৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৮:১৬

ফেলানী হত্যার ১২ বছর ॥ এখনো শেষ হয়নি বিচার

সীমান্তে ১৪ বছরের বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার ১২ বছর আজ। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ফেলানীকে গুলী করে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। বিএসএফ এর গুলিতে নিহত হওয়ার পরও প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে ছিল ফেলানীর নিথর দেহ।

কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তখন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কিন্তু এরপরও কমেনি সীমান্তে হত্যাকান্ড। এতটি বছরেও বিচার হয়নি ফেলানি হত্যার। ফেলানী হত্যার ঘটনায় ভারতের আদালতে মামলা করা হলেও বিচার পক্রিয়া থমকে আছে। আজ শনিবার (৭ জানুয়ারি) পারিবারিকভাবে পালন করা হবে তার ১২ম মৃত্যুবার্ষিকী। আয়োজন করা হয়েছে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১৪ জন বাংলাদেশি নিহত হন। আসক এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ বছর দশ মাসে সীমান্তে মোট ১৬৩ জন বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বহুল আলোচিত ফেলানী হত্যা মামলার পুনঃবিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আনীত রিটের শুনানি চলছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি সকালে ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাটাতার ডিঙ্গিয়ে বাবার সঙ্গে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। ফেলানীর বাড়ি উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটা তাঁরের উপর ঝুঁলে থাকার পর তার লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ। এর প্রায় ৩০ ঘন্টা পর ৮ (জানুয়ারি) শনিবার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ।

২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন। আবারো ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুন:বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়। এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১ম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালমা আলী ২য় বাদী হয়ে আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া) এর সচিব এবং বিএসএফ এর মহাপরিচালককে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি মামলা করেন। তারা ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তর্র্বতীকালীন ক্ষতিপূরণ চেয়ে আরো একটি আবেদন করেন।

পরে ২০১৫ সালে আইন ও শালিস কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরো একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লক্ষ রুপী প্রদানের অনুরোধ করেন। এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এরপরে ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানি দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি এখনো।

এদিকে গত কয়েক বছরের মতো এবারেও ঢাকা ও কুড়িগ্রামে কর্মসূচী পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনের নেতারা ফেলানী হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি, ফেলানীর পরিবারসহ সীমান্ত আগ্রাসনে ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যাক্তি ও তাদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান, কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তের নাম ফেলানী সীমান্ত নামকরণ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন পার্ক রোড অথবা কূটনৈতিক এলাকায় ১টি রাস্তার নাম ফেলানী সরণি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বন্ধের দাবি জানাবে বলে জানা গেছে।

https://dailysangram.com/post/512984