৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৯:২১

মাঝে মাঝে বিকল হচ্ছিল টিকিট ভেন্ডর মেশিন

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বিনোদনের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে মেট্রো রেল। মেট্রো রেলে চড়তে গতকাল ছুটির দিনে স্টেশনে ভিড় জমায় ভ্রমণার্থীরা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
তীব্র শীতে জবুথবু রাজধানীবাসী। শীত উপেক্ষা করে মেট্রো রেল দেখতে এবং তাতে চড়তে সকাল থেকে ভিড় করে ভ্রমণার্থীরা। সকাল ৮টার দিকে যাত্রীদের চাপ কম থাকলেও ৯টার পর থেকে চাপ বাড়তে শুরু করে। তৈরি হয় দীর্ঘ লাইন, যা মেট্রো স্টেশনের সামনে থেকে পাসপোর্ট অফিসের দিকে গিয়ে ঠেকে। তাদের মধ্যে এবারই প্রথম মেট্রো রেলে চড়তে এসেছে, এমন লোকের সংখ্যাই বেশি।,
মাঝে মাঝে বিকল হচ্ছিল টিকিট ভেন্ডর মেশিন,

উত্তরা ও আগারগাঁওয়ের প্ল্যাটফরম ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা মেশিনে এবং স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ করছিল। তবে আগারগাঁও স্টেশনের সি-ব্লকের একটি মেশিন বন্ধ থাকায় বাকি দুটি দিয়েই টিকিট সংগ্রহের কাজ চলছিল। ভিড় সামলাতে যাত্রীদের একাংশ স্টেশন থেকে টিকিট সংগ্রহ করছিল।,
অন্যদিকে উত্তরা স্টেশনের টিকিট সংগ্রহের ভেন্ডর মেশিনগুলো ক্ষণে ক্ষণেই বিকল হচ্ছিল। এ ছাড়া মেশিনে বড় নোটের ভাঙতি না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ফলে গতানুগতিক ধারায় টিকিট নিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় তাদের।

টিকিট নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়া নন্দীনি চৌধুরী বলেন, ‘টিকিট নেওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে ছিলাম। নিতে গিয়ে দেখি মেশিন নষ্ট। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ঠিক হয়েছে।’,
এই অবস্থা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে টিকিট মেশিনের পাশে দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন অবস্থায় যাত্রীদের অনেক সময় নিয়ে বোঝাতে হচ্ছে কত টাকা দিতে হবে, কিভাবে টিকিট নিতে হবে। মেশিনে ৫০০ টাকার ভাঙতি দিতে সমস্যা হয়। তাই আমরা যাত্রীদের ভাঙতি নোট ব্যবহারের অনুরোধ করছি। তবে যাত্রীদের বেশি চাপ ও ব্যবহারে অনভিজ্ঞতার কারণে মেশিন বারবার বিকল হচ্ছে।’,
ঢাকার বাইরের ভ্রমণার্থীরাও আসে মেট্রো দেখতে ,

মেট্রো রেল দেখতে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটা থেকে ঢাকায় এসেছেন হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় মেট্রোতে চড়তে পারব না। এবার সুযোগ হয়েছে মেট্রোতে চড়ার। তাই পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।’

হাসিবুর রহমানের মতো পরিবার নিয়ে রাতের লঞ্চে করে চাঁদপুর থেকে এসেছেন সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের পর থেকেই মেট্রো রেলে চড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাই গতকাল রাতের লঞ্চেই চলে আসলাম।’,

ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা আসে,
ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বন্ধুবান্ধব ও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসে অনেকে। মগবাজারের বাসিন্দা সজিব আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে ভিড় থাকায় আমরা আজ এসেছি। তবে আজও একই ভিড় দেখছি।’,

পরিবার-পরিজন নিয়ে মেট্রো রেলে ঘুরতে এসেছেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘শুরুতে সব কিছুই ভালো থাকে। মেট্রো স্টেশন দেখে আমার সে রকমই ভালো লাগছে। তবে এখন আমাদের দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একটি হচ্ছে, পুরো মেট্রোকে চালু করা। দ্বিতীয়ত, এটা সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা।’
এমআরটি পাস ও পাসিং মেশিনের সমস্যায় ভোগান্তি,

উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে আসা যাত্রীরা একসঙ্গে স্টেশন থেকে বের হতে পারছিল না। কারণ, বের হওয়ার পেসেঞ্জার পাসিং মেশিনের তিনটির মধ্যে একটির সংস্কারের কাজ চলছিল। বাকি দুটি দিয়ে যাত্রীদের বের হতে হচ্ছিল। ,

অন্যদিকে উত্তরার স্টেশনে এমআরটি পাস ব্যবহার করে প্রথমদিকে প্রবেশ করতে পারছিল না যাত্রীরা। ফরে পাস আবার চেক করিয়ে নিয়ে যেতে হয়। টাকা থাকা সত্ত্বেও এই ভোগান্তিতে পড়তে হয় বেশির ভাগ যাত্রীকে।,

টাকা লোড করা ছাড়াও অনেকেরই নগদ টিকিট কাটার এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিকিট কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকেই ডাবল পান্স করায় কার্ড কাজ করছে না। আমাদের কাছে এলে আমরা ক্যানসেল করে দিচ্ছি। এর পর তারা ঢুকতে পারছে।’,
মেট্রো ঘিরে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট

উত্তরা স্টেশন থেকে বের হলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন খাবারের দোকান। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সবজির দোকান পর্যন্ত বসানো হয়েছে। তবে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই দোকানপাট।,
স্টেশন থেকে বের হলে প্রথমেই চোখে পড়ে এনামুলের চায়ের দোকান। তিনি বলেন, ‘এখানকার সবারই ভেতরে দোকান আছে। এখানে ১২টা পর্যন্ত বসি। এরপর ভেতরে চলে যাই। মেট্রো রেল পুরোপুরি চালু হলে স্থায়ীভাবে এখানেই দোকান বসানো হবে।’,

মেট্রোতে চড়তে না পেরে হতাশ অনেকে,
দুপুর ১২টার দিকে সর্বশেষ ট্রেন ছাড়ার ফলে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় আগারগাঁও স্টেশনের গেট। এতে অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেও প্রবেশ করতে পারেনি স্টেশনে। ফলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের। ,

বনশ্রী থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘শীতের দিন এত সকালে আসা খুব কষ্টকর। এই সময় মেট্রো আরো দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে চালানো উচিত ছিল। তাহলে এত মানুষকে ফিরতে হয় না।’,

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/01/07/1220449