৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৮:২২

সিলেট ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

সিলেট ও চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক দেখা দেয়। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর তিনজনকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসে এ সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট করা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থেকে বিক্ষোভ করছিল।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো: এমদাদুল হোসেন শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে কৃষি অর্থনীতি ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদীয় ছাত্রলীগের কর্মিসভা ডেকেছিলেন। তবে দলের অন্য একটি বলয়ের নেতাকর্মীরা তাদের সভা না করতে বলে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছিল। একপর্যায়ে বেলা পৌনে ৩টার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শরীফ হোসাইন, সাব্বির মোল্লা, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসাইন, আকাশ ভূইয়া ও প্রান্ত ইসলামের নেতৃত্বে কর্মিসভায় বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপে অন্তত ১০ জন অহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে সহ সভাপতি সাব্বির মোল্লা’র নেতৃত্বে শাহপরান হলে ঢুকে সভাপতি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে থাকা কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিভিন্ন অনুষদীয় কর্মিসভা আয়োজনের নির্দেশনা ছিল। শুক্রবার কর্মিসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শুক্রবার বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে কৃষি ও অর্থনীতি ব্যবসায়ী শিক্ষা অনুষদ ছাত্রলীগের কর্মিসভা ডাকেন। এতে অপর পক্ষ কর্মিসভা শুরুর আগে বাধা দেয়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে কর্মিসভা শুরু করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত নেতা-কর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মেডিক্যাল সেন্টার ও বাইরে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সহসভাপতির শরিফ হোসেন বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনুষদীয় কর্মিসভা ডেকেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি আংশিক হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে এবং হল কমিটি না করেই অনুষদীয় কমিটি ঘোষণা করে সাংগঠনিক ইউনিটের কাজ করতে চেয়েছিলেন তারা। কর্মিসভাও করতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তৃণমূল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের সাথে ও সহসভাপতি-সাংগঠনিক সম্পাদকের পক্ষের মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে নই, তবে কেন্দ্র ঘোষিত সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার জন্য বারবার অনুরোধ করছি।’

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ২০ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হন মো: এমাদুল হোসেন। সে সময় কমিটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি না হলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষে নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে বর্তমান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতাকে মানতে পারছেন না কিছু নেতাকর্মী। এ নিয়ে কমিটির মধ্যেই বিদ্রোহী একটি বলয় তৈরি হয়। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কেক কেটে উদ্যাপন করা হয়েছে। আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বিরোধী পক্ষও কেক কেটে উদ্যাপন করেছে। এসব নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

বিকেল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে জানিয়ে প্রক্টর মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতা এখনো আমরা নিইনি।’ সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে। দুই পক্ষ ঢিল ছোড়াছুড়ি করছে। নেতাদের ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
চবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হঠাৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এতে তিনজন রক্তাক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে এ সংঘর্ষ হয়।

ক্যাম্পাসে আসার সময় শাটল ট্রেনের বগিতে সিট নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে চবি শাখা ছাত্রলীগের দুই বগিভিত্তিক উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) ও সিক্সটি নাইনের ক্যাডাররা এ সংঘর্ষে জড়ায়।
সিক্সটি নাইন ও ভিএক্স দুই গ্রুপই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছিরের অনুসারী।

আহতরা হলেন সিক্সটি নাইন গ্রুপের মোহাম্মদ মামুন ও মো: মানিক এবং ভিএক্স গ্রুপের শাহ পরান। এর মধ্যে মামুন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, মানিক হিসাববিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে শাহ পরান উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা: আবু তৈয়ব বলেন, ‘আহত তিনজন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। একজনের অবস্থা গুরুতর। তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চট্টগ্রাম নগর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা রাতের শাটল ট্রেনে ভিএক্স গ্রুপের ক্যাডারদের সাথে সিক্সটি নাইন গ্রুপের ক্যাডারদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে পৌঁছার পর দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় একে অপরের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তাদের হাতে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা যায়। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ক্যাম্পাস উত্তপ্ত রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘দুই পক্ষের ঝামেলায় তিনজন আহত হয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।’

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/718556