টার্মিনালের ভেতরে যাত্রী ভোগান্তি বাইরের সড়ক ও ফুটপাথ বেহাল
৮ জানুয়ারি ২০২২, শনিবার, ১০:৩০

টার্মিনালের বাইরে যাত্রী ভোগান্তি, বাইরের সড়ক ও ফুটপাত বেহাল

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে বিদেশগামী যাত্রীরা পদে পদে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরছেন তারাও আনুষ্ঠানিকতা শেষে দ্বিতীয় দফা বাইরে এসে ঝক্কি ঝামেলা সহ্য করে বাড়িতে ফিরছেন। এর মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান বিমানবন্দরের বাইরের সড়ক আর ফুটপাথে বড় বড় গর্ত আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে মূল সড়কে যেতেই অনেকে পেরেশান হয়ে পড়ছেন। বিমানবন্দরের এমন বেহাল দশা দেখে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত যাত্রী এবং তাদের স্বজনরা দায়িত্বরতদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। করছেন অভিযোগও। যদিও পার্শ্ববর্তী দেশ মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের বিমানবন্দর টার্মিনালের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে নেই অহেতুক হইচই, নেই গণহারে দোকানপাট আর গাড়ির জটলা।

গত বুধবার বিমানবন্দর এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিতে গেলে পাওয়া যায় এসব তথ্য। যদিও এসব বিষয়ে বারবার অভিযোগ দেয়ার পরও সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সেদিকে কর্ণপাত করছেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সন্ধ্যা ৬টা। বিমানবন্দরের প্রধান সড়ক দিয়ে যেসব যাত্রী হেঁটে প্রবেশ করছিলেন তাদের এপিবিএনের চেকপোস্টে তল্লাশিতে পড়তে হচ্ছে। ভেতরে ঢোকার পর দেখা যায়, বিদেশ থেকে যারা দেশে ফিরেছেন তারা এবং তাদের স্বজনরা গাড়িযোগে এক নম্বর কারপার্কিং থেকে বের হয়ে আবার ইউটার্ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হচ্ছেন। এতে যানজটে আটকে পড়ে অসংখ্য গাড়ি। এর মধ্যে যাত্রী ও স্বজনরা যাত্রী টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এলাকা থেকে তাদের লাগেজ কেউ হাতে আবার কেউ মাথায় নিয়ে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। বিমানবন্দর টার্মিনালের দিকে যত লোক প্রবেশ করছে ততই ভিড় বাড়তে থাকে। কারপার্কিং, যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা লোহার শিকের সামনে অপেক্ষমাণ যাত্রীর স্বজন ও ভেতরে গাড়ির জটে এলাকায় এক ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে কোনো যাত্রী টার্মিনাল থেকে বের হলেই গাড়ির চালকরা বলছিলেন, ভাই কোথায় যাবেন। গাড়ি লাগবে? কেউ কথা বলছেন আবার কেউ সরাসরি চলে যাচ্ছেন।

