ফাইল ছবি
২৬ মে ২০২১, বুধবার, ২:২৮

প্রাইভেটে গড়পড়তা শিক্ষা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে হতাশা

‘যেদিন হল থেকে চলে আসি, অল্প ক’টা কাপড় নিয়ে এসেছিলাম। গামছাটা ভেজা থাকায় দড়িতে শুকাতে দিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম ক’দিন বাদেই তো ফিরতে হবে। বছর পেরিয়ে গেছে, এখন আমি শ্বশুরবাড়িতে। গামছাটা হয়তো এতদিনে ইঁদুরের দখলে। আমিও স্বপ্ন পূরণে হোঁচট খেয়ে সংসার করছি।’ এভাবে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাহেলা আক্তার।

তিনি বলেন, স্বপ্ন ছিল অনেক। টিউশনি করিয়ে নিজের লেখাপড়াটা ভালোই চালিয়ে নিচ্ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ।
বাড়িতে বসা। বাধ্য হয়েই পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ের পিঁড়িতে বসা। প্রশাসন ক্যাডারে নাম লেখাতে চাই, জানি না তা আর পারবো কিনা।

ভর্তি জটিলতার পাশাপাশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে সেশন জট। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ঢিলেঢালা ক্লাস চললেও নেই পরীক্ষার তোড়জোড়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন এ বিষয়ে বলেন, আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবছি। একাডেমিক কাউন্সিলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক বছর পেরিয়ে গেছে বৃষ্টি আক্তারের। বৃষ্টি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটে বসার সৌভাগ্য হয়নি এখনো তার। বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইনেই পরিচয়। সরাসরি দেখাটাও পাননি তিনি।

বৃষ্টির বাড়ি রংপুরে। বৃষ্টি বলেন, আমি এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, এখন পর্যন্ত আমার ক্যাম্পাস কেমন দেখিনি। বাড়িতে থাকতে থাকতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠেছি। সর্বক্ষণ অনলাইনে থাকতে হচ্ছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসাসহ প্রায়শই মাথাব্যথা হয়।

ওদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে ক্লাস, পরীক্ষা। পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশনা অমান্য করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার শেষ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা না নিয়ে অ্যাসাইন্টমেন্টের মাধ্যমে সারছেন সেমিস্টার। এসব শিক্ষার্থীর সেশনজট না হলেও কতোটা শিখছেন তারা এ নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ আছে।

রাকিব হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে এগিয়ে যাচ্ছে সার্টিফিকেট বিক্রির দিকে। আমরাও বাধ্য হয়ে শুধু টাকা গুনছি। আমাদের শিক্ষা অসম্পন্ন রয়ে যাচ্ছে। ক্লাসে শুধু যুক্ত হয়ে থাকা। কপি পেস্ট অ্যাসাইন্টমেন্ট আর পরীক্ষার সময়ও ওই কপি পেস্ট। এটাকে শিক্ষা না বলে সার্টিফিকেট ক্রয় বললে কি খুব ভুল হবে?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক। শরিফুল ইসলাম বলেন, যেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা চলছে এতে করে ভবিষ্যতে নেতৃত্বগুণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের ব্যাপক পরিমাণে ঘাটতি সৃষ্টি হবে। শিক্ষার্থীরা কবিতা লেখা থেকে শুরু করে বিতর্ক, গান ও জ্ঞান চর্চার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠেন। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী যখন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডা দেন তখন তার অজান্তেই নানা বিষয়ে ধারণা চলে আসে।

তিনি আরো বলেন, পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পার্থক্য আছে। পাবলিকে সেশনজট হচ্ছে, প্রাইভেটে হচ্ছে না। তাদের চিন্তা-চেতনা-মননশীলতায় আছে পার্থক্য। সর্বোপরি কিন্তু ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের পূর্ণতার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও। সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ১৯শে জুন থেকে ৩রা জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কৃষি গুচ্ছের সাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১শে জুলাই ও তিন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গঠিত প্রকৌশল গুচ্ছের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ১২ই জুন।

এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, যেহেতু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হচ্ছে না পরীক্ষা ঘোষিত সময়ে নেয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=275437&cat=3