২২ মে ২০২১, শনিবার, ১:৪২

চাঞ্চল্যকর সাহিনুদ্দিন হত্যা

৩১ সেকেন্ডে ২৭ কোপ দেওয়া মনির ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

রাজধানীর পল্লবীতে আলোচিত সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি মনির হোসেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। পল্লবীর সাগুফতা হাউজিং এলাকায় শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পল্লবী জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আহসান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এডিসি জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ৩১ সেকেন্ডে সাহিনুদ্দিনকে ২৭টি কোপ দেয় মনির। ১৬ মে হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আমরা তাকে খুঁজছিলাম। ঘটনার পর সে লক্ষ্মীপুর চলে যায়। দুদিন আগে আবার ঢাকা আসে। তাকে শনিবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে পল্লবীর ২২ তলা গার্মেন্টসের পেছনে ঈদগাহ মাঠের পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রথমে ডিবির কাছে তিনটি কোপ দেওয়ার কথা স্বীকার করে সে। পরে তাকে ভিডিও দেখালে পুরো ঘটনা স্বীকার করে।

এডিসি আহসান খান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মনির জানায়, সে ডাকাতি ও ভাড়াটে কিলার হিসাবে কাজ করে। তার সহযোগীরা সাগুফতা হাউজিং এলাকায় আছে বলে আমাদের তথ্য দেয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে গভীর রাতে সেখানে গেলে তার সহযোগীরা ডিবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। প্রাণ বাঁচাতে ডিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির এক পর্যায়ে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। সহযোগীদের গুলিতেই মনির গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, এক রাউন্ড গুলি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। ‘গোলাগুলিতে’ ডিবির দুই সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় মামলা করা হয়েছে।

পল্লবী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, আমাদের একটি টিম টহলে ছিল। রাত পৌনে ২টার দিকে খবর পাই, সাগুফতা হাউজিংয়ের ভেতর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজন (মনির) পড়ে আছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি মানিক র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সাহিনুদ্দিনের শরীরের নিচের অংশে মানিক এবং ওপরের অংশে মনিরকে কোপাতে দেখা যায়।

১৬ মে পল্লবীতে সাত বছরের শিশু সন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বাদী হয়ে পল্লবী থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এবং তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এমএ আউয়ালকে। অন্য আসামিরা হলো- সুমন বাহিনীর সুমন, আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, শফিক, টিটু, রাজ্জাক, শফিক (২), কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, মরণ আলী, লিটন, আবুল, ন্যাটা সুমন, কালু ওরফে কালা বাবু, বাবু ওরফে বাইট্যাব বাবু ও বাবু ওরফে ইয়াবা বাবু।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সাহিনুদ্দিনের স্ত্রীর বড় ভাই সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার দিন বিকালে পেশাগত কাজে আমিসহ কয়েকজন পল্লবীতে অবস্থিত একটি গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলাম। ৪টা ৪৪ মিনিটে আমার ছোট বোন মাকসুদা আমাকে ফোন করে বলে, ‘সুমন গুণ্ডারা সাহিনুদ্দিনকে মারধর করছে।’ আমার মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আমার এক সহকর্মীর মোবাইল থেকে তাৎক্ষণিক সুমনকে ফোন দিই। সুমন ঘটনা অস্বীকার করে বলে, ‘আমি শাহবাগ যাচ্ছি।’ জহিরুল বলেন, সুমনের সঙ্গে কথা বলা শেষ করতে না করতেই আমার অপর ছোট বোন মাহমুদা (সাহিনুদ্দিনের স্ত্রী) আমাকে ফোনে জানান, সুমন ও তার সহযোগীরা সাহিনকে দুই টুকরো করে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি নিয়ে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। পরে ঘটনাস্থলে এসে সাহিনের লাশ দেখতে পাই।

র‌্যাব ও ডিবি সূত্র জানায়, সাহিনুদ্দিন হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে ইতোমধ্যে তিনজন জেলহাজতে আছে। তারা হলো- মুরাদ, দিপু ও রকি। বাকি সাতজন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছে। এদের মধ্যে রোববার শরিফ, ইকবাল ও টিটুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আরও যারা রিমান্ডে আছে তারা হলো- সাবেক এমপি আউয়াল, সুমন, হাসান ও বাবু ওরফে বাইট্যা বাবু।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/423800