২ জানুয়ারি ২০২২, রবিবার, ১:২২

শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই ধাক্কা

সময়মতো বই পাচ্ছে না অনেক শিক্ষার্থী; এখনি শুরু হচ্ছে না নিয়মিত ক্লাস

নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই এবার বড় ধরনের হোঁচট বা ধাক্কা লেগেছে। বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থী বই পাওয়ার কথা থাকলেও এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সাড়ে তিন কোটি বই এখনো ছাপার বাকি। ফলে ক্লাসে ফেরার অপেক্ষায় থাকা একটি বড় অঙ্কের শিক্ষার্থী এবার বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পায়নি। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে প্রকাশিত মাধ্যমিকের নতুন ক্লাস রুটিনে দেখা গেছে আগামী মার্চ পর্যন্ত (তিন মাস) সব শ্রেণীর ক্লাস পরীক্ষাও নিয়মিত হবে না। ফলে গতকাল বছরের প্রথম দিন থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও নতুন মলাটে মোড়ানো বইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে ক্লাসে ফেরার আনন্দও ফিকে হয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এ দিকে গতকাল থেকে সারা দেশে বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই বিতরণ শুরু হয়েছে। করোনার কারণে এবার বই উৎসব না হলেও শিক্ষার্থীদের ক্লাসভিত্তিক নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। কিন্তু ছাপা জটিলতার কারণে সব বই জেলা উপজেলায় পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় দেশের সব শিক্ষার্থী এবার বছরের শুরুতেই বই পাচ্ছে না।

অন্য দিকে অনেক উপজেলায় বই পৌঁছানো সম্ভব হলেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দফতর থেকে স্কুলপর্যায়ে সব বই বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। আবার সব বই ছাপা শেষ না হওয়ার কারণেও শিক্ষার্থীদের হাতে পুরো সেট বই দেয়া যায়নি। অনেক স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে পুরো সেটের কিছু বই দেয়া গেলেও বাকি বই পরে নিতে বলা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঢাকার কাছে সাভার উপজেলার অনেক স্কুলেও সব বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সাভার উপজেলার সব ক’টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। ফলে ৫ জানুয়ারির পরে স্কুলে এসে বই সংগ্রহ করতে শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে।

তবে বছরের প্রথম দিনেই দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার স্কুলে স্কুলে আংশিকভাবে নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে। বই উৎসব না হলেও এবার বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পেয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। বই হাতে পেয়ে তারা উচ্ছ্বসিত। তবে পুরোদমে ক্লাস শুরুর ঘোষণা না আসায় তারা ক্ষুব্ধ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বছরের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনার কারণে গতবারের মতো এবারাে উৎসব ছাড়াই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হচ্ছে। আর বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। এতে অভিভাবকরাও দারুণ খুশি।

আনন্দের সাথে বিষাদের খবরটিও শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের ব্যথিত করছে। সূত্র মতে, নতুন শিক্ষাবর্ষের সাড়ে তিন কোটি বই এখনো মুদ্রণ বাকি। এই অবস্থায়ই গতকাল শিশুদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখনো প্রায় ২০০টি ছাপাখানার মাধ্যমে বই ছাপানোর কাজ চলছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রাথমিকে ৯ কোটি ২৭ লাখ ৬২ হাজার ২৩২ এবং মাধ্যমিকে ২১ কোটি ৯২ লাখ ২০ হাজার ৫৫৫টি বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এই হিসাবে প্রাথমিকে ৭০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪২ এবং মাধ্যমিকে দুই কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার ৭০১টি বই সরবরাহ করা এখনো সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী মুদ্রণকারীরা মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত বই সরবরাহের সময় পান। কিন্তু সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে তারা এবার বেশ সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতায় বাকি কাজটুকুও লক্ষ্যমতো শেষ হবে বলে আশা করছি।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, এবারের শিক্ষাবর্ষে চার কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠ্যপুস্তক এবং ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সাল থেকে নতুন বছরের শুরুতে আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সারা দেশে একযোগে বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বই বিতরণ উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/633678