এরই মধ্যে দেখা মেলে এক বৃদ্ধকে ধরে সৌদি থেকে দেশে ফেরা এক শ্রমিক অঝোরে কাদছিলেন। এ সময় তার কান্না দেখে জড়ো হয়ে যায় কিছু উৎসুক লোক। এ সময় এক স্বজন তাদের জানান, সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে তার পা ভেঙে যায়। পরে তারা দ্রুত টার্মিনাল ত্যাগ করেন। বিমানবন্দর এক নম্বর টার্মিনালের পূর্বপাশের ওয়াকওয়ের সড়কের পাশে রয়েছে বিশাল এক গর্ত। যারা আনমনে মোবাইল টিপতে টিপতে সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তারা পড়ছেন ওই গর্তের মধ্যে। একইভাবে বিমানবন্দর থেকে যারা ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাচ্ছেন তাদেরকে পুরো ভাঙাচোরা ফুটপাথ পেরিয়ে প্রধান সড়কে যেতে হচ্ছে। আর রাতের ফ্লাইট বন্ধের কারণে ফ্লাইট ওঠানামায় ব্যাঘাত ঘটায় বিদেশগামী ও আগত যাত্রীদেরকে বোর্ডিং পাস, কাস্টম, ইমিগ্রেশনসহ অনেক জায়গায় হয়রানি হতে হচ্ছে। এর মধ্যে যেসব যাত্রী বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য ৭-৮ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে চলে আসছেন তাদেরকেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সৌদি আরবগামী এক যাত্রীর স্বজন ভাইকে টার্মিনালে দিয়ে সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি মোবাইল দেখতে দেখতে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তার চোখে পড়ে গর্ত। এ সময় প্রতিবেদক ছবি তুলতে থাকলে তিনি জানতে চান আপনি কি সাংবাদিক? পরিচয় দিলে বলেন, আমি অল্পের জন্য রক্ষা পেলাম। বিমানবন্দরের মতো সড়কে এত বড় গর্ত থাকবে এটা আমি কল্পনাও করিনি। তিনি বলেন, এটা কি দেখার কেউ নেই। এই পথ ধরে শত শত গাড়ি প্রতিনিয়ত চলছে। মানুষ হাঁটছে।

গর্তের অদূরে (এক নম্বর পার্কিং) দায়িত্ব পালন করছিলেন এপিবিএনের সদস্য। সময় তখন রাত ৮টা। তার কাছে প্রতিবেদক পরিচয় গোপন করে গর্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গর্তের মধ্যে দুই দিন আগেও একজন পড়ে আহত হয়েছেন। এই বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সিভিল অ্যাভিয়েশনের। তাদেরকে অনেক বলার পরও তারা এ নিয়ে কর্ণপাত করছেন না। এরপর তিনি বলেন, আমি আবারো এ ব্যাপারে তাদেরকে জানাবো। টার্মিনালের ক্যানোপির বাইরে অপেক্ষমাণ বয়স্ক দু’জন মহিলাকে দেখা যায় মাটিতে বসে থাকতে। তার কাছে এভাবে মাটিতে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে বসার কোনো জায়গা নেই। ভেতরে ঢুকতে হলে ৩০০ টাকার টিকিট লাগবে। তিনি বলেন, আমার ছেলে মালয়েশিয়া থাকে। দেশে নামছে। সে বের হবে। এখানে বসে তাকে দেখার চেষ্টা করছি।

মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা যাত্রী সুলতান মাথায় মালামালের বোঝা নিয়ে বিমানবন্দরের প্রধান গেট দিয়ে বের হচ্ছিলেন। এভাবে মাথায় লাগেজ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এয়ারপোর্ট থেকে বের হওয়ামাত্রই বাইরে এসে দেখেছিলাম গাড়ি দাঁড়ানো। সেখানে লোকজনের তেমন জটলাও নেই। আমাদের দেশের মতো এমন দোকানপাটও নেই। গাড়িতে উঠে সোজা মালপত্র নিয়ে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু এখানে বিমান থেকে নামার পর যে ভোগান্তি শুরু হলো সেটা এখন মাথায় লাগেজ টানা পর্যন্ত চলছে। এখনও বাইরে বের হওয়ার রাস্তা পাইনি। এসব ভোগান্তির অবসান জরুরি বলে তিনি চলে যান। শুধু মালয়েশিয়া নয়, মালদ্বীপের মতো ছোট দেশের বিমানবন্দরের আশপাশেও নেই দোকানপাট ও অহেতুক গ্যানজাম।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের বিমানবন্দর নির্মাণের সময় এসব নিয়ে ভাবা হয়নি। যার কারণে এখন দেশী-বিদেশী যাত্রীরা বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। এরপরও কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া। কারণ এর সাথে আমাদের দেশের ভাব মর্যাদা ও মানসম্মান জড়িত।

এসব সমস্যা প্রসঙ্গে গতকাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসানের সাথে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি অন্য গণমাধ্যমকে ট্রলি সঙ্কটসহ যাত্রী ভোগান্তি প্রসঙ্গে বলেছেন, ট্রলি সঙ্কটের দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর জন্য নতুন করে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/635121