২৯ মে ২০২১, শনিবার, ৩:১৮

বাজারে সয়াবিনে আগুন

অস্থির বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি যেনো আগুণে ঘি ঢালার মত অবস্থা। আর্ন্তজাতিক বাজারের অজুহাতে আবারও লিটার প্রতি সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। আজ শনিবার থেকে বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৫৩ টাকায়। আর খোলা তেল ১২৯ টাকায় বিক্রি হবে। হুট করে দাম বাড়ার খবরে তেল কেনার ধুম লেগেছে মুদি দোকানগুলোতে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি মুদি দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বাড়তি টাকা বাঁচাতেই মানুষ তেল কিনে রাখছেন। দোকানগুলোতে বেশিরভাগই সয়াবিন তেল ক্রেতাদের ভিড়। ক্রেতারা বলছেন,মূলত বাজার মনিটরিং না থাকায় অস্তিরতা ছড়িয়ে পড়ছে।

ক্রেতা মহসিন হাওলাদার বলেন, শুনেছি আজ শনিবার থেকে তেলের দাম বাড়বে। তাই তেল কিনতে এলাম। ৫ লিটার তেল কিনলাম ৬৬০ টাকায়। কয়েক দোকান ঘুরে কিনেছি।

বাড্ডা এলাকায় দাম বাড়ার খবরে ব্যবসায়ীরা তেলে লুকিয়ে ফেলছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা। ক্রেতা জসিম উদ্দিন আসিফ বলেন, গতকাল রাতেও দেখেছি দোকানগুলোতে তেল আছে। এখন এসে দেখি তেল নেই। দুই একটি দোকানে যা আছে, তারাও দাম বেশি নিচ্ছে।

এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তি। দেশেও নতুন করে আবারো দাম বাড়ছে এমন খবর শুনে সকাল থেকে তেল বিক্রি বেড়েছে। এই সুযোগে কোনো কোনো দোকানদার বাড়তি দামে তেল বিক্রি করছেন।

রামপুরার মনোহর জেনারেল স্টোরের মালিক এনায়েত উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত ৩০ লিটার সয়াবিন তেল আগের দামেই বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, এক লিটার বোতলজাত তেল বিক্রি করছি ১৪০ টাকা। ৫ লিটার রূপচাঁদা ৬৭০টাকা। আর ৫ লিটারের বসুন্ধরা সয়াবিন তেল বিক্রি করছি ৬৬০টাকা এবং পুষ্টি বিক্রি করছি ৬৬৫টাকায়।

বৃহস্পতিবার লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তেল পরিশোধন ও বিপণনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

গত মাসে ৫ টাকা দাম বাড়ানোর পর আবার ৩ টাকা কমানোর কথা জানায় সংগঠনটি। তখন প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ১৪১ টাকা ঠিক করা হয়। সে হিসাবে তেলের দাম এক লাফে ১২ টাকা বেড়ে প্রতিলিটার ১৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি দাঁড়াচ্ছে ১২৯ টাকা। পাঁচ লিটার তেলের বোতল পাওয়া যাবে ৭২৮ টাকায়। পাম সুপার তেল ১১২ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দামে আজ শনিবার থেকে তেল বিক্রি হবে।

দেশের বাজারে গত অক্টোবরেও প্রতি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫০৫ টাকা। এরপর থেকে তা বাড়ছেই। নতুন দাম কার্যকর হলে গত অক্টোবরের তুলনায় পাঁচ লিটার তেল কিনতে মানুষের ব্যয় বাড়বে ২২৩ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এবং আলুর দাম বেড়েছে ৫ টাকা। লবঙ্গের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ টাকা।

বাজারে বর্তমানে নতুন চালের পর্যাপ্ত স্টক থাকলেও বাজারে অস্থিরতা লেগেই আছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের দাম বাড়তি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৫৫ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ টাকা। গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৬২ টাকা কেজি, এখন সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা।

এছাড়া গত সপ্তাহে যে চালের দাম ছিল ৪৮ টাকা কেজি, এখন সেই চাল চিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের ৫২ টাকা কেজি চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৪ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা সাত দিন আগেও ছিল ৪৭-৪৮ টাকা। মাঝারি আকারের চাল প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গেল সপ্তাহে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া সরু চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৪ টাকায়। যা সপ্তাহ খানেক আগেও ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সরকারি হিসাবেও বলা হচ্ছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল কেজিতে ২ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৬ শতাংশ ও সরু চাল কেজিতে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে দেখা যায় মশুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে বড় দানার মশুর ডালের প্রতি কেজির দাম ছিল ৭৫ টাকা। এখন সেই ডালের দাম ৮০ টাকা কেজি। আর যে ডালের দাম ছিল ৯০ টাকা কেজি। এখন সেই ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা কেজি। শুত্রবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বড় দানার মসুরের ডাল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা ৭ দিন আগে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের মসুরের ডাল বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকা। যা গেল সপ্তাহে ছিল ৯০ টাকা। টিসিবির হিসাবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মসুর ডাল সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। এর প্রভাবে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি। একইভাবে গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম এখন ৪৫ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে, কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এদিকে প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগে ২০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি রসুন ২০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা ২০ টাকা বেড়ে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি লবঙ্গ ১০০ টাকা বেড়ে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ২৪০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কাঁচা বাজার সবজির বাজারও চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সবজির চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি। বরং কিছু কিছু সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এসব কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজারে আগের মতো ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। শুক্রবার শসার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঢেঁড়সের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩০ টাকা হালি বিক্রি হওয়া কাঁচকলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। গাজরের দাম বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ঝিঙে আগের মতো ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এক কেজি কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়।

https://dailysangram.com/post/453786