১৬ আগস্ট ২০২১, সোমবার, ৭:২৪

আইসিডিতে কনটেইনার স্থানান্তরে মানা হচ্ছে না নির্দেশনা

কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্কায়ন করতে গিয়ে ঠিকমতো কনটেইনার খুঁজে পাচ্ছেন না

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাইভেট আইসিডিতে আমদানি পণ্যের কনটেইনার স্থানান্তরে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। কনটেইনারের একটি চালানের কিছু নেওয়া হচ্ছে আইসিডিতে আবার কিছু ফেলে রাখা হচ্ছে বন্দরে। এ অবস্থায় পণ্যের শুল্কায়নে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্কায়ন করতে গিয়ে ঠিকমতো কনটেইনার খুঁজে পাচ্ছেন না। আমদানিকারকদেরও দৌড়াতে হচ্ছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে রাজস্ব আদায়। পণ্য ডেলিভারির গতিও যাচ্ছে কমে। কেননা শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই কনটেইনার ডেলিভারি নেওয়ার অনুমতি পান আমদানিকারকরা।

বিষয়টি নিয়ে কাস্টমসের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো চিঠিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। চিঠি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তারা যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণ করে বন্দর থেকে কনটেইনার নিয়ে যেতে আইসিডি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট আইসিডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বন্দরের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়। গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার স্বাক্ষরিত চিঠি বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সভাপতির কাছে পাঠানো হয়। বন্দরের পরিচালনা সংশ্লিষ্ট ও ব্যবহারকারী বিভিন্ন পক্ষকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, আমদানি করা একটি চালানের কিছু কনটেইনার আইসিডিতে এবং কিছু বন্দরে রেখে দেওয়া হচ্ছে। এতে ওই পণ্য চালানের পরীক্ষণ, শুল্কায়ন এবং খালাসে জটিলতা ও রাজস্ব ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে বলে কাস্টমস কমিশনার লিখিতভাবে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন। চিঠিতে একই পণ্য চালানের সব কনটেইনার একদিনে স্থানান্তরে আইসিডিগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, অন্যথায় উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট আইসিডির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিকডা সচিব রুহুল আমিন শিকদার বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘গত প্রায় ২০ দিনে আমরা আমদানি কনটেইনারের দেড় হাজার চালান হ্যান্ডেল করেছি। মাত্র তিনটি চালানে এমন হয়েছে। এটা বড় কিছু নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ এভাবে চিঠি না দিলেও পারত।’ গত কুরবানির ঈদের ছুটি এবং এর পরই শুরু হওয়া কঠোর লকডাউনে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার ডেলিভারি কমে যায়। ফলে বন্দরের অভ্যন্তরে বেড়ে যেতে থাকে কনটেইনারের সংখ্যা। একপর্যায়ে কনটেইনার জটের আশঙ্কা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর সব ধরনের আমদানি কনটেইনার শর্তসাপেক্ষে বন্দর থেকে আইসিডিতে স্থানান্তর এবং সেখান থেকে শুল্কায়ন শেষে ডেলিভারির সাময়িক অনুমতি দেয়। গত ২৫ জুলাই অনুমতি দেওয়ার পরদিনই বন্দর থেকে ১৯টি বেসরকারি আইসিডিতে সব ধরনের আমদানি কনটেইনার স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগে শুধু ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য প্রাইভেট আইসিডিতে নেওয়া এবং সেখান থেকে ডেলিভারি দেওয়ার অনুমতি ছিল। এ উদ্যোগের পর বন্দরে কনটেইনারের চাপ কমে এলেও প্রাইভেট আইসিডিগুলোতে বেড়ে যায়। ১০ হাজার ধারণক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে আইসিডিগুলোতে এর প্রায় দেড়গুণ আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, বন্দর থেকে আইসিডিতে আমদানি কনটেইনার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো একই বিল অব লেডিংয়ের (বিএল) অন্তর্ভুক্ত সব কনটেইনার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইসিডিতে স্থানান্তর করতে হবে এবং কোনো বিএল-এর অন্তর্ভুক্ত কনটেইনার বিভক্ত করা যাবে না। কিন্তু স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পর দেখা যায়, একই চালানের কিছু কনটেইনার বন্দরের ভেতরে রয়ে গেছে আর কিছু আইসিডিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, কোনো একটি চালানে একই আমদানিকারকের যদি ১০টি কনটেইনার আসে আর সেখান থেকে ১০টি আইসিডিতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বাকি ৫টি বন্দরে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে শুল্কায়ন-ডেলিভারিতে জটিলতা দেখা দেয়। ডকুমেন্ট নিয়ে তখন দুই জায়গায় দৌড়াতে হয়। এই সমস্যা যেন সামনে আর মোকাবিলা করতে না হয়, সেজন্য বিকডাকে চিঠি দিয়ে বন্দরের নির্দেশনা অনুযায়ী কনটেইনার স্থানান্তর করতে বলা হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/454286