২৩ জুন ২০২১, বুধবার, ১২:৪৬

শিক্ষা, শিক্ষক ও চৌর্যবৃত্তি

ভিন্ন আঙ্গিকের শিরোনাম দিয়েই আজকের লেখা শুরু করছি। এ জন্যই ভিন্ন আঙ্গিক বলছি যে, শিক্ষা ও শিক্ষক পরস্পর সম্পূরক হলেও চৌর্যবৃত্তির সাথে তা মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যেখানে ‘শিক্ষা ও শিক্ষক’-এর অনুষঙ্গ থাকে সেখানে চৌর্যবৃত্তি কথাটা শুধু বেমানানই নয় বরং অনভিপ্রেতও। এ ধারণায় সর্বসাধারণের মধ্যে বদ্ধমূল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে অবস্থার বড় ধরনের বিচ্যুতি ঘটতে শুরু করেছে। এমনকি ‘শিক্ষা, শিক্ষক ও চৌর্যবৃত্তি’ একাকার হওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ইদানিং। যা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য মোটেই সুসংবাদ নয়।
মূলত, অভিযোগটা এসেছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকেই। একজন বরেণ্য কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ডাকাতদের গ্রাম’ আখ্যা দিয়েছিলেন; এখন তার সাথে চৌর্যবৃত্তিতে অভয়ারণ্যে হওয়ার অভিযোগ যোগ হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একেবারে আমছালা সবই যাওয়ার উপক্রম হয়েছে দেশের শীর্ষ এই বিদ্যাপিঠের। আর সে অভিযোগকে আরও মজবুত ভিত্তি দিয়েছে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা গবেষণায় প্লেজারিজমের অভিযোগে শিক্ষকদের শাস্তির দেয়ার মাধ্যমে। যা আমাদের উচ্চশিক্ষা ও জাতির গন্তব্যকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
দুর্ভাগ্য আমাদের এখানেই শেষ নয়। যে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তি দেয়া হয়েছে, সেই তদন্ত কমিটির একজন সদস্যের বিরুদ্ধেও উঠেছে গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির মত গুরুতর অভিযোগ। তিনি প্লেজারিজমের বিরুদ্ধে সবসময় উচ্চকন্ঠ ছিলেন। যা সর্ষের মধ্যে ভূত হিসাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরও একজন সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণায় নয়ছয়ের অভিযোগ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাবমূর্তি সংকটে ফেলে দিয়েছে। অভিযোগগুলো কতখানি সত্য তা যথাযথ কর্তৃপক্ষই সুরাহা করবেন। তবে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ কোন শুভ লক্ষণ নয়।
যেহেতু উল্লেখিত অভিযোগগুলো শিক্ষা ও শিক্ষকের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাই মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে শিক্ষা সম্পর্কে অতিসংক্ষিপ্ত ধারণা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। কারণ, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন কতখানি ঘটছে বা শিক্ষার উদ্দেশ্য কতখানি সফল হচ্ছে সে বিষয়টিও উপেক্ষা করার মত নয়। সঙ্গত কারণেই এই অনাকাক্সিক্ষত আলাচনার অবতারণার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে।
বস্তুত, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ও সামাজিক উন্নয়নের শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। সাধারণভাবে বলা হয়, শিক্ষা হলো কোনো কিছু জানা বা বিশেষ কোনো কিছুর ওপর জ্ঞান অর্জন বা দক্ষতা অর্জন। আর শিক্ষা হচ্ছে একটি পদ্ধতিগত ও জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। যা ব্যক্তির মেধা, মনন ও মনীষা বিকাশে অপরিহার্য অনুষঙ্গ। শিক্ষার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করে। বাংলা ‘শিক্ষা’ শব্দটি এসেছে ‍‘শাস’ ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘এডুকেশন’ এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘এডুকেয়ার’ বা ‘এডুকাতুম’ থেকে। যার অর্থ বের করে আনা অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা বা বিকশিত করা। আর এ প্রক্রিয়ার অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো শিক্ষক; যারা মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করে ব্যক্তিকে মহিরূহতুল্য হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
এখানে শিক্ষা সম্পর্কে মনীষীদের বক্তব্যও স্মরণযোগ্য। সক্রেটিসের ভাষায় ‘শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ।’ দার্শনিক এরিস্টটল মনে করেন, ‘সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে।’ মূলত শিক্ষা মানুষকে পরিশীলিত করে এবং আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার দিকনির্দেশনা দেয়। আর এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকরা। তাই শিক্ষকদের হতে হয় অনুসরণীয়, অনুকরণীয়, আর্দশবান ও সত্যনিষ্ঠ।
