৪ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১১:১৫

সীমান্তজুড়ে কান্না থামছেই না

থামছে না সীমান্তে বিএসএফ’র একের পর এক গুলি। ঝরছে তাজাপ্রাণ। লালমনিরহাট সীমান্তজুড়ে গত বছরে বিএসএফ’র গুলিতে ঝরেছে ১৫টি প্রাণ। গত দুই মাসেই ঝরেছে ৮ প্রাণ। এসবের মূলে রয়েছে সীমান্ত দিয়ে গরু পারাপার। রাত গভীর হলেই সীমান্তে কাটাতারের বেড়া যেন অবমুক্ত। জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় সীমান্ত কাটাতার রয়েছে ২৮৪ কিলোমিটার। কাটাতারের বেড়া নেই ৭৮ কিলোমিটার। এসব ২৫ পয়েন্টে সীমান্ত দিয়ে চলে গরু পারাপার। বিজিবি, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, বছরের শুরু ভোর ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর গভীর রাতে বুড়িমারী সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বিপুল মিয়া নামের এক বাংলাদেশি নিহত হয়।

ভারতীয় চাংরাবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্পের টহল সদস্যরা তাকে কাটাতারের বেড়ার কাছে গুলি করে হত্যা করে। ২৯শে ডিসেম্বর হাতিবান্ধা বড়খাতা দোলাপাড়া সীমান্তে ২ বাংলাদেশিকে হত্যা করে বিএসএফ। নিহতরা হলেন ওই গ্রামের সামাদ মিয়ার পুত্র জাকির হোসেন মংলু ও হাফিজ মিয়ার পুত্র সাদিক হোসেন। ১৫ই ডিসেম্বর পাটগ্রাম শমসের নগর সীমান্তের মেইন পিলার ৮৬৩ নিকটে ইদ্রিস আলীর পুত্র শাহাদতকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ’র সদস্যরা।

৮ই নভেম্বর ভারতের কৈইমারী বিএসএফ সদস্যরা লালমনিরহাটের মহিষতুলি সীমান্তে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে। নিহতরা হলেন মহিষতুলির সানোয়ার হোসেনের পুত্র ওয়াজকুরুনী ও সাদেক হোসেনের পুত্র আয়নাল হোসেন। ২৭শে নভেম্বর হাতিবান্ধা টংভাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফ সদস্যরা সাদ্দাম হোসেন নামের এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করে। ১৪ই ডিসম্বের আরও এক বাংলাদেশি নিহত হয় সীমান্তে। ১৭ই মার্চ জগৎবেড় সীমান্তে ৮৬১ মেইন পিলার ১ এস সাব পিলারের নিকট রেজাউল নামের এক বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। রেজাউল ওই এলাকার মনসুর আলীর পুত্র। সীমান্তে বিএসএফ’র আগ্রাসী ভূমিকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আতঙ্ক থাকার কারণে কৃষকরাও কৃষি কাজে যাচ্ছে না। হাতিবান্ধার বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামান সোহেল জানান, একের পর এক সীমান্তে গেলে বিএসএফ বাংলাদেশি পেলেই হত্যা করবে এ কোন আইন। আমরা এর বিচার চাই। সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি সরকারের নিকট সীমান্ত গ্রামবাসীর।

নিহত পরিবারগুলো কষ্টে জীবনযাপন করছে। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে একবেলা খাবার জুটলেও অন্যবেলায় থাকতে হয় অনাহারে। বুড়িমারীর ২ জন ও কালীগঞ্জের গোড়লের ২ জন ভারতে বিএসএফ’র হাতে গুলিতে নিহত হলেও তাদের লাশ এক বছর ধরে ভারতে মেডিকেলে রয়েছে। বিএসএফ’র পক্ষে লাশ দেয়ার কথা জানালেও বিজিবি নেয়নি সেই লাশ। ৪ পরিবারের লোকজন বিএসএফ’র গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মহিষতুলি সীমান্তের কৃষক রহমত আলী জানান, সীমান্তের কাছে বাড়ি, জায়গা-জমি সীমান্তঘেঁষা। বিএসএফ যেভাবে গুলি করে হত্যা করছে তাতে জমিতে চাষাবাদ বন্ধের পথে। দুর্গাপুর সীমান্তের রবিউল ইসলাম জানান, সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বের হওয়া যায় না কখন যে বিএসএফ গুলি করে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশ অংশে ভারতীয় বিএসএফ অনুপ্রবেশ করে এতে গ্রামবাসীদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

দহগ্রাম সীমান্তের বাংলাদেশে বিএসএফ সদস্যরা দিনে-দুপুরে বাংলাদেশে সড়কে ঘোরাফেরা করছে এতে সীমান্তবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। সন্ধ্যা হলেই ঘর থেকে বের হচ্ছে না সীমান্তবাসী। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিজিবিকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ এ নিয়ে বৈঠক করছে। ওদিকে পরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম লালমনিরহাট সীমান্তে এসে জানান, শূন্য কোটায় সীমান্ত হত্যার জন্য ভারত-বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে। সীমান্তে হত্যা কোনো ভাবে কাম্য নয়। ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল হাসান শাহরিয়ার জানান, বাংলাদেশিরা সীমান্তের নিকট কাটাতারের বেড়া অতিক্রম করায় বিএসএফ গুলি করে।

https://mzamin.com/news.php?news=36851