৯ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১২:৪৯

বিরূপ আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন খাত

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন খাত। একদিকে ইংরেজি বছর ২০২২-এর বিদায় ও নতুন বছর ২০২৩ সালের বরণকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক পর্যটকের দেখা পাননি সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে আবার শুরু হয়েছে ঘনকুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহ। এ ছাড়া ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যা হওয়ায় সিলেট অঞ্চলের পর্যটন এলাকা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি এসব অঞ্চল। ফলে পর্যটকও কম যাচ্ছে সিলেটে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট, কুয়াকাটা, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পর্যটন খাতে নানান অব্যবস্থাপনা, নিম্নমানের সেবা, অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এবারের থার্টিফার্স্টে পর্যটকদের সমাগম ছিল খুবই কম। নতুন বছরের আগে পরে ৩ দিনে পর্যটক খাতে কমপক্ষে ৩৬০ কোটি টাকা ব্যবসা হবে এমনটাই আশা ছিল ব্যবসায়ীদের। কিন্তু হয়েছে তার অর্ধেক মাত্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১৬ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক আসে।
এর মধ্যে ৮০.২৮ শতাংশ অনাবাসী বাংলাদেশি। বাকি ২ লাখ ৯১ হাজার জন বিদেশি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা অভাবনীয় বৃদ্ধি পেয়েছে গত কয়েক বছরে। বাংলাদেশে প্রায় ১.৫ কোটির উপরে অভ্যন্তরীণ পর্যটক সারা দেশে ভ্রমণ করে এবং ৪০ লাখের বেশি মানুষ এই শিল্পে কর্মরত রয়েছে। পর্যটকদের অভিমত, যথাযথ বিকাশের মাধ্যমে শুধু পর্যটন শিল্প থেকেই বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে বাংলাদেশ। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। পৃথিবীর যেকোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করার মতো সকল উপাদান বাংলাদেশে আছে। এদিকে টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত সিলেট অঞ্চলের যে কয়েকটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম পর্যটন খাত। এসব এলাকার পর্যটনে ভাটা পড়েছে। পর্যটন খাতে সরাসরি সম্পৃক্ত এসব অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল এবং সাদা পাথর এলাকা। এসব এলাকায় পর্যটকের আনাগোনা খুবই কম। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত বলেন, সিলেট অঞ্চল যেহেতু পর্যটন খাতের জন্য একটি সম্ভাবনাময় স্থান, সেহেতু এর সঙ্গে জড়িত সবার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এর ভেতর সরাসরি জড়িত ১৫ লাখ আর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে প্রায় ২৩ লাখ। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে বিশ্ব পর্যটন দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি জানান, দেশের পর্যটন শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। করোনা মহামারির অভিজ্ঞতা বিশ্বের পর্যটন শিল্পকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে। দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকরী কৌশল প্রণয়ন করা হচ্ছে। ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ খাতটি।

এখন ধীরে ধীরে বাড়ছে। যেহেতু পর্যটকরা কক্সবাজার ও কুয়াকাটা বেশি যাতায়াত করেন তাই সেগুলোতে যেসব হোটেল মোটেল রয়েছে সেগুলোতে আকর্ষণীয় এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত স্থাপনা তৈরির চেষ্টা চলছে। আমাদের পর্যটনের সম্ভাবনা অনেক কিন্তু আমরা এই খাতের সঠিক মান ও সেবা নিশ্চিত করতে পারছি না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩.০২ শতাংশ, যেটি প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এম বদরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও পর্যটন খাত ভালো করছে। এটি একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। যেহেতু পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে, সেহেতু এটি বিনিয়োগকারীদের জন্যও আকর্ষণীয় খাতে পরিণত হচ্ছে। কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, কক্সবাজারে এবার থার্টিফার্স্ট নাইটে কোনো প্রকার আয়োজন ছিল না।

আবাসিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নিজস্ব অনুষ্ঠান আয়োজনেও ছিল কড়াকড়ি। ফলে সৈকতে আসেননি পর্যটকরা। তিনি বলেন, বর্ষবরণ ও বিদায়কে কেন্দ্র করে ৩ দিনে ছুটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখের বেশি পর্যটক আসবেন বলে আশা করা হয়েছিল। প্রতি বছর এমন দিনে গড়ে দেড় থেকে ২ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসতেন। কিন্তু এবার প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, আকাশ পরিবহন ব্যবসায় শীতকালকে পিক সিজন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সময়টার জন্য এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনে। কিন্তু ঘন কুয়াশায় এয়ারলাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘনকুয়াশায় ভিজিভিলিটি সমস্যা থেকে এয়ারলাইনসগুলোকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ইন্সট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস)-এর মতো আধুনিক কারিগরি যন্ত্রপাতি এখনো আমাদের বিমানবন্দরগুলোতে স্থাপন করতে পারিনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘনকুয়াশার ছোবলে আন্তর্জাতিক কিংবা অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটগুলোর শিডিউল চরমভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। এতে এয়ারলাইনগুলোর পরিচালন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যাত্রী সংখ্যাও কমেছে। তবে আশা করা হচ্ছে, চলতি বছর ঘুরে দাঁড়াবে পর্যটন খাত।

https://mzamin.com/news.php?news=37547