৮ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ৯:৩৮

তাপ বাড়েনি, শীতে কাঁপছে দেশ

শীত বেড়েছে আরো। তাপ বাড়েনি বলে তীব্র শীতে কাঁপছে সারা দেশ। অন্য দিকে রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলো ছাড়াও ঢাকা, রংপুর, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১১ জেলায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে আজ রোববার সারদিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় থাকবে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৫.৪ ও ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দেশের বিভিন্ন এলাকা গতকাল দিনের বেলা এক ঘণ্টার জন্যও সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশায় সূর্য ঢাকা পড়ে গেছে বলে দিনে শৈত্যপ্রবাহের মতো তীব্র শীতের অবস্থা গেছে। সামনের কয়েক দিনেও চলতি ঘন কুয়াশা পরিস্থিতির অবসান না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আরো কয়েক দিন কুয়াশা ভেজা তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে। এ দিকে সামনের সপ্তাহ থেকে দেশব্যাপী হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।

রাজধানী ঢাকায় গতকাল শনিবার সারা দিনের মধ্যে এক মিনিটও সূর্যের দেখা মেলেনি বলে শীত আরো বেশি তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে নিচের তাপমাত্রা তেমন নিচে না নেমে গেলেও উপরের তাপমাত্রা খুব কমই উঠেছে। পরিবেশে যেটুকু তাপমাত্রা ছিল সেটুকুও শোষে নিয়েছে কুয়াশা, সে কারণে উচ্চ তাপমাত্রা বাড়তে পারেনি। ফলে গতকাল শনিবার সকাল থেকেই অসহনীয় হয়ে উঠে ঠাণ্ডা। বাইরে বের হলে তিন থেকে চারটি সুয়েটার-জ্যাকেট পরে বের হতে হয়। গলায় মাফলার, মাথায় হুডি না থাকলে মুহূর্তের মধ্যে নাক ও চোখ দিয়ে পানি ঝরতে শুরু করে। এই শীতে নতুন গরম কাপড়ের প্রচণ্ড চাহিদা থাকলেও রাজধানীর ফুটপাথ অথবা গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে কাক্সিক্ষত বিক্রি নেই। প্রয়োজন থাকলেও মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে কাপড় কিনতে পারছে না। শুধু যে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক মানুষের সমস্যা হচ্ছে না তা নয়, নি¤œ মধ্যবিত্তদের অবস্থা আরো খারাপ। এমতাবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দেশব্যাপী গরম কাপড় বিতরণ কর্মসূচি নেয়া উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজধানী ঢাকায় রাতে ছিন্নমূল ও ভবঘুরে প্রচুর মানুষ খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে থাকে। গত কয়েক দিন ধরে এরা আর রাতে ঘুমাতে পারে না। কারণ এদের কাছে যে অল্প পরিমাণ শীতবস্ত্র রয়েছে তা দিয়ে শীত ঠোকানো যায় না। ফলে এদের ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। এদের অনেকেই ঘুমাতে না পেরে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে মাদক সেবন করে থাকে। সারারাত কেরোসিন মেশানো কাপড় অথবা অন্যান্য কাঠ-খড় জ্বালিয়ে রাতটুকু কাটিয়ে দিলেও দিনের বেলাও ঘুমানোর সুযোগ পায় না। কারণ দিনের বেলা মানুষের চলাচলের কারণে ঘুমানো যায় না। তা ছাড়া গত কয়েক দিন ধরে রাত ও দিনের তীব্র শীত থাকায় ঘুমানোর সুযোগ মেলে না।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল জেলাসহ রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে গতকাল শনিবার রাত থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করেছে এবং আজ সারাদিন এসব অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ কবলিত জেলাগুলোতে সর্বত্রই তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে যেতে পারে। কোথাও কোথাও আরো কিছুটা নেমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

গতকাল দেশব্যাপী তীব্র শীত অনুভূত হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়া অফিস বলেছে, নিম্ন ও উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্যই। কোথাও কোথাও দুই তাপমাত্রার মধ্যে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ব্যবধান ছিল। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশের আরো কিছু অঞ্চল শৈত্যপ্রবাহের আওতায় চলে যেতে পারে।

এ দিকে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে এখনো প্রচুর মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা আসা অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলোতে অপেক্ষাকৃত বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। অন্য দিকে আকাশে ওপরে যে ঠাণ্ডা জেট বায়ু উড়ে যায় এই শীতে তা আরো অনেকটা নিচে নেমে প্রবাহিত হচ্ছে বলে এরও একটি প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ছে বলে এখানে শীতের মাত্রা বাড়ছে। আবহাওয়া অফিস আগামী পাঁচ দিনের একট পূর্বাভাসে বলেছে এই পাঁচ দিনের মধ্যেই দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও রাজবাড়ী-পাবনা রুটে ফেরি চলাচল ৪ ঘণ্টা বন্ধ
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, পদ্মা ও যমুনা নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও রাজবাড়ী-পাবনা রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল ৭টার দিকে এ রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এ দিকে নতুন চালু হওয়া রাজবাড়ীর জৌকুড়া ও পাবনার নাজিরগঞ্জ ঘাটের মধ্যে চলাচলকারী তিনটি ফেরি ঘন কুয়াশা ও ডুবো চরের কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকছে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক আলিম দাইয়্যান বলেন, শনিবার সকালে কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে গেলে ৭টার দিকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কুয়াশা কেটে গেলে সাড়ে ১১টার দিকে ফেরি চলাচল শুরু হয়।

রাজশাহীতে আবার শৈত্যপ্রবাহ শুরু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা আরো কমতে পারে। গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা কেটে যাওয়ার কারণে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কম থাকায় এমনিতেই রাজশাহীতে শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছিল মানুষ। এর ওপর শনিবার থেকে আবারো শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় শীতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, শনিবার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বলছে, বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজশাহীতে সূর্যের দেখা মেলেনি।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কোল্ড ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে মানুষ হাসপাতালে আসছেন বেশি। এজন্য ইনডোর ও আউটডোরে শীতজনিত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এ দিকে কৃষকেরা আশঙ্কা করছেন, এমন ঘন কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিলে রাজশাহীর কৃষিতে ক্ষতি হবে। এ সময়টায় এসে কুয়াশার কারণে বরাবরই বোরো বীজতলা ও রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে জমির বোরোতে কোল্ড ইনজুরি ও আলুতে লেটব্লাইট (পচন) দেখা দেয়। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবার প্রস্তুতি রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মাজদার হোসেন।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় বয়ে যাচ্ছে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। এতে তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। ফলে বাড়ছে ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিশু ও বয়স্করা। শনিবার জেলায় সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই মৌসুমের মধ্যে সর্বনিম্ন বলে জানিয়েছেন বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ আলম। শৈত্যপ্রবাহ আরো দুই থেকে তিন দিন থাকতে পারে বলে তিনি জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/718831