৭ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ৬:৪৭

অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে থেমে গেছে জীবনের স্বাভাবিক গতি 

রাজধানীতে গরম কাপড় কেনার ধুম

বছরের শুরুতেই রাজধানীসহ সারাদেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কোথাও কোথাও বয়ে
যাচ্ছে শৈত্য প্রবাহ। অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ব্যাহত হচ্ছে
মানুষের স্বাভাবিক গতি।  একদিকে দৈনন্দিন সংসার চালানোর চাপ, অন্যদিকে শীতের বাড়তি তীব্রতা।
ফুটপাতের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্তের পাশাপাশি খেটে খাওয়া মানুষের ভিড় বেড়েছে। রিকশাচালক আসাদ
জানান, এবার শীত বেশি হওয়ায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। কিন্তু পেটের তাগিদে গাড়ি নিয়ে বের হতে হয়েছে।
অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ ভাড়া কম। শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছে, তাই রাস্তায় যাত্রী
কম।

এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও
তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান
করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর,
পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে
এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের
তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

দিন ও রাতের তাপমাত্রায় পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং
মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। ঢাকায় উত্তর/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে
ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৬-১২ কিলোমিটার। 
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর,
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। নওগা, দিনাজপুর,
পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চল সমূহের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত
থাকতে পারে।

এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে
পারে।পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও তেঁতুলিয়ায় ৯
দশমিক ৬, বদলগাছী ৯ দশমিক ৮, দিনাজপুর ও যশোরে ১০,  সাতক্ষীরায় ১০ দশমিক ২, ঈশ^রদীতে ১০
দশমিক ৪, সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ৫, রাজশাহী, ডিমলা ও কুমারখালীতে ১০ দশমিক ৬, বগুড়া ও বরিশালে ১০
দশমিক ৭, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ১০ দশমিক ৮ এবং নিকলি ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস
তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২,
রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৬, রংপুরে ১১, ময়মনসিংহে ১১ দশমিক ৫, সিলেটে ১৫ দশমিক ১, চট্টগ্রামে ১৫,
খুলনায় ১১ দশমিক ৮ এবং বরিশালে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কক্সবাজারে ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল রাজধানী ঢাকাতে মানুষকে শীতের কাপড় কিনতে দেখা গেছে। বাইছা বাইছা লন, যেটা নেবেন
একশ, একদাম একশ’। বছরের প্রথম জুম্মার নামাজ শেষে শুক্রবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
থেকে বের হতে না হতেই গেটের সামনে এভাবে হাক দিচ্ছিলেন হকাররা। তার প্রভাবে রাজধানীর বিভিন্ন
শপিংমহল থেকে শুরু করে ফুটপাতেও বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রির ধুম।

শুক্রবার রাজধানীর পণ্টন, গুলিস্থান, মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় সাপ্তাহিক
ছুটির দিন হলেও তীব্র শীতে গরম কাপড় কেনার ভীড় সবখানেই। বড় শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাতের
দোকানে সব শ্রেণির ক্রেতাদের ভিড়। বড় শপিং মলে নতুন কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় তুলনামূলক একটু
কমদামী কাপড়ের দোকানের দিকে বেশি ঝুঁকছেন সাধারণ ক্রেতারা। শিশু ও বয়স্কদের শীতের কাপড় বেশি
বিক্রি হচ্ছে। এসব কাপড়ের মধ্যে হুডি সোয়েটারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া মাথার টুপি, ফুলহাতা
গরম কাপড়ের গেঞ্জির চাহিদাও রয়েছে চোখে পড়ার মতো।

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশের গেটের সামনের হকার ইকবাল ফরহাদ ভ্যানে বিক্রি করছেন হুডি
সোয়েটার, ফুলহাতা গেঞ্জি। দাম তিনশ থেকে পাঁচশ টাকা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কয়েক দিন শীত বেশি
পড়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের শীতের কাপড় বেশি বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছেন রফিক উদ্দিন, কাজ শেষ করে বিকেলেই ফিরবেন। তিনি বলেন, শীত বেশি
পড়ায় এবার গরম কাপড় বেশি লাগছে। তাই এখান থেকে কিনে নিচ্ছি। আর এখানে দামও কম, পছন্দ মতো
পাওয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : কনকনে শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গা। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে চরম
দুর্ভোগ নেমে এসেছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
করেছে যানবাহন। হিম বাতাসে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ আর ছিন্নমূল মানুষ। খড়কুটো
জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে অনেকে। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯ টায় দেশের সর্বনি¤œ
তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে জেলার ওপর
দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে মৃদু হিমেল বাতাস বইছে। তীব্র শীতে জবুথবু
হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যারা বের হচ্ছে তারাও গরম
কাপড় পরে শীতের প্রস্তুতি নিয়েই বের হচ্ছে। শীতের তীব্রতায় শ্রমজীবী মানুষ পড়েছে বিপাকে। টান
পড়ছে আয় রোজগারে।