আর শিক্ষাদানের মহান ব্রত নিয়ে যিনি কাজ করেন তিনিই শিক্ষক। স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিতদেরই শিক্ষক বলা হয়। অনানুষ্ঠানিক ও গৃহশিক্ষার সাথে যারা জড়িত তারাও শিক্ষক। মূলত, শিক্ষকসমাজ জাতি গঠনের কারিগর ও সম্মুখযোদ্ধা। আর একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও ন্যায়ের দীক্ষা দিতে এবং তা যথাযথভাবে অনুশীলনে উদ্বুদ্ধ করতে। শিক্ষার্থীর মানবতাবোধ, সৃজনশীলতা ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানকে সার্থকই করে তোলেন না বরং দেশের উন্নয়নকে গতিশীল ও ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করেন। তারা স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। বস্তুত, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষাক সমাজ হচ্ছে শিক্ষার মেরুদণ্ড। তাই শিক্ষকতা হয়ে উঠেছে মহান পেশা এবং দেশ-জাতি গঠনে অপরিহার্য নিয়ামক। কিন্তু এমন মহান পেশায় নিয়োজিত কোন কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যখন চৌর্যবৃত্তিসহ নানাবিধ গুরুতর অভিযোগ যেটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক, অনাকাক্সিক্ষত ও অগ্রহণযোগ্য।
আর চৌর্যবৃত্তি একটি নিন্দনীয়, ঘৃণিত ও শাস্তিযোগ্য কাজ। যদিও স্থান, কাল, পাত্রভেদে এর রকমফের রয়েছে। আসলে চুরি বলতে চৌরকার্য, হরণ, আত্মসাৎকে বোঝানো হয়। অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ অতি সঙ্গোপনে নিজের করায়ত্বে নেয়া বা তা থেকে লাভবান হওয়ায় হচ্ছে চৌর্যকার্য বা চৌর্যবৃত্তি। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ধারায় চুরিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তবে সকল চুরির ধরন এক ও অভিন্ন নয়। আত্মসাৎ, অনিয়ম, ছলনা, কুক্ষিগতকরণ, অবৈধ দখলদারিত্ব, চাতুরী, জালিয়াতি, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গসহ আরও অনেক কিছুই চুরির স্থান-কাল-পাত্রভেদে ভিন্নতর রূপ। এমন সব অপরাধের সাথে শিক্ষকদের জড়িত হওয়ার অভিযোগ অতীতে খুব সীমিত পরিসরেই ছিল। কিন্তু হাল আমলে সে অবস্থার বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। ফলে একশ্রেণির মূল্যবোধহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন গর্হিত কাজের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিককালে এই মহতি পেশা নিয়ে নতুন নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। অবক্ষয়ের এই জয়জয়কারের সময়ে একশ্রেণির শিক্ষক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে পুরো পেশাকেই বিতর্কিত ও কলঙ্কিত করছেন। আর এর দায় নিতে হচ্ছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষকসমাজকে। সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অতীতের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে একশ্রণির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এমনকি দলবাজির অভিযোগ থেকেও তারা মুক্ত থাকতে পারছেন না। ফলে শিক্ষাঙ্গণে এখন রাজনৈতিক হানাহানী আগের তুলনায় বেড়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণহীন অনিয়মের কারণে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। একশ্রেণির শিক্ষকদের লাগামহীন শিক্ষাবাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধাগ্রহণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও অযোগ্য লোকদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত করার অভিযোগ ক্রমেই বাড়ছে। সে ধারাবাহিকতায় কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদায়ী ভিসি কর্তৃক গণনিয়োগের ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেও তা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে বড় ধরনের অনিয়মের দায় নিয়েই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। যা তার ব্যক্তিত্ব ও পদমর্যাদার সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।
