২৫ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ২:১৬

উদ্বৃত্ত টিকা ফেরত দিচ্ছে সোহরাওয়ার্দী

ফুরিয়ে আসছে টিকার মজুত বন্ধ হচ্ছে কেন্দ্র

রুবিনা বেগম। থাকেন রাজধানীর মিরপুরে। প্রথম ডোজ করোনা ভ্যাকসিন নিলেও দ্বিতীয় ডোজের এসএমএস এখনো পাননি। সংবাদমাধ্যমে টিকার মজুত ফুরিয়ে আসার খবর শুনে দ্রুত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা নিতে এসেছেন। কিন্তু হাসপাতালের নার্সরা জানান, এসএমএস না আসা পর্যন্ত টিকা দেয়ার সুযোগ নেই। অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যান তিনি। এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে এসেছেন রাব্বি। রাব্বি ধানমণ্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

প্রথম দিকে সাত-পাঁচ ভেবে করোনার ভ্যাকসিন না নিলেও গত মাস থেকে নানা ভাবে টিকা নেয়ার চেষ্টা করছেন। কথা হয় রাব্বির সঙ্গে। তিনি জানান, দেশে যখন টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় তখন গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া ছিলেন। পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে অনেকেই তাকে প্রথম দিকে টিকা নিতে নিরুৎসাহী করেন। সম্প্রতি তার অফিস থেকে সকলের টিকা গ্রহণের তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন অনেক চেষ্টা করেও টিকা নিতে পারছেন না।

এদিকে কুষ্টিয়ায় পুলিশ পাহারায় করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে সম্প্রতি। গত শনিবার পুলিশি পাহারায় এক হাজার ৫১৩ জনকে করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন গণমাধ্যমকে জানান, ওইদিন সকাল ৯টা থেকে কুষ্টিয়া কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ জেলা শহরের দুটি কেন্দ্রে টিকা দেয়া শুরু হয়। সকাল ৮টার দিকে টিকাদান কেন্দ্রে ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ আসলে কেন্দ্র অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। চাহিদার বিপরীতে টিকার পরিমাণ কম হওয়ায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় টিকাদান কেন্দ্রে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এসএমএস পাননি এমন মানুষও এসেছিলেন টিকা পাবেন কিনা জানতে। এদিকে করোনা ভ্যাকসিনের মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। গত রোববার থেকে মুগদা হাসপাতালে কোনো টিকা দেয়া হয়নি। এর আগে দেশের ছয় জেলায় করোনার টিকা ফুরিয়ে গেলে গত রোববার এসব জেলায় কোনো ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হয়নি। গাজীপুর, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, পাবনা, নড়াইল ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো টিকা নেই। এসব জেলায় আবার কবে টিকা দেয়া হবে, তা জানেন না স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া পরিসংখ্যানে করোনা টিকা পরিস্থিতি সম্পর্কে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সামনের দিকে এই ধরনের জেলা ও কেন্দ্রের সংখ্যা হয়তো বাড়তেই থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৩৯ লাখ ৭২ হাজার ২১৮ জন। প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। সে অনুযায়ী, এখনো ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ জনের দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেয়া বাকি। গাণিতিক হিসেবে ভ্যাকসিনের মজুত হিসেবে এদের মাঝে চার লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৭ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ পাবেন না প্রথম ডোজ পাওয়া ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৪ জন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে ২২০ জন দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। প্রথম ডোজ করোনার ভ্যাকসিন নিতে এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন মোট ৪০ হাজার ১৩৬ জন। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৩৪ হাজার ১৪ জন এবং ৩০ হাজার ৩৫০ জন দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে আগামী ৩রা জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া কার্যক্রম চলবে। এই সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিয়ে শেষ করা যাবে না। কিছু টিকা উদ্বৃত্ত থাকবে। ওই হাসপাতালে থাকা টিকার মেয়াদ ৩রা জুন শেষ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে কেউ আসলেও এই টিকা দেয়া যাবে না। তাই কিছু উদ্বৃত্ত টিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ফেরত দেয়ার চিন্তা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগেই ফেরত দেয়া হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে। মেয়াদ শেষে ফেরত দেয়া হলে এই টিকা আর কাজে আসবে না। প্রায় আড়াই হাজার মেয়াদোত্তীর্ণ টিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ফেরত দেয়া হতে পারে বলে জানায় সূত্র। এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. খলিলুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ভ্যাকসিনের মজুত আমাদেরও শেষ পর্যায়ে আছে। দ্বিতীয় ডোজ কার্যক্রম এখনো চলছে। আসলে দ্বিতীয় ডোজ নিতে কম সংখ্যক মানুষ আসছে। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে ৩’শ জন ভ্যাকসিন নিতে আসে। গত শনিবার ২৯৭ জন ভ্যাকসিন নিয়েছে। এর আগে দৈনিক প্রায় ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ জন নিতেন।

দেশে যেসব কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি টিকাদান হয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটিতে মোট ১৫৯ জন করোনার দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। প্রথম পর্যায়ে মোট ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৪৮ হাজার ১১০ জন। এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ হাজার ৭২৫ জন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা যারা পাওয়ার মতো অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন তাদেরকে আমরা দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, চলতি মাসের পুরোটা সময় পর্যন্ত দিতে পারবো। এখন পর্যন্ত আমাদের ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আগামী কিছুদিন হয়তো চালাতে পারবো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ঢামেকে গত ২৪ ঘণ্টায় নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট ২৫৯ জন করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২৮ হাজার ৮১ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৪ হাজার ৩০২ জন। হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, যতজনকে আমরা এখন পর্যন্ত করোনার প্রথম ডোজ টিকা দিয়েছি তাদেরকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুত আছে। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ সবাই পাবে যারা আমাদের এখান থেকে প্রথম ডোজ নিয়েছে। এ ধরনের প্রস্তুতি আমরা ইতিমধ্যে রেখেছি। অনেকে আগে- পরে আসছে তাদেরকে আমরা টিকার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে টিকার মজুদ শেষ হওয়ায় গত রোববার থেকে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। করোনা ভ্যাকসিনের জন্য হাসপাতালটিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন মোট ৫০ হাজার ৫৮ জন। হাসপাতালে পুরুষ এবং মহিলা মিলিয়ে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে ৪২ হাজার ১৩১ জন। এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মোট ৩৪ হাজার ৬৯ জন। মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা. অশিন কুমার নাথ বলেন, আমাদের মজুত শেষ। তাই টিকাদান কর্মসূচি গত রোববার থেকে বন্ধ। গত শনিবার সর্বশেষ টিকা দেয়া হয়। আমাদের দ্বিতীয় ডোজ এখনো বাকি আছে প্রায় ৮ হাজার ১’শ জনের মতো। দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নির্ভর করছে নতুন করে টিকা প্রাপ্তির উপরে। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=275307&cat=2