২১ মে ২০২১, শুক্রবার, ১:৩০

সঞ্চয়পত্র ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে সরকার

১০ মাসে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা; ১০ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ ৩৩ হাজার কোটি টাকা; সঞ্চয়পত্র ঋণকে নিয়ন্ত্রণহীন বলছে অর্থ মন্ত্রণালয়

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমে যাচ্ছে, অন্য দিকে ব্যাপকহারে বেড়ে যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ। সস্তা ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ব্যাংকিং খাতের ঋণকে। কারণ এ ঋণে সুদের হার ৪-৫ শতাংশ। অন্য দিকে সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ হার হচ্ছে ১১ শতাংশের ওপরে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ব্যাংকিং খাতের ঋণ পরিশোধ করেছে ১৩ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। গত ২০২০ সালে জুন শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল একলাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছর এপ্রিল শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে একলাখ ৬৪ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা।

জুলাই-এপ্রিল মাসে সরকার ব্যাংকিং খাতের ঋণ পরিশোধ করেছে ৮২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। অন্য দিকে এ সময় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ নেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

অন্য দিকে ব্যয়বহুল ঋণ হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ চলতি অর্থবছরে ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি টাকার; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার এই প্রবণতাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনকন্ট্রোলড বা নিয়ন্ত্রণহীন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

২০২১ সালের মার্চে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৭৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকার। তার মধ্যে তিন হাজার ৮৯১ কোটি ২৮ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সুদ-আসল বাবদ বাকি টাকা গ্রাহকদের শোধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। এ ছাড়া এখন একলাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব ছাড়া সুযোগ নেই। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ও ব্যাংক আমানতে সুদহার কম হওয়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছেন সাধারণ গ্রাহকরা।

এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মুনাফা হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/583099/