৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:২০

নিম্নমানের কাগজে বিনামূল্যের বইয়ের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

শিক্ষার্থীদের হাতে এ বছর বিনামূল্যের যে বই তুলে দেয়া হয়েছে সেগুলোর কাগজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগামী এক বছর এই বই শিক্ষার্থীদের হাতে টিকবে কি না তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসছে অনেক শিক্ষার্থীর নতুন বইয়ের সেলাই খুলে যাচ্ছে। আবার বইয়ের ছবির মান ও রঙ এতটাই অস্পষ্ট ও খারাপ যে, এগুলো ঠিকমতো বুঝতেও কষ্ট হয়। এ নিয়ে অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকেও রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ দিকে বই বিতরণের পর থেকেই নতুন পাঠ্যবইয়ের কাগজের মান ভালো নয় বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নিউজ প্রিন্টে বই ছাপানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি দাবি করেছেন, আমাদের ছাপানো বইয়ের কাগজের মান খারাপ নয়। রঙ কিছুটা ভিন্ন হলেও তা নিউজ প্রিন্ট নয়।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ছাপানো কাগজ অনেক বেশি সাদা হলে তা চোখের জন্য ক্ষতিকর। সারা জীবন নিউজ প্রিন্ট দিয়েই বই ছাপানো হতো। আমরা কাগজের মান অনেক উন্নত করেছিলাম; কিন্তু এবার সেকেন্ডারি পাল্প ছাড়া দেশে কোনো পাল্প ছিল না। বিদেশ থেকেও কাগজ আনার সুযোগ ছিল না। আমাদের কাছে সেকেন্ডারি পাল্প ছিল তা দিয়েই বই ছাপাতে হয়েছে। আর সেটিতে মান খারাপ হওয়ার কথা নয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বই বিতরণের পর শিক্ষার্থীরা বই বাসায় নেয়ার পর দেখা গেছে সবগুলোই নিম্নমানের কাগজে ছাপানো বই। আর এসব কাগজ নিজউ প্রিন্টের চেয়ে কোনোভাবে ভালো হতে পারে না। আবার এর উজ্জ্বলতাও কাক্সিক্ষত মানের অনেক নিচে। এসব বইয়ের উজ্জ্বলতা কোনোভাবেই ৬৫ শতাংশের বেশি হবে না। এনসিটিবির নির্ধারিত মান ৮৫ শতাংশ হলেও বিভিন্ন সঙ্কটের কারণে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে জানানো হয়।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে যেন দ্রুত পাঠ্যবই নষ্ট না হয় এবং বইয়ের প্রতি তাদের আকৃষ্ট করতে অফসেট পেপারে চার রঙের (আরজিবি কালার) বই দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে ৮২ শতাংশ উজ্জ্বলতা থাকার কথা থাকলেও নিউজ প্রিন্টের কালো কাগজে প্রাথমিকের অধিকাংশ বই পাওয়া গেছে। অন্য দিকে এ বছর যেসব বই শিশুদের বিতরণ করা হয়েছে তা দিয়ে বছর পার করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর পুরনো বইয়ের ওপরই ভরসা করতে হবে। অনেক স্কুলের শিক্ষকরা জানান, যেসব শিক্ষার্থী চলে যায় তাদের বই রেখে দিই। কারো বই নষ্ট হলে এসব পুরনো বই দিয়ে বছরের বাকি সময় চালানো হবে। সে কারণে নতুন বই দেয়ার আগে শতভাগ পুরনো বই সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শুধু প্রাথমিকে নয়, এ বছর মাধ্যমিক পর্যায়েও বইয়ের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। একজন অভিভাবক জানান, তার মেয়েকে নিয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক হাইস্কুলে আসেন। মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে; কিন্তু বই উৎসবের দিনে মেয়ের হাতে একটিও নতুন বই ওঠেনি। তবে অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের হাতে দু-তিনটি করে বই তুলে দেয়া হয়েছে। ওই অভিভাবক মেয়ের বই আনতে স্কুলে গেলে বই এখনো আসেনি বলে তাকে জানিয়ে দেন শিক্ষকরা। সূত্র আরো জানায়, সারা দেশে সরকার বই উৎসব করলেও প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের অনেকে নতুন বই পাচ্ছে না। অনেকে পুরনো বই পাচ্ছে। তবে সেটিও পর্যাপ্ত নয়। কবে নতুন বই দেয়া হবে সে বিষয়েও কিছু বলা হচ্ছে না। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নতুন ক্লাসের পড়াশোনা ব্যাহত হতে পারে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানান, বইয়ের কোনো সঙ্কট নেই। তবে টেন্ডার জটিলতার কারণে এবং ভার্জিন পাল্প (কাগজ তৈরির মণ্ড) আমদানিতে সমস্যা এবং কাগজ না পাওয়ার কারণে কয়েকটি প্যাকেজের কাজে দেরি হয়েছে। সব বিদ্যালয়ে তিন থেকে চারটি বিষয়ের বই পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে। ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব বিদ্যালয়ে শতভাগ বই পৌঁছে দেয়া হবে।

নতুন বইয়ের মান নিয়ে তিনি বলেন, মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এ বছর স্বাধীন এজেন্সি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মান যাচাইয়ে পরিদর্শন টিম আরো ছয় মাস সময় পাবে। টেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত মানের বই সরবরাহ করতে হবে। কোথাও নিম্নমানের বই পাওয়া গেলে পরিদর্শন টিম এনসিটিবি, মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে জানাবে। ফলে এর বাইরে বই সরবরাহের কোনো সুযোগ নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/718115