২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ১২:৪৬

কাজে গতি না থাকলেও থেমে নেই ব্যয় বৃদ্ধি

কাজে গতি নেই। তারপরও থেমে নেই ব্যয় বৃদ্ধির কাজ। দশ বছরে ব্যয় বেড়েছে মাত্র ১১গুণ! ৩৯টি ব্রিজের মধ্যে নির্মাণকাজ চলছে ৩৬টির। ১৪৭টি কালভার্টের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৩৮টির। এখনো সর্ম্পর্ণ হয়নি ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। আর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভুক্ত দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের হাল অবস্থা। কবে শেষ হবে এই রেললাইন প্রকল্পের কাজ? তা বলতে পারছেন না কেউ। এই চিত্র গেল বছরের শেষের দিকের।
এডিবির অর্থায়নে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমার সীমান্ত সন্নিকট ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেলপথের মেগা প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। এরপর এক দশকেও প্রকল্পটির আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। ৬-৭ দফা সময় বাড়িয়ে বর্তমানে প্রকল্পটি সম্পন্নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুন। আর ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা থেকে সাত দফা ব্যয় বাড়িয়ে বর্তমানে প্রায় বিশ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। রেললাইন প্রকল্পটির সমাপ্তির সময় ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুন। তবে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকা ও নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারদের কাছে জমি হস্তান্তর না করায় প্রকল্প ব্যয় এবং সময় আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নানা কারণে গেল মার্চ পর্যন্ত অগ্রাধিকার ১০ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া মেগা প্রজেক্টগুলোকে নিয়ে সন্দেহ-সংশয় ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট হয়ে যাচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের ঝুঁকিতে রয়েছে ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্প। কাজ চলেছে ধীরগতিতে। যথাসময়ে শেষ করতে অনেক কাজই বাকি। চলতি অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মেগা এই প্রজেক্টগুলোকে প্রাধাণ্য দেয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনাও হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, সরকার লুটপাট করতেই মেগা প্রজেক্টগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রকল্পকে নির্ধারিত সময়ে শেষ না করে বারবার অর্থ ও সময় বাড়ানোকে এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেগা প্রজেক্টটাকে তারা টাকা বানানোর প্রজেক্ট বলেও মনে করেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেগা প্রকল্প নিয়ে একটি মহল মিথ্যাচার করছে। তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সহ্য করতে পারছে না।
দেশের মেগা প্রকল্পে এখন গণলুট চলছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধবংস করছে, লুট করছে। তারা দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। মেগা প্রজেক্টে গণলুট চলছে এখন। এভাবে মেগা প্রজেক্টটাকে তারা টাকা বানানোর প্রজেক্ট হিসেবে তৈরি করে নিয়েছে। কিচ্ছু হয় না আপনার লুট ছাড়া। আপনার ১০ হাজার কোটির টাকার একটা প্রজেক্ট হয়ে যায় ৪০ হাজার ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং এই ৪০/৫০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নিজেদের সময় দেশে একটি মেগা প্রকল্প করার সাহস ও সক্ষমতা দেখাতে পারেনি, তারাই আজ মেগা প্রকল্প নিয়ে মেগা মিথ্যাচারে নেমেছে। এটা তাদের পরিকল্পিত অপচেষ্টা। মেগা প্রকল্পকে সরকার টাকা বানানোর প্রজেক্ট হিসাবে নিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা তার প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ব্যর্থ এক বিরোধীদলের ঈর্ষাকাতরতা ছাড়া কিছু নয়। বিএনপি সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম দেখে নিজেদের আমলের ব্যর্থতা ঢাকতে পরিকল্পিত মিথ্যাচার করছে। তিনি বলেন, বিএনপি উন্নয়ন বিমুখ কথা বলা সর্বস্ব রাজনৈতিক দল। তাদের সময় বড় প্রকল্প নেওয়ার মানসিক সাহস ও সক্ষমতা ছিল না। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে। এ সময় যে কয়টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে- সেখানে কোনো দুর্নীতি হলে কাল্পনিক অভিযোগ না করে সুস্পষ্ট প্রমাণ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ১২ বছর আগের বাংলাদেশ ও আজকের বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অর্জনে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
সূত্র মতে, বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে মেগা প্রকল্পগুলো। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দ্রুত এগিয়ে যাওয়া প্রকল্পগুলোতে বড় অঙ্ক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে। নতুন অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে টাকার অঙ্কে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। পদ্মাসেতুতেও বরাদ্দ বেড়েছে গেল বছরের তুলনায়। বরাদ্দ বেড়েছে কর্ণফুলী নদীতে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণ প্রকল্পেও। যমুনা নদীতে রেলসেতু নির্মাণও বরাদ্দ পেয়েছে গতবারের চেয়ে বেশি। জোর দেয়া হয়েছে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প মাতারবাড়িতেও। এ ছাড়া মেট্টোরেল প্রকল্পে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার পাশাপাশি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। প্রকল্পকে পূর্ণ অবয়ব দিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের আনুষঙ্গিক কাজেও।
