২৫ জুন ২০২১, শুক্রবার, ১:১৭

পানিবন্দি ডিএনডির ২০ লাখ মানুষ

থৈ থৈ পানিতে চলছে নৌকা, চলছে পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্কি বাঁচাতে ইট-সিমেন্ট নিয়ে দিন-রাত বৃথা চেষ্টা।

কেউ বাড়ির আঙিনায় ‘ঝাঁকি জাল’ দিয়ে মাছ ধরছেন, অনেকে সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচতে বাড়ির চারপাশে লাগাচ্ছেন কারেন্ট জাল।

অনেকে ঘর-বাড়ি ছাড়ছেন ডাইংয়ের কেমিক্যাল মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত পানি থেকে বাঁচতে কিংবা পানিতে সুয়ারেজের লাইন ও রান্নাঘরের চুলা ডুবে যাওয়ার কারণে। ঘরে-বাইরে সব জায়গাতেই শুধু পানি, কোথাও কোমর সমান আবার কোথাও শোয়ার ঘরের খাট ছুঁই ছুঁই।

সেখানে বাথরুম ডুবে থাকার কথা যেন বলাই বাহুল্য। সেই সঙ্গে ডুবে আছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাঘাট, মসজিদ-মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ। এমন চিত্র প্রায় ২০ লাখ মানুষের আবাসস্থল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অভ্যন্তরে।

কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় এখানকার বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। এই অসহনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে একদিকে চলছে হাহাকার, অন্যদিকে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। ডিএনডির জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। তারপরও কেন এই দুর্ভোগ, এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বাসিন্দারা।

জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর ডিপিডিসির রশি টানাটানি আর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরদারির অভাবেই ভোগান্তিতে পড়েছেন ডিএনডিবাসী।

গত বছরও জুনের মাঝামাঝি ভারি বর্ষণে ডিএনডি এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েন বাসিন্দারা। ওই সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুরোধে ডিএনডি মেগা প্রকল্পের দয়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর ১৯ ইসিবির কর্মকর্তারা সেকেন্ডে ৪ হাজার লিটার পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি শক্তিশালী পাম্প চালু করে পানি নিষ্কাশন শুরু করেন।

মূলত, মেগা প্রকল্পের আওতায় যে ৭টি পাম্প ক্রয় করা হয়েছিল সেগুলো স্বয়ংক্রিয় হলেও পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে গত বছরের ১৯ জুন ম্যানুয়ালি জেনারেটর চালু করা হয়। এক সপ্তাহের মধ্যেই ডিএনডির বাসিন্দারা পানিবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পান। চলতি বছর সেই শক্তিশালী পাম্প দুটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরোনো একটি ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সাহায্যে চলমান রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পে কর্মরত এক সদস্য বলেন, এ বছর টানা বর্ষণে পানির পরিমাণ অনেক বেশি। পুরোনো ট্রান্সফরমারের পাশাপাশি আমরা একটি ট্রান্সফরমার ভাড়ায় এনেছিলাম জলাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে। পুরোপুরি বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে আমরা ৭টির মধ্যে কমপক্ষে ৫টি পাম্প এখনই চালু করতে পারি।

কিন্তু ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ স্থায়ীভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ না নেওয়া পর্যন্ত সেই সুযোগ দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। আমরা লাখ লাখ মানুষের দুর্দশার বিষয়টি সামনে এনে অন্তত ২ সপ্তাহের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ চাইলেও তারা সেটি মানেনি। এতে ওই ট্রান্সফরমারটি আমাদের ফেরত দিতে হয়েছে।

ডিএনডি এলাকার সিংহভাগ এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় বদ্ধ পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। শিমরাইলের পাম্প হাউজের পুরোনো ৪টি পাম্পের মধ্যে ৩টি পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। একটি পাম্প দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট রয়েছে।

ডিএনডি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পানি নিষ্কাশনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো নিষ্কাশনের শাখা খালগুলো সংস্কার করার পর আবার ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরে ফেলা। অনেক স্থানে আমরা খাল পুনরুদ্ধার করেছি, নতুন খাল খনন করেছি।

কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলো আবার ময়লা দিয়ে স্থানীয় লোকজন ভরে ফেলেন। তিনি আরও বলেন, ডিএনডি প্রকল্পের আওতাধীন ডিএনডির নিজস্ব জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৪০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক আইনি জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি তিতাস, ডিপিডিসিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনগুলোও সরানো হয়নি, এতে আমরা অনেক স্থানেই অবকাঠামোর কাজ করতে পারছি না।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, অর্থ সংকটে পড়েছে ডিএনডির এই মেগা প্রকল্পটি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ প্রকল্প বাবদ ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হলেও ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এতে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা থাকলেও অর্থ সংকটে অধিকাংশ চলমান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কার্যক্রম চলাকালীন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪১.৫৫ শতাংশ। প্রকল্পে সম্পাদিত ১০ শতাংশ কাজের বিল যার অর্থমূল্য ১১৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা এখনো পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/435448