২৬ জুন ২০২১, শনিবার, ১:২৪

ঘাটে পৌঁছতে গুনতে হচ্ছে ৪ গুণ ভাড়া

ফেরিতে কেউ মানছে না নিষেধাজ্ঞা

শিমুলিয়া বাংলাবাজার ফেরিঘাটে যানবাহন আর যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না মানুষ। ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজনবোধ করছে না কেউ। গন্তব্যে পৌঁছতে বিকল্প পথে বিভিন্ন হালকা যানবাহন ব্যবহার করে ফেরি ঘাটে পৌঁছছে যাত্রীরা। সেই সাথে প্রাইভেট যানবাহন ব্যবহার হচ্ছে অধিকমাত্রায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে লকডাউন থেকে শাটডাউনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে মানুষের মধ্যে নিজ গন্তব্যে পৌঁছার তাড়না বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাতটি জেলার লকডাউন থাকলেও অন্য জেলাগুলো থেকে যানবাহনে ফেরি ঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে যাত্রীদের চারগুণ অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা মোটরসাইকেল, থ্রিহুইলার, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন হালকা যানবাহনে ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে আসে। ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আবার হালকা যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে। লকডাউনের চতুর্থ দিনেও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুট হয়ে যাত্রীদের ভিড় ছিল। এদিন সকাল থেকে এ রুটের ফেরিতে শিমুলিয়া থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের চাপ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রীদের ভিড় আরো বৃদ্ধি পায়। তবে বাংলাবাজার হয়ে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল সহনীয় পর্যায়ে। এদিনও ঘাট এলাকা বা ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি।

জানা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে যাত্রীদের চাপ শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যাত্রী চাপ আরো বৃদ্ধি পায়। তবে এদিন দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক বেশি। সে তুলনায় ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ ছিল সহনীয় পর্যায়। লঞ্চ বন্ধ থাকায় ফেরিতেই যাত্রীরা গাদাগাদি করে পদ্মা পাড়ি দেয়। ফলে ঘাট এলাকা বা ফেরিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি কোথাও। অনেককেই দেখা গেছে মাস্কবিহীন। দূরপাল্লা বা অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ থাকলেও বরিশাল, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে মোটরসাইকেল, থ্রিহুইলার, ইজিবাইকসহ হালকা যানবাহনে ৩-৪ গুণ ভাড়া গুনে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছে। ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলে বরিশালে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, গোপালগঞ্জ ৫০০ টাকা, খুলনা ৭০০ টাকা, মাদারীপুর ২০০ টাকা, বাগেরহাট ৬৫০ টাকাসহ প্রতিটি যানবাহনেই কয়েকগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহাসড়ক ও অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিলেও বিভিন্ন অজুহাতে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকের সাথে সাথে অন্যান্য ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ১৫টি ফেরি চালু থাকায় যাত্রী ও যানবাহনগুলোকে পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে থাকতে দেখা যায়নি।
বিআইডব্লিউটিসি বাংলাবাজার ঘাট সহকারী ম্যানেজার ভজনকুমার সাহা বলেন, ফেরিতে উভয় পাড় থেকেই যাত্রী চাপ রয়েছে। আমাদের সকল ফেরি চালু থাকায় পারাপারে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা যাত্রীদের বলা হলেও বেশির ভাগ যাত্রীই তা মানছে না। আর অনেকেতো মাক্সও ব্যবহার করছে না।

মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, লকডাউন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের ফেরিতে যাত্রী পারাপার কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শাটডাউন প্রস্তাবের কথা আলোচনা আসার পরেই বেড়েছে যাত্রী পারাপারের চাপ। শুক্রবার সকাল থেকে নৌরুটের ফেরিগুলোতে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলগামী উভয় মুখী প্রচুর যাত্রীকে পারাপার করতে দেখা যায়। সেই সাথে পারাপার হচ্ছে পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন।
বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, নৌরুটে বর্তমানে ১৪টি ফেরি সচল রয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারের কথা থাকলেও অসংখ্য যাত্রী ঘাটে আসছে পারাপারের জন্য।
বিআইডাব্লিউটিসি সুপার ভাইজার শাহাবুদ্দিন জানান, যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। শিমুলিয়াঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় শতাধিক বড় গাড়ি রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চার শতাধিক গাড়ি পার করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদরের ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ বজলুর রহমান জানান, আরো কয়েকটি চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। সিএনজি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শহরের মধ্যে চলাচলে চেকপোস্টের মাধ্যমে বাধা দেয়া হচ্ছে। কিছু অটোরিকশা আটক করা হয়েছে। উপজেলার সাথে যোগাযোগের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, নারায়ণগঞ্জ সাথে মুন্সীগঞ্জের লঞ্চ চলাচল প্রথম দিন থেকে বন্ধ রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/590785/