১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫৪

মৃত্যু ছাড়াল ১০ হাজার

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত উঠেছে ১০ হাজার ৮১ জনে। গত বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মৃত্যু শুরু হয় ১৮ মার্চ। সেই হিসাবে গতকাল পর্যন্ত দেশে সংক্রমণ শনাক্তের ৪০৩ দিন ও মৃত্যুর ৩৯৩ দিন পার হয়েছে। গড় হিসাবে দিনে মারা গেছে ২৬ জন। যদিও এ পর্যন্ত এক দিনে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে গত বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে ৯৬ জনের। এর পরেই সর্বোচ্চ মৃত্যু ঘটল গতকাল ৯৩ জনের।

গতকাল নতুন শনাক্ত হয়েছে চার হাজার ১৯২ এবং সুস্থ হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৫ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত শনাক্ত সাত লাখ সাত হাজার ৩৬২ জন। সুস্থ হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৭ হাজার ২১৪ জন। তবে গত ১৫ দিনে মৃত্যুর যে হার দেখা গেছে, গত বছর মার্চ থেকে শুরু করে এক বছরে এ রকম আর দেখা যায়নি। এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। যদিও একই সঙ্গে পূর্বাভাস রয়েছে সংক্রমণের গতি স্থির হওয়ার ব্যাপারে।

১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর পর এখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ কোন পর্যায়ে আছে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে চাইলে অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঠিক এই মুহূর্তেই আমাদের বলা সঠিক হবে না যে এখনই দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিক চলছে কি না; এ জন্য অন্তত আরো একটি সপ্তাহ পার করতে হবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সিকোয়েন্সিংয়ের ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য।’

তবে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা একটি বিষয় নিশ্চিত হয়েছি যে আমাদের দেশে কোনো না কোনো কারণে ইউকে ভেরিয়েন্ট ইউরোপ, আমেরিকা বা যুক্তরাজ্যের মতো ছড়ায়নি এবং বিধ্বংসী রূপ নিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত করোনার যে কয়টি ভেরিয়েন্ট বের হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ও দ্রুত বিস্তার ঘটাতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। অথচ ইউকে ভেরিয়েন্টের চেয়ে তুলনামূলক কম শক্তিশালী আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট আবার আমাদের দেশে অনেক বেশি ছড়িয়েছে। গত বছর এমন ব্যাপারগুলো ছিল না, ফলে ধারণা করাও অনেকটা সহজ ছিল; এবার সেটা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ কিছুদিন যেভাবে ওপরে উঠেছিল শনাক্ত, সেটা এখন কিছুটা কম হলেও ঝুঁকি থেকেই গেছে। এ জন্যই আমরা একটু অপেক্ষা করব।’

অন্যদিকে রোগতত্ত্ববিদ ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘৫ এপ্রিল থেকে সরকার যে বিধি-নিষেধ দিয়েছে, তার অনেকটা ইতিবাচক ফলাফল আমরা দেখতে শুরু করেছি শনাক্ত অনেকটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ আমরা খেয়াল করলেই দেখব, গত কিছুদিন যেভাবে লফিয়ে লাফিয়ে শনাক্ত বেড়েছে, সেই লাফের গতি কিন্তু কমেছে। দৈনিক শনাক্তের হারও গড়ে ২০ শতাংশের কাছাকাছি আটকে আছে কয়েক দিন ধরেই; নিচে না নামলেও ওপরে উঠছে না। এটা একটা ভালো দিক, তবে চলতি বিধি-নিষেধ শেষ হওয়ার পরের সপ্তাহে আমরা আরো নিশ্চিত করে ফলাফল বলতে পারব।’

দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ দিনের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রথম ১০০ দিনে মারা যায় এক হাজার ৬৬১ জন, শনাক্ত হয় এক লাখ ৩০ হাজার ৪৭৪ জন ও সুস্থ হয় ৫৩ হাজার ১৩৩ জন। দ্বিতীয় ১০০ দিনে শনাক্ত হয় দুই লাখ ৩৮ হাজার ২১৬ জন, সুস্থ হয় দুই লাখ ২৮ হাজার ৫২৩ জন ও মারা গেছে সবচেয়ে বেশি তিন হাজার ৬৮৭ জন। তৃতীয় ১০০ দিনে শনাক্ত হয় এক লাখ ৫৪ হাজার ৬১২ জন, সুস্থ হয় এক লাখ ৮৬ হাজার ৬২ জন ও মারা গেছে দুই হাজার ৪৫৫ জন। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত ৯৩ দিনে শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৬০ জন, সুস্থ হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৬৯৬ জন এবং মারা গেছে দুই হাজার ২৭৮ জন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৯৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৬৪ জন ও নারী ৩০ জন; যাঁদের মধ্যে ৩১-৪০ বছরের তিনজন, ৪১-৫০ বছরের ১৪ জন, ৫১-৬০ বছরের ২৫ জন ও ষাটোর্ধ্ব ৫২ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬৯ জন, চট্টগ্রামের ১২ জন, রাজশাহীর ছয়জন, খুলনার তিনজন, বরিশালের দুজন, সিলেট ও রংপুরের একজন করে রয়েছেন। হাসপাতালে মারা গেছেন ৯০ জন এবং বাসায় চারজন।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/04/16/1024294