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তাদের প্রস্তাবে জানিয়েছে, দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে ১১২৭ কোটি টাকা। একইভাবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২৩৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ১৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) ১৪০২ কোটি টাকা, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ৫৩৫ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবি করা হয়েছে। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) কোনও আর্থিক অংক দাঁড় না করালেও বলছে দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে।

মহামারির নেতিবাচক প্রভাব ও ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের কারণে গোটা বিশে^ই নানাবিধ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের দেশে মূল্যস্ফীতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অথচ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে। আর বারবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমতাবস্থায় নতুন করে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি না করে প্রয়োজনে এই খাতে ভর্তুকী বাড়ানোর পরামর্শ এসেছে বিভিন্ন মহল থেকেই। বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনার দাবি রাখে।

https://dailysangram.com/post/513228