৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৮:৪১

বাংলাদেশে ৩৮ দেশের ৮০৫২ শিক্ষার্থী, নানা জটিলতায় কমছে সংখ্যা

বিশ্বের ৩৮টি দেশের ৮০৫২ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নে থাকা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাহিদা বেশি। তবে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনি ফি বেশি হওয়ায় অনেকেই পড়তে পারেন না। এ ছাড়াও নানা জটিলতার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে, বিদেশে ৭৭টি দূতাবাসের দ্রুত আবেদনকারী ছাত্রের ভেরিফিকেশন না দেয়া, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, গবেষণায় বরাদ্দ কম থাকা, উন্নত ডরমিটরি না থাকা ও ভালো বৃত্তির অভাবে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে। এ ছাড়াও একজন শিক্ষার্থী দেশে আসার পর পাসপোর্ট রিনিউ ও পুলিশ ভেরিফিকেশনে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এজন্য পুলিশের বিশেষ শাখা এসবির স্টুডেন্ট ও লেবার শাখায় দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র লাগে। ডকুমেন্ট আবার পূর্ণাঙ্গ না হলে ওই শিক্ষার্থীর ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

দিনের পর দিন এসবি এবং পাসপোর্ট অফিসে ভিসার জন্য ঘোরাঘুরি করতে হয়। যারা দেশে এসে এসব নীতিবাচক পরিবেশের স্বীকার হচ্ছেন তারা তাদের বন্ধু ও স্বজনদের বাংলাদেশে আসতেও নিষেধ করেন। এতে করে দিন দিন বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। বিশেষ করে যারা স্নাতকোত্তর জন্য বাংলাদেশে আবেদন করছেন তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছে সরকার।

কারণ তারা দেশে এসে আইটিসহ অন্য ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোর ছাত্রদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রেও কঠোরতা অবলম্বন করছে সরকার। কারণ উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশি শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন আফ্রিকা মহাদেশের নাগরিক। সোমালিয়া, নাইজেরিয়া এবং ক্যামেরুন থেকে আসা শিক্ষার্থীরা স্টুডেন্ট ভিসায় আসার পর প্রতারণায় জড়িয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি পড়ালেখা বাদ দিয়ে দেশের ঘরোয়া ক্লাবগুলোতে ফুটবল খেলা শুরু করছেন। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে দেশে নেপাল ও ভারতের কাশ্মীর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি’র স্টুডেন্ট অ্যান্ড লেবার বিভাগের একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, ‘স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে আমরা কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সুপারিশ কাগজে-কলমে জমা দিতে বলি। এ ছাড়াও ভেরিফেকেশনের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একজন শিক্ষার্থী আবেদন করলে পুলিশের পক্ষ থেকে দেখা হয়, যে শিক্ষার্থী দেশে আসছে তার আর্থিক অবস্থা, সংশ্লিষ্ট দেশে কোনো আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কাজে জড়িত ছিলেন কি-না, বাংলাদেশে এসে আইনশৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন কি-না ও কোনো ব্যবসার উদ্দেশ্যে কি-না তারা তা খুঁটিয়ে-খাটিয়ে দেখেন। এ ছাড়াও ওই শিক্ষার্থী কোনো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত কি-না তা দেখার জন্য পুরো ১ বছর পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এ ছাড়াও ১ বছর পর পর ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশকে তার অবস্থান ও পড়াশুনার বিষয়ে অবগত করতে হয়।

এসবি সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেশি অধ্যয়ন করে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ৬৭ জন, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি) ৫৭ জন, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে ৫৪ জন ও আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত আছে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬৫ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৯ জন, বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ জন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান, চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গ্যাম্বিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, মৌরিতানিয়া, তানজানিয়া, অস্ট্রিয়া, রুয়ান্ডা, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, জিবুতি, সোমালিয়া, ক্যামেরুন, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, সুদান, বাহারাইন, রাশিয়া, আলজেরিয়া, বসনিয়া, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, চাদ, সেনেগাল, লাইবেরিয়া থেকে আসা মোট ৮০৫২ জন শিক্ষার্থী দেশে অধ্যায়নরত আছেন। সূত্র জানায়, উন্নত দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, মরক্কো, অস্ট্রিয়া, চীন, রাশিয়া, থাইল্যান্ড থেকে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হলেও মধ্যম ও দরিদ্র দেশগুলোর ভিসা প্রক্রিয়া কঠিন আকারে দেখা হয়।

https://mzamin.com/news.php?news=37279