৩ জানুয়ারি ২০২২, সোমবার, ৪:৫১

রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধাক্কা

র্থবছরের প্রথম ৬ মাসে কমলো ২১ শতাংশ

রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের ধাক্কা লাগল। প্রথমবারের মতো অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলো প্রায় ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ২৯৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কমে নেমেছে ১ হাজার ২৩ কোটি ২৯ লাখ। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ বড় ধাক্কায় বৈদেশিক মুদ্রাবাজার আন্তঃপ্রবাহ কমে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডলারের মান বেড়ে গেছে, কমেছে টাকার মান। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স কমার বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল বাস্তবে তাই হয়েছে।

তিনি জানান, ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এতে ভ্রমণ, চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে পারেনি দেশের মানুষ। তিনি বলেন, এ তিন খাতে বছরে ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। আর এ বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগই আসত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। ২০২০ সালে চাহিদা না থাকায় মানি চেঞ্জাররা ডলার বিক্রি করতে পারেনি। তাদের চাহিদা কম থাকায় পুরো অর্থ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে এসেছে। এতেই গেলো বছর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ছিল বিদায়ী ছয় মাসে। এ সময়ে বিদেশে ভ্রমণ, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে ব্যয় সমান তালে বেড়েছে। একই সাথে বেড়েছে পণ্য আমদানিতে ব্যয়। পাঁচ মাসে পণ্য আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। কিন্তু বিপরীতে রফতানি আয় সেই হারে বাড়েনি। আমদানি রফতানির পার্থক্যের বড় সমন্বয়কারী ছিল রেমিট্যান্স। কিন্তু সেই রেমিট্যান্স প্রবাহও কমে গেছে। সবমিলেই বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্তিরতা বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কমে গেছে টাকার মান। তিনি মনে করেন, সামনে এর তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার টাকার মান আরো কমাতে হবে। আর টাকার মান কমে গেলে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। যেমন, অর্থবছরের প্রথম মাসে জুলাইতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স কম এসেছিল প্রায় ২৮ শতাংশ। পরের মাসে আগস্টে তা কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে কম এসেছে প্রায় ২০ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতা অক্টোবরে কমেছে ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একই ধারাবাহিকতায় নভেম্বরে ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে কম এসেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ সুবাদে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ।

বাজারবিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এমনিতেই ডলারের আন্তঃপ্রবাহ কমে গেছে। সেই সাথে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়। এতে ব্যাংকগুলোর ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার মজুদ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ব্যয়ের দিক থেকে সাবধানতা অবলম্বন না করলে আর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার ধারা অব্যাহত থাকলে সামনে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর আরো চাপ বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কিছু কিছু ব্যাংক ডলারের সংস্থান না করেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলছে। মূল্য পরিশোধের সময় পড়ছে বেকায়দায়। এ দিকে রেমিট্যান্স কমায় ডলারের আন্তঃপ্রবাহ কমে গেছে। বাজারে ডলারের সঙ্কট থাকায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এভাবেই চাপ বেড়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি না করলে ডলারের দাম আরো বেড়ে যেত।

গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার লেনদেন হয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। কিন্তু খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮৯ টাকার কাছাকাছি। মূলত ক্যাশ ডলার কমে যাওয়ায় খোলা বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে বেশি হারে। সামনে এ চাপ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররাও।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/633907/