২৫ মে ২০২১, মঙ্গলবার, ২:১১

তিস্তার পানি খেয়ে ফেলছে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি বাঁধ-প্রকল্প

ভারতের সিকিম রাজ্যে ৩৫টি ও পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে তিস্তার পানি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে পানিশুন্যই থাকছে বাংলাদেশের তিস্তার অংশ। এই অবস্থায় বাংলাদেশের তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে বৃষ্টির পানিই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারত তার অংশের তিস্তার পুরো অংশকে কাজে লাগিয়ে আগামী এক দশকের মধ্যে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় পানির বৃহৎ বৃহৎ রিজার্ভার গড়ে তোলা হচ্ছে এবং এগুলোর শক্তিশালী প্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সিকিম রাজ্যে তিস্তার উপরে ভারতের প্রকল্পগুলো হলো : ১. ভাসমি, ২. বিমকং, ৩. চাকুং, ৪. চুজাচেন, ৫. ডিক চু, ৬. জোরথাং লোপ, ৭. লাচিন, ৮. লিংজা, ৯. পানান, ১০. রালাং, ১১. রামমাম-১, ১২. রামমাম-৪, ১৩. রণজিৎ-২, ১৪. রনজিৎ-৪, ১৫. রাংইয়ং, ১৬. রাতিচু-বাকচা চু, ১৭. রিংপি, ১৮. রংনি, ১৯. রুকেল, ২০. সাদা মাংদের, ২১. সুনতালি তার, ২২. তালিম, ২৩. তাশিডিং, ২৪. তিস্তা-১, ২৫. তিস্তা-২, ২৬. তিস্তা-৩, ২৭. তিস্তা-৪, ২৮. তিস্তা-৬, ২৯. থাংচি ও ৩০. টিং টিং, ৩১. লোয়ার লাগিয়াপ, ৩২. রামমাম-২, ৩৩. রণজিৎ-৩, ৩৪. তিস্তা-৫ এবং ৩৫. রঙ্গিচু। এগুলি সবই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। এগুলোর জন্য অবশ্যই তিস্তার পানি প্রত্যাহার ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন হচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে শত শত কোটি রুপি ব্যয় সাপেক্ষ বেশকয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলো হলো: ১. দার্জিলিঙের মেল্লি গ্রামের কাছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প- ১৪৪ মেগাওয়াট, ২. তিস্তার উপনদী রিঙিত নদীর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প- ৮১ মেগাওয়াট, ৩. দার্জিলিঙের সেভক রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ১৪৪ মিটার দীর্ঘ ও ১৯ মিটার উঁচু ব্যারেজ প্রকল্প- ৮০ মেগাওয়াট এবং ৪. দার্জিলিঙের লোধামার উজানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প- ৪৮ মেগাওয়াট। এসব প্রকল্পের কারণে পানির বৃহদাকার আধার নির্মাণ, পানির প্রবাহ ঘুরিয়ে প্রবাহিত করা, প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা ইত্যাদির প্রয়োজন হয়। ফলে সেক্ষেত্রে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে কীভাবে প্রার্থিত পরিমাণ পানি আসবে তার কোন হিসাব মেলাতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প-পরিচয়
তিস্তা নদীর উপর তিস্তা লো ড্যাম স্টেজ-১ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ভারত। সিকিমের শাচেমের কাছে চেন্টু চু নামক স্থানে নির্মিত এই প্রকল্প থেকে ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তিস্তার পানি সরিয়ে প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য একটি ডাইভারশন স্ট্রাকচারও নির্মিত হয়েছে। তিস্তা লো ড্যাম স্টেজ-২ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পও বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিস্তা স্টেজ-১ এর ছেড়ে দেয়া পানি প্রবাহ ব্যবহার করে বেনসাই নামক স্থানে ৮৩ মিটার উঁচু ড্যামের সাহায্যে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এছাড়াও একই প্রকল্পের আওতায় চু থাং নামক স্থানে একটি রিজার্ভারও তৈরি করা হয়েছে। তিস্তা নদীর উপর নিউ জলপাইগুড়ির কাছে ‘তিস্তা লো ড্যাম স্টেজ-৩’ নামে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০০৮ সালে সম্পন্ন হয়েছে। ৩২.৫ মিটার উচ্চতার এই বাঁধের সাহায্যে ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি রুপি। এই প্রকল্পের ড্যামের অবস্থান চুগথান নামক স্থানে এবং পাওয়ার হাউজের অবস্থান সিনঘিক নামক স্থানে। ‘তিস্তা লো ড্যাম হাইড্রো-ইলেকট্রিক পাওয়ার স্টেজ-৪’ এবং এই প্রকল্পের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙে। কংক্রিটের তৈরি এই ড্যাম-এর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার ও উচ্চতা ৪৫ মিটার। ৫৫০ কোটি রুপি ব্যয়ে এই ড্যামের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের পাশাপাশি ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতও উৎপাদন করা হচ্ছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দার্জিলিঙেই তিস্তার উপর আরো চারটি বিদ্যুৎ প্রকল্প অনুমোদন করে। এবিষয়ে ভারত তিস্তা নদীর উপর তিস্তা লো ড্যাম স্টেজ-৫ শীর্ষক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্পে ৫১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। পশ্চিম সিকিমের ডিকচুর কাছে ৫৮৩ মিটার দীর্ঘ ও ১৮২.৫০ মিটার উঁচু এই প্রকল্প চালু হয় ২০০৮ সালে। এর প্রভাবক এলাকার আয়তন ৪৩০৭ বর্গকিলোমিটার। এই প্রকল্পে ব্যয় হয় ২,৬১৯ কোটি রুপি। ভারত তিস্তা নদীর উপর তিস্তা লো ড্যাম স্টেজ-৬ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হওয়ার কথা। এই প্রকল্পের আওতায় ব্যারেজ, টানেল, ভূ-গর্ভস্থ পাওয়ার হাউজ প্রভৃতি নির্মিত হচ্ছে। সিকিমের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিংটাম শহরের কাছে এই প্রকল্পটি ২০১৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা।