একশ্রেণির শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের স্তূপ গড়ে ওঠেছে, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান প্লেজারিজমের অভিযোগ আমাদের উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষা গবেষণাকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সে ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের একজন সিনিয়র শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্লেজারিজমের অভিযোগ বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন সংগীতশিল্পী ইফফাত আরা নার্গিস। একইসাথে তিনি এ শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি ও নজরুল পদক বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। যা আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য কোন সুখবর নয়।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী দাবি করেছেন, ‘একজন সংগীতশিল্পী হয়ে সংগীত গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি আমাকে খুবই আহত করেছে। সংগীত বিষয়ে একজন শিক্ষকের রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক অপকর্ম আজ আমাকে বিষয়টি তুলে ধরতে বাধ্য করেছে। আমি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার চৌর্যবৃত্তি নিয়ে অভিযোগ তুলছি। তার মতো একজন পরিচিত শিল্পী ও শিক্ষক যখন চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন, তখন আমাদের কষ্ট হয়’।
অভিযোগকারীর বক্তব্য হচ্ছে, তিনি সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে লীনা তাপসী খানের নজরুল-সংগীতে রাগের ব্যবহার গ্রন্থটি সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু বইটি পাঠ করে তার এর আগে পাঠ করা তিন-চারটি গ্রন্থের সাথে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছেন’। প্রখ্যাত এই সঙ্গীত শিল্পি দাবি করেছেন, অনিয়মের ওপর ভিত্তি করে যদি তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচিত হয়ে থাকে তবে এ ডিগ্রি তদন্তপূর্বক বাতিল করা হোক। অভিযোগ সত্য হলে তার সে দাবি শুধু যৌক্তিকই নয় বরং আমাদের শিক্ষার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে খুবই প্রাসঙ্গিক।
অভিযোগ পর্যালোচনায় দাবি করা হয়েছে, ২৮০ পৃষ্ঠার গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। এই স্বরলিপির স্থান হতে পারতো গ্রন্থের পরিশিষ্টে। মূল পাঠে এই স্বরলিপি কোনোক্রমেই স্থান পাওয়ার কথা নয়। এটিও একধরনের চৌর্যবৃত্তি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেখা যাচ্ছে যে ২৮০ পৃষ্ঠার বইয়ের মধ্যে ৮০ (স্বরলিপি)। ২৬ (শ্যামপ্রসাদ) + ৪৬ (কাকলী) +১৭ (পরিশিষ্ট) = ১৬৯ পৃষ্ঠা গবেষক লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত হয়েছে। বাকি ১০১ পৃষ্ঠা লীনা তাপসীর খানের লেখা বলে দাবি করা হয়েছে। তার মধ্যে ইদরিস আলীর গ্রন্থ থেকেও নেয়া হয়েছে। অভিযোগটি খুবই গুরুতর ও অনাকাক্সিক্ষত। যা কোন শিক্ষকের শিক্ষকসুলভ আচরণ হতে পারে না।
কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তা সত্য মনে করার কোন সুযোগ নেই বরং যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি সত্য-মিথ্যা যাচাই করবেন। যেহেতু লীলা তাপসী খানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এখনও তদন্ত করা হয়নি। তাই তাকে দোষী বা নির্দোষ কোনটাই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমে তিনি যা বলেছেন, তা অভিযোগকে কিছুটা হলেও গতি দিয়েছে। তিনি অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার না করে বলেছেন, ‘আমি নিজে নিজে জালিয়াতি করে কোনো সার্টিফিকেট বের করিনি, আমার একটা বোর্ড ছিল, সুপারভাইজার ছিল’।
অভিযুক্ত লীনা তাপসীর এই বক্তব্য তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে না বা আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। কারণ, বোর্ড বা সুপারভাইরের বিরুদ্ধে কেউ যোগসাজসের অভিযোগ আনতেই পারেন। কারণ, তারাও মানুষ। তাই তাদেরকে মানবীয় দুর্বলতার উর্ধ্বে মনে করার কোন সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় অভিযোগের অসারতা প্রমাণ করতে হবে। এতে তিনি নিজেকে যেমন নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন, ঠিক তেমনিভাবে আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে অনাকাক্সিক্ষত প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে তা অপনোদন করা সম্ভব হবে। জাতি অভিযোগকারী, অভিযুক্ত ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।

https://dailysangram.com/post/456399