২৬ জুন ২০২১, শনিবার, ১:০৯

আলোর আগমনে আঁধার দূর হবেই

পৃথিবী হচ্ছে এমনই একটি জগত, যেখানে আলো আর আঁধার একসঙ্গে থাকে না। পৃথিবীর পথপরিক্রমায় সূর্যের আলো আড়াল হয় বা ঢাকা পড়ে বটে। কিন্তু আবার ঘন আঁধার কেটেও যায়। সূর্যের আলো সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে। অন্ধকার ঠেলে দেয় অনেক দূর। আলোয় আলোয় ভরাট হয় পৃথিবী। এ হচ্ছে প্রকৃতির চিরায়ত বা অমোঘ নিয়ম।

পৃথিবীর কোনও অংশে অন্ধকার স্থায়ী হলে সেখানে কোনও কিছু বেঁচে থাকতে পারে না। ঘনকালো আঁধারে তলিয়ে যায় জীবজন্তু, গাছপালা, পাহাড়পর্বত, নদীনালা, বনজঙ্গল সবকিছু। আলোর স্থায়ী অনুপস্থিতি পৃথিবীর কোনও অংশকে ব্ল্যাকহোলে রূপান্তর করতে পারে সহজেই। তাই আলোর উপস্থিতি পৃথিবীতে অনিবার্য। আলোর আরেক নাম জীবন। এর অভাব হলে সবকিছু অচল হয়ে পড়ে। স্থবির হয়ে যায় সৃষ্টিজগত।

দীন ইসলাম হচ্ছে একটি অনিবার্য আলোর নাম। এ আলোর সন্ধান যারা পেয়েছেন তাঁরা যেমন সোনা হয়েছেন। অন্যদেরও সোনায় রূপান্তর করেছেন। আর সমগ্র পৃথিবীকেও তাঁরা সোনার আলোয় ভরাট করতে চেয়েছেন।

ওমর ফারুক ত্রিপুরা নিজে যেমন আলোর সন্ধান পেয়েছিলেন, তেমনই এলাকাবাসীকেও তিনি চেয়েছিলেন সত্য ও সুন্দরের আলোয় উদ্ভাসিত করতে। অনেককেই তিনি আলোকিত করেছেন। কিন্তু তারা সেটা হতে দিল না। আলোর ঝলকানি তাঁরা সহ্য করতে পারেনি। তাদের চোখে আঁধি সৃষ্টি হয়েছে। ওমর ফারুক তাদের মগজ বিগড়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ওমর ফারুক ত্রিপুরা ছিলেন বান্দরবানের তুলাছড়ি পাহাড়ের অধিবাসী। পাহাড়ে বিশুদ্ধ আকিদাপন্থী ইসলাম প্রচারক বা মুবাল্লিগ। তিনি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক সালাফদের আদর্শ অনুসরণে দীন ইসলামের দাওয়াতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছিলেন বান্দরবানের তুলাছড়ি পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের মাঝে। আর এতেই সৃষ্টি হয় তাঁর কিছু শত্রু। আর সেই শত্রু-সন্ত্রাসীদের হাতেই নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে। তাঁকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। আল্লাহ পবিত্র দীনের জন্য এ খাদিমকে কবুল করুন। আর দীনের জন্য, দীনের কারণে, দীনের প্রয়োজনে তাঁর এ শাহাদাতকে কবুল করুন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

বিভিন্ন উৎসের তথ্য থেকে জানা যায়, নওমুসলিম ওমর ফারুক গত ২০১৫ সালে ইসলামগ্রহণ করেন। আর তিনি বিশুদ্ধ আকিদায় কুরআন আর সহীহ হাদীসের আলোকে শিরক-বিদাতমুক্ত আমল-ইবাদাতের দাওয়াত দিয়ে বান্দরবানের তুলাছড়ির জনগণের মাঝে বিপুল সাড়া ফেলেন। আর পাহাড়ে প্রচারিত হতে থাকে মদিনার নির্ভেজাল ইসলামের বিশুদ্ধ আকিদা আর সহীহ সুন্নাহ। আর এ জন্যই বিভিন্ন ধর্মীয়গোষ্ঠীর রোষানলের শিকার হন ওমর ফারুক ত্রিপুরা। তিনি ত্রিপুরা উপজাতির মানুষ ছিলেন। তিনি নিজে যেমন ইসলামগ্রহণ করেছেন, তেমনই তিনি ঐ এলাকার ৩০টি অমুসলিম পরিবারকে পবিত্র ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আলোর পথে এনেছেন। তাদের মুসলিম বানানোর মাধ্যমে পাহাড়ে আলোর বন্যা বইয়েছেন। বান্দরবানের তুলাছড়ি পাহাড়ের এ মুসলিম অধিবাসীদের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণে তিনি নিজের জমি দান করেছেন। বান্দরবানের তুলাছড়ি পাহাড় এলাকায় এটি সর্বপ্রথম মসজিদ।