তিস্তার ওপর গজলডোবা বহুমুখী বাঁধ
বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধায় তিস্তা ব্যারেজের ১০০ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উজানে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় তিস্তা নদীর ওপর একটি বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। ১৯৭৫ সালে ওই প্রকল্প শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর আওতায় দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, মালদহ, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলা, বিহারের পুর্ণিয়া ও আসামের কিছু এলাকার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ২২.৫ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিস্তা বহুমুখী বাঁধ থেকে ভারত গজলডোবা ব্যারেজের বামে তিস্তা-জলঢাকা প্রধান খাল, ডানে তিস্তা-মহানন্দা খাল, মহানন্দা প্রধান খাল, ডাউক-নাগর প্রধান খাল ও নাগর-টাঙ্গন প্রধান খালের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

তিস্তা-মহানন্দাকেন্দ্রিক প্রকল্প
বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া সীমান্তের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টের পশ্চিম-উত্তর কোণে মহানন্দা নদীর ওপর বিশাল এক বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। ১৯৭৯-৮০ সালে ‘তিস্তা-মহানন্দা প্রকল্প’র আওতায় ‘ফুলবাড়ি ব্যারেজ’ নামে খ্যাত এই বাঁধটি তৈরি হয়। এর মাধ্যমে ভারত একদিকে তিনটি ইউনিটে সাড়ে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, অন্যদিকে ৬৭৫ বর্গকিলোমিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সঙ্গে প্রতিবছর শুষ্ক মওসুমে ফিডার ক্যানেলের সাহায্যে পানি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের সেচ কাজ করছে। বিপরীতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সেচ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। বাঁধের মাধ্যমে পানি আটকে রাখায় শুষ্ক মওসুমে জেলার নদ-নদীগুলোকে মরা নদীতে পরিণত করছে। মহানন্দার স্বাভাবিক স্রোতধারা ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার ফলে সেগুলো এখন মৃতপ্রায় পরিণতির শিকার। এসব নদীর মধ্যে আছে, চাওয়াই, তালমা, পাঙ্গা, কুড়ুম পাম্প, ভেরসা, ডাহুক, তীরনই, রণচণ্ডি, বেরং, জোড়াপানি, ঘোড়ামারা, নাগর, সিঙ্গিয়া, ঘাগরা, বুড়িতিস্তা প্রভৃতি। পঞ্চগড় জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত উজান থেকে নেমে আসা বেশ কয়েকটি নদীর উৎসমুখ হচ্ছে ভারত। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদী শাসন আইন উপেক্ষা করে নদীগুলোর উৎস এবং প্রবেশমুখে বাঁধ, স্লুইসগেইট, জলাধার, ফিডার ক্যানেল ও রেগুলেটর নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন এবং ২২১ কিলোমিটার সীমান্তব্যাপী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে।

