৫ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:০৪

রাজশাহী ও খুলনায় বই ছাড়াই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে

রাজশাহীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা এখনো হাতে পায়নি সব বিষয়ের বই। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস শুরু হলেও পরিপূর্ণভাবে শুরু করা যায়নি পাঠদান কার্যক্রম। রাজশাহীর এগারোটি থানাতেই এ চিত্র বলে তথ্য সূত্রে জানা গেছে। এদিকে নি¤œমানের কাগজে ছাপা বই নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

রাজশাহীর বিভিন্ন স্কুলে ২০২৩ সালের বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মধ্য দিয়ে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। রাজশাহী নগরীর প্রথম শ্রেণির স্কুলগুলোতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ের বই হাতে পেলেও থানা পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখনো হাতে পায়নি সকল বিষয়ের বই। এক তথ্যে জানা গেছে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়নি অর্ধেক বই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সকল বিষয়ের বই পৌঁছাতে অন্তত আরো ১৫ দিন সময় লাগবে।

রাজশাহী জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ১ হাজার ৫৭টি। এ সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৫ হাজার। আর বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ১১ হাজার। এছাড়া জেলায় রয়েছে ৬৪৩টি মাধ্যমিক স্কুল এবং ২০২টি দাখিল মাদ্রাসা। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্কুল (ষষ্ঠ থেকে নবম) পর্যায়ে ২ লাখ ২৫ হাজার ৪০ এবং দাখিলে (ষষ্ঠ থেকে নবম) শিক্ষার্থী রয়েছে ৪১ হাজার ৮৯০ জন। এই সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য মাধ্যমিকে ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৯০৫ এবং দাখিলে ৬ লাখ ৩২ হাজার ৩৪৫টি পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সূত্রের তথ্য মতে, এসকল শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের বই এখনো হাতে পায়নি।

প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পহেলো জানুয়ারি বই উৎসবের দিন রাজশাহীতে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক বই এসেছে। এছাড়া বিজ্ঞান এবং ধর্ম বিষয়ের বই এখনো রাজশাহীতে পৌঁছেনি। বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ের কারিকুলাম পরিবর্তন হওয়ার কারণে ছাপাখানা থেকে বই ছাপাতে দেরি হয়েছে। তাছাড়া ধর্ম বইয়েরও কিছুটা পরিবর্তনের কারণে সেটিও আসতে দেরি হচ্ছে বলে তারা মত ব্যক্ত করেন। এর ফলে পাঠাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ বছর অন্য বছরের তুলনায় বইয়ের কাগজ অত্যন্ত নি¤œমানের এবং ছাপাও খুব খারাপ বলে তারা অভিযোগ করেন।

জেলা শিক্ষা অফিসার সাইদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “চাহিদামতো বই সরবরাহ পাইনি। এ কারণে শিক্ষার্থীদের বই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে হয়ত পাঠদান কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে পুরাতন বই দিয়ে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।” জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে কার্যালয়ে ডেকে তাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বইয়ের সংকট থাকবে না। জেলার সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেয়া সম্ভব হবে।
খুলনা ব্যুরো : বছরের প্রথম দিন নতুন বই নিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে হাজির হয়েছিলো খুলনা জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌভিক দে। প্রায় দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তার হাতে তুলে দেওয়া হয় শুধু ইংরেজি বই। আর সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলনার চতুর্থ শ্রেণিতে দেয়া হয়েছে প্রাথমিক বিজ্ঞান বই। গত দুই দিন বিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে। কিন্তু আর কোনো বই পায়নি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্ররা। বই ছাড়াই ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। একই অবস্থা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রদের। তাদের দেওয়া হয়েছে শুধু প্রাথমিক বিজ্ঞান বই। অথচ ক্লাস হচ্ছে সব বিষয়ের। শুধু জিলা ও মডেল স্কুলই নয়, নগরীর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে।

নগরীর কেসিসি কলেজিয়েট গার্লস স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শুধু বিজ্ঞান বই দেওয়া হয়েছে। অথচ বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ৬টি বিষয়ের ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষকরা পুরাতন বই নিয়ে ক্লাসে পাঠদান করছেন। কিন্তু কী পড়ানো হচ্ছে ধরতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আবার বাড়িতে পড়াও দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ অভিভাবকরা। খুলনা জেলা প্রাথমিক অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় ১ হাজার ৫৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চলতি বছর জেলায় বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ২৩১টি। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৮০ শতাংশ বই এসেছে। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পেয়েছে একটি বই। অন্যান্য শ্রেণিতেও সম্পূর্ণ বই মেলেনি।

অপরদিকে খুলনায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২০টি ও মাদরাসা ১৩৬টি। ২৯ লাখ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫০ শতাংশ বই খুলনায় পৌঁছেছে। মাধ্যমিক স্তরে তৃতীয় ও ষষ্ঠ, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ পাঠ্যবই পেয়েছে। বাকিরা কেউ একটি, কেউ দুটি করে বই পেয়েছে। জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সৌভিক দে বলেন, ৩ দিন ধরে শুধু ইংরেজি বই পড়ছি। এক বই পড়তে আর ভালো লাগে না।
কেসিসির কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মানহা হোসাইন বলেন, ম্যাডাম ও স্যাররা ক্লাসে পুরাতন বই দেখে পড়াচ্ছে। অনেকে পুরাতন বই জোগাড় করেছে। আমিসহ যাদের কাছে পুরাতন বই নেই, তারা কিছুই বুঝতে পারছি না। খুলনা জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণি-শিক্ষক বিউটি মল্লিক বলেন, ছোট বাচ্চারা বই ছাড়া পড়তে চায় না। তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খুলনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারহানা নাজ বলেন, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে একটি করে বই এসেছে। তবে অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়েছে। বাকি বই দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ বই চলে এসেছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

https://dailysangram.com/post/512782