শীতজনিত রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে
চিকিৎসা নিচ্ছে। আবার ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কাজও। ধানের বীজতলা তৈরি, ভুট্টা ও আলুসহ
বিভিন্ন কাজ করেছে কৃষকরা। ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, গত দুদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার
ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ বেশি। দিনের বেলায় সূর্যের
উত্তাপ মিলছে না। এতে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। আরও কয়েকদিন এমন পরিস্থিতি বিরাজ
করতে পারে।  তবে দুপুরে সূর্যের দেখা মেলায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্থি নেমে আসে।

কুমিল্লা অফিস: কুমিল্লায় হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এতে করে  স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে
আছে শিশু-বৃদ্ধরা। কুমিল্লায় হঠাৎ রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রা হ্রাসে  বিপর্যস্ত পড়েছে জনজীবন, টানা
৪৮ ঘন্টায় এ জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি, উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে স্বাভাবিক
কর্মক্ষমতা হারিয়েছে শ্রমজীবি মানুষ, প্রয়োজনের বাইরে কেউ ঘর থেকেই বের হচ্ছে না খড়কুটো
জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছে সহায়-সম্বলহীন মানুষ, এমন পরিস্থিতিতে অধিক ঝুঁকিতে
রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা,

শীতের তীব্রতায় প্রতিদিনই তাপমাত্রা হ্রাসের রেকর্ড নির্ণয় করছে কুমিল্লা জেলা আবহাওয়া অফিস, 
(৫ জানুয়ারী) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ
করা হয়েছে যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম, গত সপ্তাহের শুরুতে জেলা জুড়ে
রাতের বেলায় প্রচুর ঘন কুয়াশা শুরু হয়ে সকাল ১১টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, কয়েকদিনের কুয়াশার পর
হঠাৎ বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা,

এদিকে, শীতের তীব্রতায় অসহায় হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর শ্রমজীবী মানুষ কর্মের তাগিদে ঘর
থেকে বের হয়ে বেশ বেকায়দায় পড়ছেন তারা, যারাই ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের সকলের গায়েই ছিল ভারী
গরম কাপড়, শীতের তীব্রতায় এবং হিমেল হাওয়ায় তাতেও যেন শীত নিবারণ হচ্ছে না, অসহায় ও ছিন্নমূল
মানুষ দিনের বেলায়ও খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, কুমিল্লা আহবাওয়া
অফিসের অফিসার ইন-চার্জ ইসমাইল হোসেন জানান, আজ দুইদিন যাবৎ ক্রমশই তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে
এ সময়ে কুমিল্লাতে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার কথা, সেখানে ৭.৭ ডিগ্রি
সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে, বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করলেও
বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, এছাড়া সকাল ৬-৯টা পর্যন্ত
সর্বনিম্ন ১৪.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করা হয়, দিন ও রাতে সমান তালে ঘন্টায় ৮-১০ কিলোমিটার
বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম কোণে বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় ক্রমশই তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে, আগামী

৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদ, এদিকে, পৌষের ওই
হাড়কাঁপানো শীতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা, শীতের এমন তীব্রতা থাকলে জেলা
জুড়ে হাসপাতালগুলোতে ঠান্ডা জণিত সমস্যায় শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আজিজুল হোসেন
জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২৮টি বেডসহ সর্বোচ্চ ৪০ রোগীর ধারণ
ক্ষমতা, কখনো কখনো সেগুলো বেড়ে ৭০-৮০ জনে পৌঁছায়, কিন্তু বর্তমানে ২৮টি বেডও পূরণ হয়নি, আজ
কয়েকদিন যাবৎ যে পরিমাণ শীতের তীব্রতা বেড়েছে তার প্রভাব পড়বে আগামী ২/১ দিন পর, সেগুলো
মাথায় রেখে আমার যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, তিনি মায়েদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,
প্রতিটি মা যেন তাদের শিশু সন্তানদের প্রতি অধিক যতœ নেন, কোনো শিশু যাতে খালে পায়ে না থাকে,
ঘরের বাহিরে না যায়, রাতে ঘুমানোর সময় লেপ বা কম্বলের নিচ থেকে বাহির না হয়, কুমিল্লা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন জানান, এই শীতে অধিক ঝুঁকিতে শিশু ও বৃদ্ধরা,
স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখতে সকলেই গরম কাপড়-চোপড় পরিধান করতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে,
বাসি ও বাহিরের খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে, শ্রমজীবী মানুষ ব্যতিত শিশু ও বয়স্করা যেন ঘর থেকে
বের না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

https://dailysangram.com/post/512982