ওমর ফারুকের নির্ভেজাল দাওয়াতের ফলে এলাকার অমুসলিমরা ইসলাম কবুল করাতে অনেকেরই তিনি চক্ষুশূলে পরিণত হন।

বলে রাখা ভালো, ওখানকার মিশনারিদের অপতৎপরতায় নাকি অন্যান্য ধর্মাবলীরা নির্বিচারে খৃস্টান হয়ে যাচ্ছে। মিশনারিরা নাকি অর্থ ও বৈভবের প্রলোভন দেখিয়ে অন্যদের খৃস্টধর্মে দীক্ষিত করাছে। এমন অভিযোগ আমরা অনেক দিন থেকেই পেয়ে এসেছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

কেউ যদি স্বেচ্ছায় কোনও ধর্মবিশ্বাস বা আদর্শগ্রহণ করে তাহলে এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী কাউকে বাধা দেয়া যায় না। তবে কেউ যদি ভুল বুঝিয়ে কিংবা দারিদ্র্যের সুযোগে সাহায্যদাতার ছদ্মবেশে কোনও মানুষকে কোনও মতাদর্শের প্রতি প্রলুব্ধ করে তাহলে সেটা হবে মারাত্মক অপরাধ এবং এ দেশের সংবিধানের লংঘন। আমরা জানি, পার্বত্য অঞ্চলে এমন অপরাধই করছে অনেকে। এদের প্রতি বাইরের দেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা আসে।

সম্প্রতি ওমর ফারুকের দাওয়াতি কাজকে প্রতিহত করবার জন্য এবং সেখানে ইসলামের দাওয়াত বন্ধ করে দিতে কতিপয় সন্ত্রাসী আল্লাহর এ বান্দাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এতে বোঝা যায়, আলোর পথে মানুষকে আহ্বান করাই ছিল ওমর ফারুক ত্রিপুরার একমাত্র অপরাধ। এ জন্যই সন্ত্রাসীরা তাঁকে নির্মমভাবে গুলিতে ঝাঁঝরা করেছে। এর উপযুক্ত বিচার হওয়া দরকার। মহান আল্লাহ দীনের খিদমতে নিবেদিত ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে শহীদের মর্যাদা দান করুন। শহীদ ওমর ফারুকের রক্তের বদৌলতে সেখানে দীনের বিজয় দান করুন এ প্রত্যাশা আমরা করতে পারি।

সন্ত্রাসীরা মনে করছে ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে হত্যা করে সেখানে দীনের দাওয়াত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা জানে না কাউকে হত্যা করে কোনও আদর্শিক আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। সাময়িকভাবে হয়তো তা থামানো যায়। কিন্তু স্থায়ীভাবে আলোর মিছিল বন্ধ করা যায় না। ওমর ফারুক ত্রিপুরাকেও হত্যা করে সত্যন্যায়ের পতাকা ধরাশায়ী থাকবে না। অবিলম্বে সেখানে ওমর ফারুকের বিকল্প কেউ না কেউ দাঁড়াবেন এবং দীনের দাওয়াত অব্যাহত রাখবেন ইনশা আল্লাহ।

যুগে যুগে সত্যন্যায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাতিল শক্তিগুলো। এতে সাময়িক অসুবিধায় পড়তে হয় দীনের প্রচারকদের। তবে এতে আলোর যাত্রা থেমে থাকে না চিরকাল।

তুলাছড়ির ওমর ফারুক ত্রিপুরা মাত্র কয়েক বছর আগে ইসলামগ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে ইসলামের সবকিছু হয়তো শিখতে পারেননি। কিন্তু ইসলামের বিধান যে শাশ্বত এবং কালজয়ী তা উপলব্ধি করেছেন। এ জন্য তিনি নিজগোত্রের লোকদের কাছে তিনি এর আলো পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছেন। নিজের জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন মসজিদ। সেখানে তিনি ইমামতিও করতেন। ফলে অনেকেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। কেউ কেউ জানাচ্ছিলেন ইসলামগ্রহণের আগ্রহ। এতেই টনক নড়ে বিদেশি মদদপুষ্ট ইসলামবিদ্বেষীদের। তাই তারা ওপর ফারুককে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেবার পরিকল্পনা আঁটে। সম্প্রতি তাঁকে হত্যা করে আপতত ওদের মতলব হাসিল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এটাই শেষ নয়। ওমর ফারুকের অনুসারীরা আরও অনেককে তাঁর দেখানো আলোর মিছিলে শামিল করে এর বদলা নেবেন ইনশা আল্লাহ। তবে যারা ওমর ফারুককে হত্যা করে আলোর মিছিল বন্ধ করতে চেয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের হাতে সোপর্দ করা জরুরি। অন্যথায় মানবতার দুশমন সন্ত্রাসীরা আরও হত্যাকাণ্ড ঘটাবার দুঃসাহস দেখাবে। যারা ওমর ফারুক ত্রিপুরার দেখানো আলোর পথের পথিক হয়েছেন তাঁদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়ে পড়তে পারে।

https://dailysangram.com/post/456709