২৬ জুন ২০২১, শনিবার, ১:২৮

বেশি আক্রান্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশে টেস্ট সবচেয়ে কম

করোনাভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের দুই শতাধিক দেশের মধ্যে ৮,৭২,৯৩৫ শনাক্ত নিয়ে বাংলাদেশ এখন ৩০তম স্থানে অবস্থান করছে। ৯,৫২,৯০৭ শনাক্ত নিয়ে ২৯তম স্থানে অবস্থান করছে পাকিস্তান। করোনা শনাক্ত সংখ্যায় পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য এখন আশি হাজারেরও কম। দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ, প্রতিবেশী ভারত (৩,০১,৩৪,৪৪৫ শনাক্ত) সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত ৩০টি দেশের মধ্যে গড়ে প্রতি এক মিলিয়ন বা দশ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে সবচেয়ে কম টেস্ট করা হয়েছে বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বিশ্বের প্রথম ৬৪টি দেশের মধ্যেও সবচেয়ে কম টেস্ট করা হয়েছে বাংলাদেশে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (২৫শে জুন, বিকাল ৪টা) পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী প্রতি দশ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে বাংলাদেশে টেস্ট করা হয়েছে মাত্র ৩৮,৬৯৯টি। অন্যদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একজনের একাধিকবার টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ডেনমার্কে করা হয়েছে ১,১৪,৬৬,৩২০টি, অস্ট্রিয়াতে করা হয়েছে ৫৮,৩৪,৮২৬টি, আরব আমিরাতে ৫৬,০৪,৫০২টি, বাহ্‌রাইনে ২৮,২২,১০৬টি। যুক্তরাজ্যে করা হয়েছে ৩০,১৮,৪৪১টি এবং সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ১৫,০৮,৪৯০টি!

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে করা হয়েছে ২,৮৬,৭৮৪ টি টেস্ট যা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় সাড়ে সাত গুণ বেশি।

পাকিস্তানে ৬৩,৬৪৫ টি যা বাংলাদেশের চেয়ে দেড় গুণেরও অনেক বেশি। নেপালে ১,১১,৩৯৮ টি যা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।

ওদিকে মোট জনসংখ্যার বিপরীতে টেস্ট করানোর ক্ষেত্রের বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে যতো বেশি টেস্ট করা হবে, ততোই অধিক হারে করোনা রোগী শনাক্ত হবে। যা করোনার বিস্তাররোধ এবং মৃত্যুহার কমানোর জন্য অতীব প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।

এদিকে, বাংলাদেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় টেস্টের হার অনেক কম হলেও যে পরিমাণ টেস্ট করা হচ্ছে তাতে বিগত কয়েকদিনে দেশে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, অবিশ্বাস্য গতিতে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। গত ১৪-২০শে জুনের সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের ৪০টি জেলা অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে অভিমত দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ)। কিন্তু ২০শে জুনের পর সংক্রমণের মাত্রা আরো অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরবর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করবে আগামী ২৮ তারিখ।

ঈজওউঅ ঊঢ়রফবসরড়ষড়মু ঞবধস-এর একদল চিকিৎসক (ডা. কেএম তৌহিদুর রহমান, ডা. আয়শা আকতার, ডা. শাহরিয়ার রোজেন, ডা. নওরিন আহমেদ, ডা. নাজিফ মাহবুব, ডা. মামুনূর রহমান) সর্বশেষ (১৮-২৪শে জুন) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন দেশের ৫৯টি জেলা অতি উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি)। এদের মাঝে ৩৯টি জেলায় সংক্রমণের হার ভয়াবহ পর্যায়ে (সাপ্তাহিক শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি) রয়েছে।

দেশের বর্তমান ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কি জানতে চাইলে কানাডার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক ডা. শাহরিয়ার রোজেন মানবজমিনকে বলেন, গত কয়েকদিনে সংক্রমণ সারাদেশে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আঞ্চলিক পর্যায় থেকে জেলাভিত্তিক বিধি-নিষেধ না দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সারা দেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন আর কেবল সরকারের পক্ষ থেকে লকডাউন বা শাটডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, বরং সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে জনসাধারণকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=280494&cat=2