২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ১২:৫০

বৃষ্টি হলেই ঢাকায় ভোগান্তি

নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা

রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা নিরসনে মন্ত্রী মেয়ররা আশার বাণী শোনালেও বাস্তবে তার কোনো প্রমাণ মিলছে না। বরং নগরবাসীকে চিরচেনা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ কারণে বৃষ্টি হলেই দুশ্চিন্তা ভর করছে নগরবাসীর মনে। না জানি বাইরে বের হলেই কী ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, মন্ত্রী মেয়ররা বিভিন্ন সময় আশার বাণী শোনালেও বৃষ্টি হলেই আমাদের ঠিকই কাদাপানিতে হাবুডুবু খেতে হয়। এদিকে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজধানীতে ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এরপর দুপুরের দিকেও রাজধানীতে আরেক দফা বৃষ্টিপাত হয়। সব মিলিয়ে গতকাল সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ২৪ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। আর এতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে। বৃষ্টিতে ঢাকার অনেক রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। মিরপুর, কাজিপাড়া ও শেওড়াপাড়া, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, কাকরাইল, শান্তিনগর, নাইটিঙ্গেল মোড় এবং বিজয়নগর এলাকায় বৃষ্টির কারণে অফিসগামীরা ভোগান্তিতে পড়ে।
একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানীর মধ্য বাড্ডার পোস্ট অফিস এলাকার অলিগলি এমনকি প্রধান রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় এলাকাবাসীকে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রগতি সরণি হয়ে মধ্য বাড্ডার পোস্ট অফিসে ঢুকতেই দেখা যায়, রাস্তায় হাঁটুপানি জমে আছে। ফলে রাস্তার দুই পাশ দিয়ে কর্মজীবী মানুষের বেশির ভাগই হাঁটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে রাস্তার প্রধান সড়কে আসছে কিংবা বাসায় যাচ্ছে। আবার অনেকে কাপড় ভিজিয়েই আসা-যাওয়া করছে। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল কিংবা বাইসাইকেলে করে যারা চলাচল করছে, তাদের কাপড়ও হাঁটু পর্যন্ত ভিজে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তায় চলাচলের সময় ইঞ্জিনের ভেতরে পানি ঢুকে সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি প্রাইভেট কারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার দুই পাশের দোকানেও পানি ঢুকে গেছে। এ অবস্থায় চলাচলের জন্য অনেকেই বেছে নিচ্ছে রিকশা। তবে কেউ রিকশায় যেতে চাইলে ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ।
পূর্ব বাড্ডার বাসিন্দা নূর হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেই পোস্ট অফিস গলির রাস্তাটিতে পানি জমে যায়। হেঁটে যেতে খুব কষ্ট হয়। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত আছে। রিকশায় ২০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা ছাড়া যায় না। আমরা বিপদে আছি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সময় মন্ত্রী মেয়ররা নানা প্রতিশ্রুতি দেন, আশার বাণী শোনান। কিন্তু বাস্তবে আমরা তার কোনো সুফল পাই না। বৃষ্টি হলেই মানুষকে পানিতে হাবুডুবু খেতে হয়। আরেক বাসিন্দা জুয়েল হোসেন বলেন, এখানে পানি জমে থাকায় মানুষের ভোগান্তি হয়, মানুষ গালাগাল করে। ভেতরের দিকে রাস্তার অবস্থা আরো খারাপ। সেগুলো থেকে ময়লাযুক্ত পানি বের হচ্ছে। সেই সাথে দুর্গন্ধও। ফলে এসব গলি দিয়ে মানুষের চলাচল করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
যানজটের ভোগান্তি : গতকাল বৃষ্টির পর দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকার সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র যানজটের কারণে গণপরিবহন সামনে এগোচ্ছে না। এক মিনিট চললেও তা আবার থেমে যাচ্ছে। আবার গণপরিবহন পেতেও ঝামেলায় পড়তে হয়েছে অনেককে। বাস চালক, হেলপার ও সাধারণ মানুষের ভাষ্য, শহরে এমনিতে যানজট থাকে। তার ওপর সকাল থেকে টানা বৃষ্টি দুর্ভোগের পরিমাণটা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ফার্মগেটে সুমন হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেক রাস্তায় পানি জমে আছে। এতে বাসগুলোও আটকে আছে। ফলে কিছুটা বাস সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এখন সময়মতো অফিসে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কায় আছি। ইকবাল করিম নামে আরেকজন বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে বাস পেতেই খুব ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট আসতে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। এদিকে কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারার সামনে বাসের জন্য অপেক্ষারত এক যাত্রী জানান, আধঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত বাসের দেখা মিলছে না। শিকড় পরিবহনের চালক ইদ্রিস বলেন, সায়দাবাদ থেকে কাওরান বাজার আসতে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লাগছে। বৃষ্টি, বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা এক সাথে হওয়ার কারণে এমন দুর্ভোগ। ফকিরাপুল এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। ফকিরাপুল মোড়ের চারদিকের সড়কেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। সিএনজি চালক রুবেল হোসেন বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টি। নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, রাজারবাগ এলাকায় পানি জমে গেছে। রাস্তায় বাসও কম। এখনো অনেক গাড়ি তো বেরও হয়নি। তবুও দেখেন রাস্তায় জ্যাম, গাড়ি চলছে না।
নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা : বর্ষার শুরু থেকেই রাজধানীতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে রাজধানীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মান্ডা, দক্ষিণগাঁও, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, গেন্ডারিয়া, পোস্তাগোলাসহ বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় নৌকায় মাছ ধরতে দেখা গেছে এলাকাবাসীকে।
ডিএনসিসি মেয়র : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো: আতিকুল ইসলাম বলেছেন, সবার আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই প্রবল বৃষ্টিপাতেও জলজটের ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে। গতকাল দিনভর প্রবল বৃষ্টিপাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন অন্যান্য বছর সামান্য বৃষ্টিতেই ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট ডুবে যেত, জলজটে নগরবাসীকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হতো। কিন্তু এবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতেও নগরবাসীকে জলজট সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, আজ (গতকাল) ২৫ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলেও নৌবাহিনী সদর দফতর প্রধান সড়ক, গলফ হাইট প্রধান সড়ক, সেতু ভবন প্রধান সড়ক, নাখাল পাড়া, কালাচাঁদপুর, বারিধারা, বেগম রোকেয়া সরণি, কচুক্ষেত, আনসার ক্যাম্প-দারুস সালাম রোড, মগবাজার, বেপারি পাড়া, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরসহ ডিএনসিসির প্রায় সব এলাকায় জলজট মুক্ত ছিল। মেয়র বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ডিএনসিসি কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় খাল উদ্ধার ও পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, জনগণের সহায়তায় তা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকাকে দখল, দূষণ ও দুষ্ট লোকের কবল থেকে মুক্ত করে সবার বাসযোগ্য একটি সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকায় রূপান্তরিত করতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/590038/