২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ১২:৪৬

শনাক্তে শীর্ষে ঢাকা মৃত্যুতে খুলনা

আরো ৭৬ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৪৮৪৬

দেশে করোনা সংক্রমণ আবারো বিপজ্জনক অবস্থানে যেতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে বিভাগওয়ারি শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ৮৪৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৯৬৭ জন। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ৯৯৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৬৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৩২ জন, রংপুর বিভাগে ২৫৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪৪ জন, সিলেট বিভাগে ১১৩ জন এবং বরিশাল বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ৭১ জন।
অন্য দিকে করোনায় মৃত্যুর দিক থেকে এখন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া ৭৬ জনের মধ্যে খুলনা বিভাগে মারা গেছেন ২৭ জন। এ ছাড়া ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগ ১৪ জন করে, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ জন, রংপুর বিভাগে ছয়জন, সিলেট বিভাগে তিনজন এবং বরিশাল বিভাগে দুইজন মারা গেছেন।
সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন আট লাখ ৬১ হাজার ১৫০ জন এবং মোট মারা গেছেন ১৩ হাজার ৭০২ জন।
গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯১ দশমিক ৫৫ শতাংশ আর শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা যাওয়া ৭৬ জনের মধ্যে পুরুষ ৪২ জন আর নারী ৩৪ জন। মৃতদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী আছেন ৩৭ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে আছেন ২৩ জন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে আটজন আর ২১-৩০ বছরের মধ্যে আছেন একজন। মৃতদের ৬২ জনই মারা গেছেন সরকারি হাসপাতালে, আর বেসরকারি হাসপাতালে ১০ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন চারজন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসে ও করোনা উপসর্গে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে তারা মারা যান। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মৃত ১৩ জনের মধ্যে পাঁচজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর আটজন ভর্তি ছিলেন করোনার উপসর্গ নিয়ে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ১২ জনই রাজশাহী জেলার। একজন নাটোরের।
এ দিকে ভারত সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে গত ১১ জুন থেকে চলছে বিশেষ ‘লকডাউন’। রাজশাহীর সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এরপরও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তবে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী দাবি করেছেন, হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা করোনা রোগীদের সেবায় যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে চার নারীসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে চার নারীসহ ছয়জন এবং বেসরকারি ক্লিনিকে দুইজন এবং করোনা আক্রান্ত একজন খুমেক হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় মারা যায়। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৬২ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অন্তত ২৮৩ জন। সামেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা এসব মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, কুষ্টিয়ায় করোনা সংক্রমণের হার না কমলেও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন করোনা রোগী মারা গেছেন। এর আগের দু’দিনে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে জেলায় করোনা সংক্রমণের হার আগের মতোই আছে। সোমবার রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩২৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬৪২২ জন।
এ দিকে জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় কারণে রোগী বেড়েছে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসাপাতালে। হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ৪১টি থেকে বাড়িয়ে ১০০টি করা হয়েছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যাসঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বগুড়া জেলা ছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ জেলায় করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে বগুড়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগীর কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় নতুন করে সরকারি মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ৫০টি বেড বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ দিকে বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় এক নারীসহ আরো তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। জেলায় সোমবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ১২ হাজার ৯৯২ জন এবং মোট মৃত্যু ৩৫৩ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৩৯৩ জন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। এ ছাড়া গবেষণায় ঢাকায় ৭১ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। তিন হাজার ২২০ জনের মধ্যে পাঁচ মাসের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বি এসব তথ্য জানায়।
এ দিকে চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও কমছে না আক্রান্তের সংখ্যা। এ দিন চট্টগ্রামে করোনার ৯৯০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হয়েছে ২২৬ জন। শনাক্তের হার শতকরা ২২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ৫৬ হাজার ৩৯৭ জন। একই সময়ে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০৩ জন। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫০.৮২ শতাংশ। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ জনে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে দুই হাজার ৭৩২ জন।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরো দু’জন মারা গেছেন। তাদের একজনের বাড়ি সখিপুরে এবং অপরজনের বাড়ি কালিহাতীতে। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হলো ১০১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২১ জনের দেহে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে। জেলায় শনাক্তের হার শতকরা ৩৬ দশমিক ১১ ভাগ।
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীতে দিন দিন বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাসের প্রকোপ। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরো ৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৩৭১ জনের নমুনা পরীক্ষায় এ ফল পাওয়া যায়। শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৩৬ জন। জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৯ জন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/590019/