৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৮:১৯

স্বস্তি নেই বাজারে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারে। মধ্য ও নীম্নবিত্ত মানুষের জীবন চালাতে ত্রাহি অবস্থা। একের পর এক জিনিসপত্রের দাম বেড়েই যাচ্ছে। আর বৃদ্ধি পাওয়া জিনিসপত্রের দাম কমছে না কোনভাবেই। চাল, ডাল, তেল, চিনি ও আটা ময়দার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া দাম কমছে না। তিন বেলা খাবার যোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে অল্প আয়ের মানুষেরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, বেশকিছু জিনিসপত্রের দাম এখনো আকাশচুম্বী। খোলা চিনির কেজি ১০২ এবং মোড়কজাত চিনির কেজি ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপরও বেশিরভাগ জায়গায় চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও পাওয়া গেলেও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে। তবে এর চেয়ে অনেক বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে আখের লাল চিনি। মোড়কজাত এ ধরনের চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে গত সপ্তাহের ব্যবধানে মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা। বাজারে এখন এক কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যা সপ্তাহখানেক আগে ৮০ টাকা ছিল।

এদিকে কয়েকদিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, যেখানে প্রতি কেজি চালের দাম ৫০ পয়সা বাড়ার কথা, সেখানে ব্যবসায়ীরা ৪ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, বাজারের চিত্র আরও ভিন্ন। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৩-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা চালের মধ্যে আটাশ চাল মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৮-৬০ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আগে এ চাল বিক্রি হতো ৪৫-৪৬ টাকায়। প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮২ টাকায়, যা আগে ছিল ৭৫-৭৮ টাকা। প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ৭২-৭৫ টাকা, আগে ছিল ৬৮-৭০ টাকা। তবে বাজারে নতুন আমন ধানের চালের দাম কিছুটা কমেছে। মাঝারি আকারের চালের দামও কমেছে এক থেকে দুই টাকা করে। পায়জাম ও বি আর-২৮ জাতের চাল মাঝারি আকারের চালের কেজি কেনা যাবে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা দরে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব, বাজার মনিটরিংয়ের অভাব, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটসহ নানাবিধ কারণে বাজারে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে, পণ্যের দাম কী পরিমাণে বাড়া উচিত এবং কী পরিমাণে বেড়েছে, এ খবর রাখতে কোনো সংস্থাকেই মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে, যে যার মতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। এতে সব শ্রেণির ক্রেতারা পড়ছেন ভোগান্তিতে।

পাইকারী চাল ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন জানান, মিলাররা জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে অনেক আগে থেকেই চালের দাম বাড়িয়েছে। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৪-৬ টাকা বাড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর যেখানে কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা বাড়ার কথা, তখন এসব মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা মিলে সিন্ডিকেট করে প্রতি কেজি চালে আবারও ৫-৭টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে, খুচরা বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়েছে।

শীতের মওসুম বলে বাজারে সবজির চাহিদা রয়েছে। দাম চড়া। সিম প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ২৫-৩০ টাকা, বাঁধা কপি ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৫০-৬০ টাকা। বেগুন (গোল) প্রতি কেজি ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫৫ টাকা, নতুন আলু কেজি ৩০-৩৫ টাকা। মরিচ কেজি ৯০-১০০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০ টাকায়, খিরাই ৪০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, এছাড়া বরবটি কেজি প্রতি ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মসুর ডাল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১২০-১২৪ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ছিল ১৬০-১৭০ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৪০ টাকা ছিল।

মাছের বাজারে দেখা গেছে, পাঙাশ ছাড়া বাজারে ২৫০ টাকার নিচে কোনো মাছ বিক্রি হচ্ছে না। আর সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারে শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ শত টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ টাকা। রুই ৩০০ টাকা, মৃগেল ২৫০ টাকা, কাতল ৩০০ টাকা কালিবোস ২৫০ টাকা, টাকি মাছ ৩ শত টাকা, ছোট পাঁচ মিশালী মাছ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও কই মাছ ২০০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৭০০ টাকা, বাঘা মাছ ৯০০ টাকা কেজি, বাইং (বাইন) মাছ কেজি ৭৫০ টাকা, চিতল সাড়ে ৫০০ টাকা, বোয়াল ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বেকারি পণ্য পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর, নুডলসসহ নাশতার আইটেমের দাম বেড়েছে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় আকারের পাউরুটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, যা আগে ৮০-৮৫ টাকা ছিল। ৩০০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট চানাচুর বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা ছিল ৭৫ টাকা। ৮ পিসের প্যাকেট নুডলস বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যার দাম ছিল ১৪০ টাকা। এনার্জি বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা ছিল ৩৮ টাকা। ১০টাকা বেড়ে পাইনঅ্যাপল বিস্কুটের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি টোস্ট বিস্কুট বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, যার দাম ছিলো ১৪০ টাকা। প্রতি লিটার কোকের দাম ৫টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। ৬০০ মিলি ওজনের প্রাণ সসের বোতল ৭৫ টাকা, যার দাম ছিল ৬২ টাকা।
এদিকে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ওষুধের দামও বেড়েছে বলে জানা গেছে। ওষুধ কিনতে আসা নাজমা বেগম জানান, প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। নাপা সিরাপের দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ টাকা হয়েছে। অ্যান্ট্রাজল ড্রপ ১০ টাকা ছিলো, এখন ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৪ টাকার অ্যামোক্সিসিলিন ইনজেকশন ৫৫ টাকা, ২১ টাকার প্রমেথাজিন ৩৫ টাকা হয়েছে। জিনিসপত্রের পাশাপাশি ওষুধের দাম যেভাবে বাড়ছে, জীবন রক্ষা করাই তো কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

https://dailysangram.com/post/512993