১৩ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৪:৩২

নীতিমালার ফাঁক গলে অনিয়ম!

শাহজালাল বিমানবন্দরে দরপত্র ছাড়াই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান

শুধু দরখাস্ত করে দরপত্র ছাড়াই মিলছে যে কোনো ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নীতিমালার এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে যেনতেনভাবে বাণিজ্য করছে যাত্রীসেবামূলক পরিবহন কোম্পানি থেকে চা-পানের দোকানের মতো শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি এই বিমানবন্দরের কাস্টমস গ্রিন চ্যানেল গেটের ঠিক সামনের স্থানে দরপত্র ছাড়াই যাত্রীসেবার অনুমতি দেওয়া হয়েছে একটি বেসরকারি পরিবহন প্রতিষ্ঠান 'কার রেন্টাল'কে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অতীতে দরপত্রে অংশ নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাওয়া চারটি পরিবহন কোম্পানি।

এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান সমকালকে জানান, বিমানবন্দরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো দরপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। এখানে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দরখাস্ত করলেই অনুমতির জন্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের পরিচালক, এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের (এটিএম) মিজানুর রহমান বলেন, ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী বিমানবন্দরে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের মাধ্যমেই কাজ চালাতে দেওয়া হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেও অনুমতি পাওয়া যায়।

তবে বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দরপত্র ছাড়াই কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেওয়ায় এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এর ফলে বরং যাত্রী হয়রানিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়ছে। এক শ্রেণির কর্মকর্তা এ থেকে আর্থিক ফায়দাও লুটছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি বহির্গমন টার্মিনালের ভেতর বিমানবন্দর কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নাম ব্যবহার করে বহিরাগত এক ব্যক্তি একটি কোটি টাকার রেস্টুরেন্টও বরাদ্দ নিয়েছেন। এর আগে আশকোনা হজ ক্যাম্পের সামনে বেবিচকের কয়েক কোটি টাকার সম্পদও এই সমিতির নামে বরাদ্দ দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে এ বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে বেসরকারি চারটি পরিবহন কোম্পানি। বিমানবন্দর আগমনী টার্মিনালের ভেতর এসব কোম্পানির কাউন্টার রয়েছে। এই পরিবহন কোম্পানিগুলোর মালিকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে তাদের কাউন্টার খোলার সুযোগ দিয়েছিল। অথচ সম্প্রতি সেখানে আরও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান 'কার রেন্টাল'কে কোনো দরপত্র ছাড়াই কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আগের চারটি কোম্পানির অভিযোগ, এর ফলে বিমানবন্দরে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে দেশি-বিদেশি যাত্রীদের। বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হতেই গেটের সামনে থাকা কার রেন্টালের কর্মীরা যাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে। তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে।

কার রেন্টাল কোম্পানির মালিক মেহেদী চৌধুরীর বড় ভাই সাদি চৌধুরী জানান, গত নভেম্বর মাসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের পরিবহন কোম্পানি কার রেন্টালকে যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। দরখাস্তের মাধ্যমে তারা এ অনুমতি পেয়েছেন। তিনি জানান, গত প্রায় তিন দশক ধরে তারা বিমানবন্দর এলাকায় 'স্পাইসেস রেস্টুরেন্ট' নামে একটি হোটেলও পরিচালনা করে আসছেন। যাত্রীসেবায় তারা কোনো ত্রুটি রাখছেন না।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য পরিচালনা ও পরিকল্পনা এয়ার কমডোর মো. সাদিক হোসেন জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে কার রেন্টাল কোম্পানিকে কর্তৃপক্ষ যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। তবে দরপত্রের বিষয়টি জানা নেই তার।

এদিকে সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া ডজনখানেক গাড়ি ডাকাতির কবলে পড়ে। এ সময় একজন চালক নিহতও হয়েছেন। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক বিদেশফেরত যাত্রী। এ অবস্থায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবামূলক পরিবহন কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/2201140777