৪ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১১:১০

যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে : আবদুল হালিম

সাম্প্রতিক আন্দোলনে গ্রেফতার হয়েছেন জামায়াতের সহস্রাধিক নেতাকর্মী

সাম্প্রতিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগ পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ও কয়েকজনের হাত-পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ করেছে দলটি। তাদের শীর্ষ দুই নেতা আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল বর্তমানে জেলবন্দী। এ ছাড়াও নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তারপরও কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপিসহ অন্যান্য সমমনা দল ও জোটের সাথে যুগপৎ আন্দোলন অব্যাহত রাখবে জামায়াতে ইসলামী।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ভেঙে যাওয়ার পর বিভিন্ন দাবিকেন্দ্রিক যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এর মধ্যে যেমন জাতীয়তাবাদী সমমনা দল রয়েছে, তেমনি উদার ইসলামপন্থী ও বাম ঘরানার দলগুলোও রয়েছে। বিএনপির বাইরে একটি ১২ দলীয় জোট এবং আরেকটি ১১ দলীয় জোট গড়ে উঠেছে। এর বাইরে উদার ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীও যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া নাগরিক মঞ্চ, গণফোরাম এবং সর্বশেষ গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যও যুগপৎ আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই মূলত যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে দলগুলো। বিরোধী দলগুলোর নেতাদের মতে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে তা একপেশে হয়েছে এবং ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করে বিরোধী সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রেই যেতে দেয়া হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে ফেলা হয় বলেও তাদের অভিযোগ। এ কারণে এবার সে রকম পরিস্থিতি তৈরি করতে দিতে চায় না তারা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের বছর খানেক আগেই তাই মাঠে নেমেছে বিরোধী দলগুলো। বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ শেষে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি।

এ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিএনপি নয়া পল্টনে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে করার অনুমতি দেয়া হয়। আর এ নিয়ে নয়া পল্টনে দুই দিন আগে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ দিন বিএনপির নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সিনিয়র অনেক নেতা আটক হন। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে রাতে আটক করা হয়। এ ছাড়া সারা দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী আটক হন। সরকারের চাপে বিএনপি শেষ পর্যন্ত গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করতে বাধ্য হয়। সমাবেশ থেকে ২৪ ডিসেম্বর সারা দেশে গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তবে ওই দিন শুধু দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে এবং পরে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। বিএনপি নয়া পল্টন থেকে মগবাজার পর্যন্ত মিছিল করে। এর আশপাশের এলাকায় সমমনা জোটের উদ্যোগে মিছিল বের করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় মিছিল বের করা হয়। এদিন বিএনপি ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোর মিছিলে কোনো গোলযোগ না হলেও জামায়াতের মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। মালিবাগ-মৌচাক এলাকা টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও লাঠিচার্জে তখন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ছাড়া রামপুরা এলাকার মসজিদগুলো থেকে জুমার নামাজ শেষে বের হলে জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বায়তুল মোকাররম এলাকায়ও ছিল প্রশাসনের কড়া অবস্থান। সেখান থেকেও জামায়াত কর্মী সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়। পরে জামায়াতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাদের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত এবং শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বাহিনীর ১০ জনের আহত হওয়ার খবর জানানো হয়। জামায়াত নেতাকর্মীদের নামে পুলিশ বাদি হয়ে চারটি মামলা দেয়া হয়। তাদের রিমান্ডে নেয়ার সময় তোলা ছবিতে অনেকের হাতে প্লাস্টার করা অবস্থায় দেখা যায়।

পরে জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, থানায় পুলিশি হেফাজতে কর্মীদের ওপর নির্যাতন ও কয়েকজনের হাত-পা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপির বাইরে থাকা ১২ দলীয় জোট ও ১১ দলীয় জোটের নেতারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়া হয়নি। এ নিয়ে জামায়াতের মধ্যে অসন্তোষ আছে। একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন হলেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকারের পরও তাদের নীরবতাকে ভালোভাবে নেয়নি দলটি। জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপির সাথে আমরা জোটে ছিলাম। এখন যুগপৎ আন্দোলন করছি। তাদের নেতাকর্মী গ্রেফতার হলে আমরা নিন্দা-প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মী আহত-গ্রেফতার হলে তাদের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতিও দেয়া হয় না। আন্দোলনের প্রধান একটি দলের কাছ থেকে এ রকম আচারণ নেতাকর্মীরা আশা করে না। জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা জাতীয় স্বার্থে যুগপৎ আন্দোলন করছি। অবিলম্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠনসহ ১০ দফা আমাদের দাবি। আমাদের দলের আমির ডা: শফিকুর রহমান যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়ার পর গ্রেফতার হয়েছেন। সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ১৭ মাস ধরে জেলে বন্দী রয়েছেন। এ ছাড়া সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ আরো অনেক সিনিয়র নেতা জেলে রয়েছেন। আর এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে প্রায় এক হাজার নেতাকর্মী আটক করা হয়েছে। তারপরও আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব। সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে যাবে না। আগামীতে যেসব কর্মসূচি থাকবে জামায়াত পালন করবে। এ ক্ষেত্রে ছোটখাটো কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না।

 

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/717866