জানা গেছে, সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা মেগা ৮ প্রকল্পে গত ফেব্রুয়ারি গড় অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই প্রকল্পগুলোতে এই সময় পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৫৩৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রকল্পগুলো হলো পদ্মাসেতু, মেট্টোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু-মায়ানমারের কাছাকাছি ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। এখন আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে প্রকল্পটির মেয়াদ। ফলে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৪ হাজার ৫৪৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। পুরো প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িছে ৮৪ দশমিক ৫০ শতাংশে। তবে মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৯২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনে যানচলাচলের সেতুটি জন্য খুলে দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
কয়েকদফা বাড়িয়ে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এগিয়ে চলছে মেট্টোরেলের কাজ। ২০১২ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। শুরু থেকে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৭০৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে এ বছরের মধ্যেই মেট্টোরেলের একটি অংশ চালুর পরিকল্পনা থাকলেও সেটি আগামী জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
মেট্টোরেল পরিচালনায় গঠিত ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এন সিদ্দিকী বলেন, আমাদের আশা ও প্রচেষ্টা ছিল চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা প্রকল্পটির উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ করে ট্টেন চলাচল শুরু করতে পারব। কিন্তু নানা কারণে সেটি আরও ছয় মাস পেছানো হয়েছে।
এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৬ হাজার ৭১০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। সার্বিক ও আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৬ শতাংশে। প্রকল্পটি যথাসময়ে ও বর্তমান অর্থে শেষ করা নিয়ে সন্দেহ আছে।
৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি। এটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ৩৯ দশমিক ০৩ শতাংশ। এটিও যথাসময়ে শেষ হবেনা বলে জানা গেছে। তাই প্রকল্প খরচও বাড়বে।
৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে প্রকল্পটির। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৬৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এখনো অনেক কাজ বাকি। যথা সময়ে কাজ শেষ হবেনা এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি ২০০৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ১০৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ০৭ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৩ দশমিক ১৫ শতাংশে।
তিন হাজার ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধা উন্নয়নের প্রকল্প। ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে কাজ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৭৩১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ভৌত অগ্রগতি ৬২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু-মিনমারের নিকটে ঘুনধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের জুলাই থেকে। ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৩৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫১ শতাংশ, আর্থিক অগ্রগতি ২৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এটির কাজও যথাসময়ে শেষ হবেনা বলে জানা গেছে।
সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা প্রকল্পগুলো নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের প্রকল্প। এগুলোর বাস্তবায়ন যেন কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা আমাদের রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও প্রকল্পগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়া সম্ভব। আশা করছি সেভাবেই কাজ হবে। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে যারা কাজ করবেন তাদের জন্য যেমন থাকবে পুরস্কারের ব্যবস্থা, তেমনি যারা কাজ করবেন না তাদের জন্যও থাকবে তিরস্কার। দুটিই সমান তালে থাকবে। মেগা প্রকল্পগুলোর সঙ্গে অনেক অর্থ, প্রযুক্তি ও মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত।
জানা গেছে, করোনার ক্ষতি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অগ্রাধিকারভিত্তিক বড় বা মেগা প্রকল্প বড় ধরনের সহায়ক হতে পারে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়লে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ প্রত্যাশা থেকে ১০টি মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করতে চায় সরকার। এ উদ্দেশ্যে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বার্ষিক উন্নম্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) এক হাজার ৫১৫টি প্রকল্পের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ বরাদ্দই দেয়া হয়েছে এই ১০ প্রকল্পে।
দশ মেগার অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে। প্রাথমিক শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪) দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। বড় বরাদ্দের দিক থেকে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট বা মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পেয়েছে ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক প্রকল্পে ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ২ হাজার ৮২৯ কেটি টাকা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, মেগা প্রকল্প দ্রুত শেষ করা গেলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মূল্য সংযোজন হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। করোনার ক্ষয়ক্ষতি থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করবে। আবার এসব মেগা প্রকল্প দ্রুত শেষ করা না গেলে মেগা হারেই ব্যয় বাড়বে। উদাহরণ হিসেবে পদ্মা সেতুর কথা বলেন তিনি। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দাঁড়িয়ে গেছে। বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

https://dailysangram.com/post/456403