তিস্তা ক্যানেল পাওয়ার হাউজ
ভারত ‘তিস্তা ক্যানেল পাওয়ার হাউজ’ নামে তিন স্তরে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে তিস্তা মিলিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে এবং তিস্তার পানি ব্রহ্মপুত্রের পানির প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। এই শিলিগুড়ির কাছে তৈরি ক্যানেল মহানন্দা ব্যারেজে মিলিত হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন তিস্তার পানি মহানন্দায় নেয়া যাচ্ছে, আবার এই ক্যানেলের উপর পাওয়ার হাউজও নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো মহানন্দা ব্যারেজ থেকে ৫ কি.মি, ২১ কি.মি ও ৩১ কি.মি পর পর তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি পাওয়ার হাউজ থেকে ৭.৫ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ১৯৯৭-৯৯ মেয়াদে এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এই প্রকল্পের কারণে একাধারে বাংলাদেশে তিস্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র তিস্তার প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কল্যাণ রুদ্রের রিপোর্ট
কিছুকাল আগে তিস্তার পানিবণ্টনকে কেন্দ্র করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গের নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের নেতৃত্বে করা ওই রিপোর্টে তিস্তায় শুষ্ক মওসুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে না বলে উল্লেখ করা হয়। রাজ্য সরকারের পাঠানো ওই রিপোর্টে সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ পরিদর্শন করার জন্য ভারতের পার্লামেন্টারি কমিটির প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রিপোর্টে বলা হয়, শুষ্ক মওসুমে তিস্তার পানির ৬০ শতাংশ এ বাঁধ গুলোয় আটকে যাচ্ছে। মাত্র ৪০ শতাংশ পানি পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে এসে পৌঁছায়। এতে বলা হয়, শুষ্ক মওসুমে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ কিউবিক মিটার পানি থাকে তিস্তায়। সে সময় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সেচের পানির চাহিদা মেটাতে প্রয়োজন প্রতি সেকেন্ডে ১ হাজার ৬০০ কিউবিক মিটার। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সেচ অধিদফতরের দাবি, তিস্তার পানি কমে যাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের সেচের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা যাচ্ছে না। এর থেকে বাংলাদেশকে পানির ভাগ দিতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে সেচের পানি মিলবে না। সেচ ছাড়াও তিস্তা থেকে উত্তরবঙ্গে দৈনিক পাঁচ কোটি লিটার পানীয় পানি সরবরাহ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সেচ দফতরের অভিযোগ, সিকিমে তিস্তার ওপর যে আটটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে সে বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে কিছু জানানোই হয়নি। প্রসঙ্গত, তিব্বতের হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হওয়া তিস্তা ভারতের সিকিম হয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। এরপর নদীটি প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। এই দীর্ঘ পথের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সিকিমে তিস্তার ওপর আটটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব বাঁধের মধ্যে রয়েছে, চুঙ্গাথান ড্যাম, টিনটেক ড্যাম, শেরওয়ানি ড্যাম, রিয়াং ড্যাম, কালিঝোরা ড্যাম, ভিমকং ড্যাম, লানছেন ড্যাম ও বপ ড্যাম। এগুলো থেকে সিকিম সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আবার পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে পানি আটকে তা তিস্তা-মহানন্দা সংযোগ খাল দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ অভিমত
এবিষয়ে দেশের বিশিষ্ট নদী গবেষক ও গ্রন্থ রচয়িতা হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, ভারত তার অভ্যন্তরে বাংলাদেশমুখি প্রতিটি নদ-নদীতেই নানান প্রকল্প তৈরি করে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে চলেছে- এটা সকল মহলেরই জানা। কিন্তু বাংলাদেশের দৃঢ়তার অভাবে পুরো বিষয় নিয়ে কখনোই আলাপ-আলোচনা বা দাবি উত্থাপিত হতে দেখা যায় না। তিস্তার উপরে অসংখ্য প্রকল্প করে প্রবাহের সবটুকু সরিয়ে নেয়া কোনো হিসাবের মধ্যেই পড়ে না। বাংলাদেশকে পানিবঞ্চিত রেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ভারতের কাছে যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তিস্তার বিষয়টি এমনকি আলোচনার টেবিল থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, অভিন্ন নদীগুলোর বিষয়ে একটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত করে উত্থাপিত হওয়া উচিত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা হতে পারছে না। ফলে পুরো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশনটি ২০১৪ সালের ১৭ আগস্ট থেকে আইনে পরিণত হয়েছে। সেখানে উজানের দেশ থেকে ভাটির দেশে প্রবাহিত নদীর পানি কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তার দিকনির্দেশনা আছে। যে নদীর পানি যে খাতে প্রবাহিত হয়, সেই নদীর পানি সেই খাতে না রেখে খাত পরিবর্তন করলে তা নদীর জন্য কল্যাণের হবে না।

https://dailysangram.com/post/453410