৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:০৭

শীতের দাপটে ছিন্নমূল মানুষের বেঁচে থাকা দায়

শীতের দাপটে ছিন্নমূল মানুষের বেঁচে থাকা দায়। দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন তারা। তীব্র ঠাণ্ডায় নির্ঘুম রাত শেষে দিনে একটু উষ্ণতার আশায় থাকলেও মিলছে না সূর্যের দেখা। এর মধ্যেও শীত নিবারণে কম্বলসহ শীতবস্ত্র মিলছে না। এতে করে রাত দিন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অভাবী এসব মানুষ।

রাজধানীর বিজয়নগর মোড়ে রাতে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন মিনু। তাকে দেখে মোটর সাইকেল থামাতেই এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘স্যার একটা কম্বল দেন। দুই রাত ঘুমাই না। ঠাণ্ডায় আর পারি না। দুই দিন রাত জেগে অপেক্ষায় আছি। কেউ যদি একটা কম্বল বা কিছু গরম কাপড় দিয়ে যায় তবে বেঁচে যাবে। কিন্তু অনেকে আসলেও কম্বল তো দূরের কথা কেউ আমাদের দিকে তাকায়ও না। কী করুম স্যার? বাঁচুম ক্যামনে’?

মিনুর এমন কথার কোনো জবাব না থাকলেও তার মতো এমন অসখ্য ছিন্নমূলের দেখা মিলেছে রাতের রাজধানীতে।
এমনি একজন মতিঝিল এজিবি কলোনির পাশে ফুটপাথে থাকেন হাজেরা। দুই সন্তান আর স্বামীসহ একটি পাতলা কম্বল পেঁচিয়ে ঘরে বসেছিলেন। তার ভাষ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে না ঘুমিয়ে আছেন। প্রচণ্ড শীতে মনে হয় মাটি থেকে বরফের মতো ঠাণ্ডা উঠে আসছে। তাই শুয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এমন শীত নিবারণের কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, একটি কম্বল গত বছর পেয়েছিলেন। আর এর আগের একটি ছিল। তা দিয়েই চারজনের সংসারে শীত নিবারণের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বাতাসের দাপট এমন যে মনে হয় চামড়া ছিদ্র করে ঠাণ্ডা শরীরে প্রবেশ করে। ফলে তারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে শান্তিনগর বাজারের কাছে ফুটপাথে পলিথিন মুড়িয়ে বসে ছিলেন জাফর আলী। রিকশাচালক মধ্য বয়সী এই লোক জানান, প্রচণ্ড শীতে ঘুম আসছে না। কিছুতেই শীত নিবারণ সম্ভব হচ্ছে না। আগুন পোহাতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু অতিরিক্ত বাতাস আর ঠাণ্ডায় কুড়িয়ে আনা কাগজে আগুন ধরাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই নিজেকে রক্ষায় রিকশায় থাকা পলিথিন মুড়িয়ে রাত কাটানোর চেষ্টা করছেন।

শাহবাগ মোড়ে গভীর রাতে ফুটপাথে কাগজ জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন দিন মজুর শাহীন। সাথে আরো চারজন। জানালেন তাদের সবাই দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। সীমাহীন ঠাণ্ডার কারণে তারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

শাহীন জানান, শীত এমন যে রাতটা যেন একটা ভয়ঙ্কর সময়। কারণ দিনের বেলা কাজে থাকায় ঠাণ্ডা তেমন অনুভব হয় না। কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। তিনি জানান, মধ্যরাতের পর থেকে মনে হয় যেন বরফ গলে ঠাণ্ডা নামছে। ফলে ঘুমতো দূরে থাক, আগুন জ্বালিয়েও তা থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই তারা রাতে আগুন জ্বালাবার উপকরণ সংগ্রহ করেন। আর মধ্যরাত থেকে আগুন পোহানোর মাধ্যমেই সকাল গড়ায়।

টিএসসির সামনে এমনি আরেকজন আফরোজা। মধ্য বয়সী এ নারী জানান, দিনের বেলা ফেরি করে পান বিক্রি করেন। সারা দিন কঠিন পরিশ্রমের পর সন্ধ্যায় ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে আসে। কিন্তু ঘুমানোর উপায় নেই। এক দিকে এমনিতেই ঠাণ্ডা আর রাত থেকে শুরু হয় বাতাস সব মিলে ঘুমের পরিবর্তে রাত জেগে চলে উষ্ণতার সন্ধান।

আফরোজা জানান, প্রতি বছর এমন সময়ে মানুষ গরম কাপড় বিতরণ করত। কিন্তু এবার এখনো কেউ আসেনি। রাত জেগে মানুষ দেখলেই কম্বলের আশায় ছুটে যান। কিন্তু লাভ হয় না। তার ভাষ্য, এমতাবস্থায় জীবনযুদ্ধের সাথে চেয়ে শীত নিবারণের সংগ্রামে তিনি এখন ভীষণ ক্লান্ত।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/718135