২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ১২:৪৭

ভারত থেকে ৩৪ টাকা কেজিতে কেনা হচ্ছে ১৬৯ কোটি টাকার চাল

৩৪ টাকা কেজি দরে ভারত থেকে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল কিনছে সরকার। বাসমতি বা সিদ্ধ এই চাল প্রতি মেট্রিক টন কিনতে খরচ পড়বে ৩৯৯.৯০ ডলার। এই হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল কিনতে বাংলাদেশী টাকায় প্রয়োজন পড়বে ১৬৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। খাদ্য মন্ত্রণালয় এই চাল আমদানি করছে।
এদিকে খাদ্য অধিদফতরের গত ১৭ জুনের দৈনিক প্রতিবেদন অনুসারে দেশে চাল মজুদের পরিমাণ ৯.৩৯ লাখ মেট্রিক টন ও গম ছিল ৩.০৬ লাখ মেট্রিক টন। চাল-গম মিলিয়ে মজুদ ১২.৪৫ লাখ মেট্রিক টন। সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুদ সুসংহত রাখার স্বার্থে প্রস্তাবিত পরিমাণ চাল ক্রয় করা অত্যাবশ্যক বলে খাদ্য অধিদফতর উল্লেখ করেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ধান ও চাল সংগ্রহের অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা মজুদ সুসংহত করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি ও জি টু জি পদ্ধতিতে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬.২৫ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। এর আগে গত ৩ মার্চ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ৫.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। তার মধ্যে ২.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় খাদ্য অধিদফতর ৩ জুন আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কিনতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৯টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে পাঁচটি। দাখিল করা দরপত্রে ভারতের রায়পুর ভিত্তিক মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৯৯.৯০ ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। অন্য চারটি দরদাতার মধ্যে ভারতের কলকাতা ভিত্তিক মেসার্স সৌভিক এক্সপোর্টারস লিমিটেড প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৪০৩.০০ ডলার উল্লেখ করে দ্বিতীয়, মেসার্স ইটিসি অ্যাগ্রো প্রসেসিং (ইন্ডিয়া) ৪০৫.০০ ডলার হিসেবে তৃতীয়, মেসার্স কেআরবিএল লিমিটেড ৪১৯.০০ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে চতুর্থ এবং মেসার্স হেমরাজ ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৪২৭.২৮ ডলার উল্লেখ করে পঞ্চম স্থান অধিকার করে। দরপত্রে এই চাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৬০ শতাংশ এবং মংলা বন্দর দিয়ে ৪০ শতাংশ আমদানি করার জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত বিদেশ থেকে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে আগমনের পর পণ্য খালাসের আগেই দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, খাদ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা প্রথমে খাদ্য অধিদফতরের চট্টগ্রাম ও খুলনাস্থ পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় এবং পরে সংগৃহীত নমুনা কম্পোজিট করে এক প্যাকেট পরীক্ষার জন্য খাদ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়। খাদ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। দরপত্রে উল্লিখিত বিনির্দেশের কোনো প্যারামিটারের সাথে পণ্যের প্রাপ্ত গুণগত মান নিম্নমানের হলে পুরো চাল প্রত্যাখ্যান করার বিধান রয়েছে।
সূত্র জানায়, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য দরদাতা ঘোষণা করে। দাখিলকৃত দরপত্রগুলো মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের উদ্ধৃত দর প্রতি মেট্রিক টন ৩৯৯.৯০ ডলার যা ভারতের পশ্চিম উপকূল, পূর্ব উপকূল, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের চালের প্রাক্কলিত দরের চেয়ে যথাক্রমে ১২.৪৭, ৭.৯৮, ৯৪.৮১ ও ১৭১.৯৫ ডলার কম হওয়ায় তা গ্রহণ করার সুপারিশ করে।
সূত্র জানায়, মহাপরিচালক, খাদ্য অধিদফতর দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করার জন্য পাঠিয়েছে। আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই সভায় চাল কেনার প্রস্তাবটি অনুমোদন পেতে পারে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/590017/