২৬ জুন ২০২১, শনিবার, ১:২৪

দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে দিশেহারা মানুষ

একটির পর একটি পণ্যের দাম বাড়ছেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে দিশেহারা মানুষ। অল্প আয়ের মানুষের দু’মুঠো ভাত খেতেই তাদের নূন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। নানা অজুহাতে একেক সময় একের পন্যের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আর একটি পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমছে না। সরকারের পক্ষ থেকেও নানা পদক্ষেপ নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে মাছ, গোশত ও সবজির দামে। এ ছাড়াও আটা, ময়দা, ডাল, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, এলাচ, সয়াবিন, মুরগি ও চিনি ও ডিমের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আবারও। তবে দেশি পেঁয়াজ আগের মতোই ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে যে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা, এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। আর যে পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ টাকা, এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। লকডাউন কড়াকড়ি হওয়ার খবরে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক সপ্তাহে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।

প্রতি কেজি গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। একইভাবে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকায়। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। এছাড়া ডিমের দামও বেড়েছে হালিপ্রতি ৫টাকা। এছাড়াও এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে অনেক সবজি পৌঁছাতে পারছে না। ফলে দাম বেড়েছে। তবে সরবরাহের সমস্যা না থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে, দাম বাড়লেও বাজারে কোনো সবজির কমতি নেই। আলু, পটল, করলা, টমেটো, শিম, লাউ, কাঁচা-পাকা মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালং শাক, লাউ শাক সবকিছুই বাজারে ভরপুর।

এদিকে দাম বেড়ে প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৮০ টাকা, কালো বেগুন ৯০ টাকা, সাদা সাদা/সবুজ বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি শশা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা এবং আলু ২৫-৩০ টাকায় এবং লাউ প্রতিপিস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঝিঙে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বিভিন্ন মুদিপণ্যের মধ্যেও বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। গত সপ্তাহে মসুর ডালের দাম ছিল ৮৫ টাকা কেজি। এই সপ্তাহে সেই মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম বেড়েছে তিন শতাংশের মতো। এদিকে হঠাৎ করেই বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা, আর খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহে এই ময়দার দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। আর আটার দাম বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।

সয়াবিন তেলের তেলেসমাতি এখনো থামেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে সয়াবিন তেলের দাম। ৫ লিটার বোতল সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে কয়েক দফায়। এই সপ্তাহে নতুন করে আবারও বেড়েছে। গত সপ্তাহে ৬৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া ৫ লিটার বোতল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০ টাকা।

রাজধানীর বাজারগুলোতে আদার দাম কেজিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি করা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। আর এক সপ্তাহ আগে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি আদার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। শুধু আদা নয়, দেশি হলুদের দামও বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে যে হলুদ ২০০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত, এখন সেই হলুদের দাম ২২০ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই হলুদের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ। কোরবানির ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে এলাচের দাম ততই বাড়ছে। এই সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে এই পণ্যটির দাম। গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে এলাচের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে তারা যে এলাচ ৩ হাজার ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এই সপ্তাহে সেই এলাচের দাম বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকা কেজি দরে। এখন সেই চিনি কেজিতে দুই টাকা বেড়ে ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গত সপ্তাহে দাম বাড়া আলু ও ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা। আর ফার্মের মুরগির ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। আগের মতোই দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

https://dailysangram.com/post/456688