৬ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ৩:১৬

৪ বছরে আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়নে ব্যয় বাড়ছে ২২০ শতাংশ

ঢাকা জোনে সড়ক উন্নয়নে ব্যয় সাড়ে ৪ কোটি, সোনাপুর-সুবর্ণচরে খরচ ধরা হচ্ছে ১৫ কোটি টাকা

চার বছরের ব্যবধানে আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়নে ব্যয় ২২০ শতাংশ বেড়ে প্রতি কিলোমিটারে সাড়ে চার কোটি টাকা থেকে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ সালে নেয়া এবং এখনো বাস্তবায়নরত ঢাকা জোনে সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিেেলামিটারে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে চার কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালের শুরুতে এসে সোনাপুর-সুবর্ণচরের সড়ক খরচ ধরা হচ্ছে প্রতি সোয়া ১৫ কোটি টাকারও বেশি। আগে যেখানে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য দেড় গুণ মূল্য দেয়া হতো এখন সেখানে ধরা হয়েছে তিন গুণ দাম। সড়ক উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এভাবে উন্নয়ন ব্যয় দুই থেকে আড়াই গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।

আঞ্চলিক সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারে প্রতি কিলোমিটারের এই ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। সোনাপুর-নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সড়কাংশ চার লেনে এবং কবিরহাট-বাংলাবাজার থেকে সুবর্ণচর উপজেলা হেডকোয়ার্টার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনায় সাড়ে ৪৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে তিন গুণ ক্ষতিপূরণ, নতুন রেট শিডিউল এবং নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ খরচ আগের তুলনায় বেশি হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থায়ন পুরোটাই সরকারি খাত থেকে নেয়ার প্রস্তাব করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বলছে, নতুন রেট শিডিউল এবং জমি অধিগ্রহণ খাতে ক্ষতিপূরণ তিন গুণ দিতে হবে। ফলে খরচ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

এর আগে ২০১৭ সালে ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা জোনের ১৬টি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্প নেয়া হয়। তাতে মোট ১৩৩ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কের যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় প্রতি কিলোমিটারে খরচ প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ছিল। মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সোনাপুর-নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সড়কাংশ চার লেনে এবং কবিরহাট-বাংলাবাজার থেকে সুবর্ণচর উপজেলা হেডকোয়ার্টার সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯.২০ কিলোমিটার। এখানে গড়ে বছরে যান চলাচল করে আট হাজার ২৯৪টি। বাংলাবাজার থেকে আক্তার মিয়ার হাট পর্যন্ত ২৬.৩০ কিলোমিটার। এখানে বছরে যান চলাচল করে গড়ে চার হাজার ৩৮১টি। দু’টি মিলে মোট সড়কের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪৫ কিলোমিটার। এখানে ৪.২০ মিটার থেকে বাড়িয়ে ৭.৩০ মিটার চওড়া করা হবে। মহাসড়কের মানে উন্নীত করতে হবে সড়ককে। প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো- ভূমি অধিগ্রহণ, সড়ক-বাঁধ প্রশস্তকরণ ও উঁচু করা, নতুন পেভমেন্ট নির্মাণ, সার্ফেসিং নির্মাণ, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ, হার্ড সোল্ডার নির্মাণ, চারটি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ, আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ।

ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১২.৭৬৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে খরচ ধরা হয়েছে ১৩০ কোটি ১৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে খরচ ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ৫.৩৩৬ লাখ ঘনমিটার সড়ক-বাঁধ প্রশস্তকরণ ও উঁচু করাতে খরচ ২১ কোটি ৮৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। প্রতি লাখ ঘনমিটারে ব্যয় হবে চার কোটি টাকা। ১৭.৭৪ কিলোমিটার নতুন পেভমেন্ট নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ৫৪ লাখ ২৩ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। ৩৬.৬৯ কিলোমিটার সার্ফেসিং নির্মাণে ব্যয় ৫১ কোটি ৬৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৪০ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। ৩.৬৫ কিলোমিটার রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ খরচ ৪১ কোটি ৩০ লাখ ৮১ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৪১.৪৬৭ কিলোমিটার হার্ড সোল্ডার নির্মাণে ব্যয় ৮১ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে খরচ এক কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৮৭ মিটার চারটি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ, খরচ ৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রতি মিটারে ব্যয় ২৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা। আর ১৯৬ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ খরচ ৩১ কোটি ৯৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা। প্রতি মিটারে ব্যয় হবে ১৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা।

প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সওজের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন ভূমি নীতিমালা অনুযায়ী এবং রেট শিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলনের ফলে ভূমি অধিগ্রহণ খরচ বেড়েছে। বিভিন্ন খাতের খরচও বেড়েছে। আগে ভূমি অধিগ্রহণে দেয়া হতো দেড় গুণ ক্ষতিপূরণ, এখন সেটি তিন গুণ করা হয়েছে। ফলে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর দরও বেড়েছে। সব কিছু বিবেচনা করেই দর দেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণের দর দেখাতে হবে। সঠিকভাবে সমীক্ষা করা হয়েছে কি না সেটিও পর্যালোচনা করা হবে। এখন নতুন করে রেট শিডিউল ও ক্ষতিপূরণ তিন গুণ দেয়ার কারণে ব্যয় স্বাভাবিকভাবে আগের তুলনায় বাড়বে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/718333