৪ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ১০:৫৭

আকাশচুম্বি দামে মানুষের কষ্টের ছিল না শেষ

বছরজুড়ে ভোগ্যপণ্যের বাজার ছিল বেসামাল। এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশি। কখনও করোনা, কখনও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কখনও ডলার সংকট, কখনও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, কখনও সময়মত এলসি খোলতে না পারা। এসব অজুহাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বাজার অস্থিতিশীল করে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয় তারা। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, বছরের ব্যবধানে ৩০টি পণ্যের দাম গড়ে ৪১ শতাংশ বেড়েছে। কোন কোন পণ্যের দাম ১২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বাস্তবে দাম বৃদ্ধির হার আরও অনেক বেশি। পুরো বছর বিভিন্ন অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে পকেটভারী করেছে ব্যবসায়ীরা। কখনও চাল, কখনও পেঁয়াজ, কখনও তেল, কখনও চিনি, কখনও ময়দার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা। এসব ভোগ্যপণ্য কর্পোরেট সি-িকেট এর হাতে চলে গেছে। তারা কোটি কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য কিনে মজুদ করে। ফলে বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে ভোগ্য পণ্যের দাম। পুরো বছরজুড়ে হাতেগোনা কয়েকটি কর্পোরেট গ্রুপই বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছে। সরকারের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে মজুদ সি-িকেট এর দহরম-মহরম সর্ম্পক। তাদের গুদামগুলোতে অভিযান চলেনি। ফলে ভোগ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে মজুদ সি-িকেট এর বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কার্যকর কোন ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিতে পারেনি। গতানুগতিক দুয়েকটি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারি নজরদারি না থাকায় সি-িকেট কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা আদায় করেছেন অধিক মুনাফা। এতে ক্রেতা সাধারণ অসহায় হয়ে পড়লেও নিরুপায় ছিল তারা। তাদের জীবনযাত্রায় উঠেছে নাভিশ্বাস। ভোগ্যপণ্যের এমন আকাশচুম্বি দামে ত্রাহি অবস্থায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের কষ্টের শেষ ছিল না বিদায়ী বছরে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পাইকারিতে ময়দার ৫০কেজি বস্তার দাম ছিল ১ হাজার ৩শ’ টাকা। বছরের শেষে এসে সেই ময়দার দাম ঠেকেছে প্রতি বস্তায় ৩ হাজার ৬শ’ টাকা। প্রতি বস্তায় বেড়েছে ২ হাজার ৩শ’ টাকা। খুচরায় বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। বছরের শেষে এসে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা। খুচরায় কেজিতে বেড়েছে ৪০টাকা। চালের দাম বেড়েছে মান অনুযায়ী ৫০কেজির বস্তায় ২৭শ’ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। সদ্য বিদায়ী বছরের শুরুতে প্রতি বস্তা চিনিগুড়া আতপ চালের দাম ছিল ৪ হাজার ৫শ’ টাকা। বছরের শেষে সেই চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ২শ’ টাকা। প্রতি বস্তায় বেড়েছে ২ হাজার ৭শ’ টাকা। এছাড়া বছরের শুরুতে ৫০ কেজির বস্তা কাটারি আতপ চাল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫শ’ টাকায়। বছর শেষে বিক্রি হচ্ছে ৪ জাহার ২শ’ টাকায়। একইভাবে আতপ আটাশ ২ হাজার ৪শ’ টাকায় বিক্রি হলেও তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়। ১ হাজার ৪শ’ টাকার মোটা চাউল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২শ’ টাকায়। ২ হাজার ৮শ’ টাকার জিরাসিদ্ধ বর্তমানে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ টাকায়। ২ হাজার ২শ’ টাকার মিনিকেট সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯শ টাকায়। বছরের শুরুতে স্বর্ণা সিদ্ধ বিক্রি হয়েছে ২০৫০ টাকায়। বছর শেষে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬শ’ টাকায়। একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ এ চালের ভাত খাই। এ চালের দাম বেড়েছে প্রতি বস্তায় ৫৫০টাকা।

বছরের শুরুতে ৫০ কেজি চিনির বস্তার দাম ছিল ৪ হাজার টাকা। বছর শেষে ওই চিনির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২৫০টাকায়। বস্তা প্রতি চিনির দাম বেড়েছে ১ হাজার ২৫০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে ২৫ টাকা বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। ২০২২ সালের শুরুতে পাইকারি বাজারে ভোজ্য তেলের প্রতি লিটার ৮৫ টাকা। এখন প্রতি লিটার ভোজ্য তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকায়। প্রতি লিটারে বেড়েছে ১০০টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ১০০-১১৫টাকা পর্যন্ত। এছাড়া রান্নায় ব্যবহৃত কৃষিপণ্য পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৪০টাকায় বিক্রি হলেও বছরের মাঝামাঝি সময়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে এ কৃষিপণ্যের। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্যমতে বছরের ব্যবধানে ৩০টি পণ্যের দাম গড়ে ৪১ শতাংশ বেড়েছে। কোন কোন পণ্যের দাম ১২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকারি সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতেই ৩০ টি ভোগ্যপণ্যের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে। বাস্তবে দাম বৃদ্ধির হার আরও অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমদানিকারক, পাইকারি বিক্রেতা-খুচরা বিক্রেতা যে যার মত লাভ করছে। আশা করি নতুন বছরে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিবে সরকার।

https://dailysangram.com/post/512669