৪ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৬:১০

মোবাইল অ্যাপস ও গেমস উন্নয়ন

ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প এনালগে পরিণত

দুই বছরের প্রকল্প সাত বছরে

মোবাইল অ্যাপস ও গেইম উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত করার কার্যক্রমই এনালগে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের সিংহভাগ টেন্ডারের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়িয়ে পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। অথচ প্রকল্পটি দুই বছরে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন নেয়া হয়। নতুন কার্যক্রম যুক্ত করে পাঁচ বছর পরে এসে খরচ আরো ৪৮ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রতি পরামর্শকের পেছনে খরচ হবে এক কোটি ১০ লাখ টাকা। আর প্রতিটি অ্যাপস তৈরিতে খরচ পড়ছে ৫০ লাখ ৩০ হাজার টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এছাড়া গত পাঁচ বছরে এই প্রকল্পে সাতজন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) পরিবর্তনেও তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রকল্প প্রস্তাবনার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে মোবাইল অ্যাপস ও গেইম নির্মাণ প্রযুক্তি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ দেশের শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ বেকার। তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই শিল্পে নিযুক্ত করতে পারলে বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমেও তারা স্বাবলম্বী হবে। আর এই জন্যই ২০১৬ সালের ১৪ জুন একনেক থেকে ২৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোবাইল গেইম ও অ্যাপ্লিকেশন এর দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পটিকে অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৮ সালের জুনে এটা শেষ করার কথা ছিল।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- মোবাইল অ্যাপস ও গেইম উন্নয়নে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকেও প্রস্তুত করা। বিশ্ববাজারের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করা। যোগ্য প্রশিক্ষক তৈরি করা। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেইম ও অ্যাপস তৈরির জন্য ল্যাব স্থাপন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা অর্জন করা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুমোদনের কিছু দিন পরই ২০১৮ সালের জুলাই মাসে খরচ অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অনুমোদন দেন। এরই মাঝে নতুন নতুন অঙ্গ যুক্ত করে ব্যয় ৩৩০ কোটি আট লাখ ৬৭ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে। একই সাথে বাস্তবায়ন মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়। ফলে সার্বিকভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল সাত বছরে উন্নীত হচ্ছে। যা আজ একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো ছিল, সোয়া ২৭ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া, ২৮৯টি মোবাইল অ্যাপস ও গেইম উন্নয়ন, জেলা পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপস ও গেইম টেস্টিং সেন্টার স্থাপন ৩৩টি, বিভাগীয় পর্যায়ের মোবাইল অ্যাপস ও গেইম টেস্টিং সেন্টার স্থাপন আটটি, ৭৮ মাসের জন্য চারজন পরামর্শকের সেবা ক্রয়। এ ছাড়া ৪১১টি অ্যাপস এবং ২৫২টি গেইমস তৈরি করা।

প্রকল্পটির তৃতীয় দফা সংশোধনের কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় সাতটি নতুন কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। আর সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধুর শৈশব নিয়ে ১০ পর্বের (১০০ মিনিটের) এনিমেশন মুভি, ‘খোকা’ নির্মাণ, প্রধানমন্ত্রীর সাথে শিশু-কিশোরদের সংযোগ স্থাপনের জন্য গেইমস ভিত্তিক ওয়েব প্লাটফর্মের আওতায় ১২টি গেইম নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ভার্চুয়াল ট্যুরের ব্যবস্থা করা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এগিয়ে যাওয়া ৫০ বছর শিরোনামে এনিমেটেড মুভি তৈরি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মোবাইল গেইমের দ্বিতীয় ভার্সন ‘মুক্তিযুদ্ধ’ নির্মাণ করা। শেখ রাসেলের জীবনী নিয়ে থ্রিডি এনিমেটেড মুভি ‘রাসেল সোনা’ নির্মাণ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জন্য এনিমেটেড ল্যাব স্থাপন করা। এসব কার্যক্রম নতুন করে যুক্ত করায় খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর চলমান কার্যক্রম সম্পন্ন করা ও বাস্তবায়ন শেষে এক বছর রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রস্তাবিত নতুন অঙ্গসমূহের বাস্তবায়নে মেয়াদ আরো দুই বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা।

প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন (আইএমই) বিভাগ বলছে, মূল প্রকল্পের সাথে ক্রমপুঞ্জিত মেয়াদ বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। প্রকল্পটি সারা দেশে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে সেগুলো যথাযথ ব্যবহার এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/634167