২১ মে ২০২১, শুক্রবার, ১:২৭

টিকা আমদানিতে শেষ হচ্ছে না অপেক্ষার প্রহর

টিকা আমদানিতে অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ঈদের আগেই টিকা চলে আসবে। কিন্তু না ঈদের পরেও টিকা আসেনি। সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকার জন্য লবিং চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের কাছে উপহার হিসেবে টিকা চেয়েছেন। এর আগে তিনি কানাডার কাছে টিকা চেয়েছেন।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘চীন তিনটি ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিল এবং এরমধ্যে আমরা দুটি ডকুমেন্ট তাদেরকে ফেরত পাঠিয়েছি। দুটির মধ্যে একটি বুধবার ফেরত পাঠিয়েছি। এর একটি অংশ ছিল ইংরেজিতে এবং আরেকটি অংশ ছিল চীনা ভাষায়। আমরা ফেরত পাঠানোর সময় চীনা ভাষার অংশে সই করেছি। পরে আমরা চীনা ভাষার একজন অধ্যাপককে নিয়োগ করে সেটি সংশোধন করেছি। দিস আর লাউজি ওয়ার্ক এবং এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু যোগাযোগ করিয়ে দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সব বিষয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখে। সেখানে একটু দেরি হচ্ছে। সেজন্য বেইজিংয়ে আমাদের রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত হতাশ। কারণ, কাগজপত্র চূড়ান্ত না হলে প্রক্রিয়া শেষ হবে না। রাষ্ট্রদূত আমাকে ফোন করেছেন, টেক্সট করেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব, মুখ্য সচিবকে পাঠিয়ে দিয়েছি, তাগাদা দেয়ার জন্য।

ভারতের কাছ থেকে তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু ৭০ লাখ সরবরাহ করার পর রফতানি বন্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। এর ফলে ১৫ লাখেরও বেশি লোক দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে পারছে না; যা সরকারকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের কাছে বাংলাদেশ টিকা উপহার হিসেবে চেয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করকে ফোন করেছিলাম। ভারত কখনোই বলেনি টিকা দেবে না, তবে তারা দিতে পারছে না। আমি এর আগে চিঠিও দিয়েছি। আমি ওইদিন বললাম, আমরা ঝামেলায় পড়েছি। আমাদের ১৫ লাখ লোক দ্বিতীয় ডোজ টিকার জন্য আটকে গেছে। টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলে প্রয়োজন হলে আমাদের উপহার হিসাবে দিন। কারণ, এর আগে আপনারা আমাদের উপহার দিয়েছেন।

টিকা দিতে পারবেন কিনা এ বিষয়ে জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে কিছু বলেননি জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘জয়শঙ্কর বলেন, আমি আপনাদের অবস্থা জানি এবং আপনিও আমাদের অবস্থা জানেন। দিনে চার হাজারের বেশি লোক মারা যাচ্ছে এবং চার লাখের বেশি লোক সংক্রমিত হচ্ছে। সেরামের উৎপাদন করার ক্ষমতা ছিল ২০ কোটি, কিন্তু ১০ কোটিও উৎপাদন করতে পারছে না। আমাদের অবস্থা শোচনীয়।

তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, আমার অবস্থা আরও খারাপ। কারণ, ১৫ লাখ লোক টিকা না পেলে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। যেকোনোভাবে টিকা সরবরাহ করার কথা বলেছি। বলেছি প্রয়োজনে উপহার দিন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জয়শঙ্কর আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন, অন্য জায়গা থেকে আমরা টিকা আনার চেষ্টা করছি কিনা। আমি বললাম, যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছি। কোভ্যাক্সকে আপনারা দিচ্ছেন না বলে সেখান থেকে পাচ্ছি না। যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভারতের প্রভাব রয়েছে এবং আমি জয়শঙ্করকে অনুরোধ করেছি তাদের আমাদের টিকা দেয়ার জন্য বলতে।

এদিকে মঙ্গলবার কানাডার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ২০ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন সহায়তা চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়েট প্রিফনটেইনের সঙ্গে এক বৈঠক তিনি এই সহায়তা চান। বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল কানাডা থেকে জরুরিভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আনার সম্ভাবনা নিয়ে।

এছাড়া চীন থেকে করোনাভাইরাসের সিনোভ্যাক টিকা আনার চুক্তি প্রায় শেষপর্যায়ে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। অক্সফোর্ডের টিকা পেতে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল সেটার সর্বশেষ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন আনার জন্য যে চিঠি দিয়েছিলাম সে বিষয়ে এখনো জবাব পায়নি।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগতভাবে চীনের সিনোফার্ম থেকে করোনা ভ্যাকসিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, করোনাকালে জরুরি কেনাকাটায় প্রস্তুতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার পর এবার দেশে আসছে ফাইজারের করোনার টিকা। আগামী ২ জুন গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (গ্যাভি) কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির আওতায় ফাইজারের অন্তত এক লাখ ৬ হাজার ডোজ করোনার টিকা বাংলাদেশে আসছে।

গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে করোনা টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজনকে টিকা দেয়া হয়। ৮ এপ্রিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।

https://dailysangram.com/post/452934