৭ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার, ১০:০৯

করোনা সংক্রমণের রুট আবারও ঢাকা

দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে রোগী বাড়ার পাশাপাশি মৃত্যুও বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে রোগী শনাক্ত বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি। মৃত্যুও বেড়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে রাজধানীতেই এ রোগীর সংখ্যা ছিল বেশি। ধাপে ধাপে সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। চলমান সংক্রমণ পরিস্থিতিও আগের পথ ধরে এগোচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমিতের ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশই রাজধানীর ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় তেমন সংক্রমণ নেই। ঢাকার পরে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে রোগী শনাক্ত হলেও তা ৭ থেকে ৮ শতাংশ অতিক্রম করেনি।

সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর ৮৩ শতাংশের বেশি রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। ঢাকার পর চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে সংক্রমণ বেশি।

চট্টগ্রামে ৭ শতাংশ এবং রাজশাহীতে ২ শতাংশের কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। সারাদেশে শনাক্ত হয়েছে ১৭ শতাংশের মতো রোগী। এ চিত্র থেকে স্পষ্ট করোনার সংক্রমণ রুট এখনও ঢাকাকেন্দ্রিক।

এ সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। কারণ বেশিরভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।

এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। তবে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সমকালকে বলেন, দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ এখনও খুব বেশি ছড়ায়নি। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী বেড়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়েছে। এসব ব্যক্তি ওমিক্রন সংক্রমিত হলে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ত না। কারণ ওমিক্রন সংক্রমিত দেশগুলোতে হাসপাতালে রোগী ভর্তির হার কম।

সংক্রমণের রুট :দেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ১ হাজার ১৪০ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৯৫০ জন শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ মোট আক্রান্তের ৮৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ রোগী রাজধানীর ঢাকার বাসিন্দা। আর সারাদেশের ৩৩টি জেলায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগের অন্য ১২ জেলার মধ্যে ৭ জেলায় ২৮ জন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। আটটি বিভাগের ৩০ জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি, যা থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সংক্রমণের রুট আবারও সেই রাজধানী ঢাকা।

এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ৪৮ শতাংশ :করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতি সপ্তাহে রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনা করে আসছে। নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যু-এই চারটি সূচকে এ রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনা করা হয়। গত ২০ ডিসেম্বরে ৫০তম সপ্তাহের রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্ত ৬ দশমিক ৬ শনাক্ত কমেছে। একইসঙ্গে মৃত্যুও কমেছে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর বিপরীতে নমুনা পরীক্ষা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সুস্থতা ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই চিত্র পাল্টাতে থাকে। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারিতে ৫২তম রোগতাত্ত্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের সপ্তাহের তুলনায় রোগী শনাক্ত বেড়েছে ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ। একইসঙ্গে মৃত্যুও বেড়েছে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর বিপরীতে শনাক্ত বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। সুস্থতা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে ৩ জানুয়ারি রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৬৭৪ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৪ জন। বিপরীতে ৬ জানুয়ারি রোগী শনাক্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪০ জন, মৃত্যুও হয়েছে ৭ জনের। অর্থাৎ সর্বশেষ তিন দিনে শনাক্ত ও মৃত্যু প্রায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে।

দ্রুত পদক্ষেপ চান বিশেষজ্ঞরা :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিধিনিষেধ কার্যকরে সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগী হতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, 'ডেলটা ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর সীমান্তলাগোয়া ওই এলাকাগুলোতে বিধিনিষেধ আরোপ করার সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু তা বাস্তবায়নে সময় লেগেছিল এক মাসেরও বেশি। এর মধ্যে সারাদেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছিল। এবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত কার্যকরে একই অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি দ্রুততম সময়ে কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

https://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/2201139721