১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫৩

এক দিনেই সবজির দাম বেড়ে দ্বিগুণ

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে গত বুধবার থেকে ‘লকডাউন’ শুরু হয়েছে। ওই একই দিন রোজাও শুরু হয়েছে। পণ্য পরিবহনে কোনো সমস্যা না থাকলেও এক দিনেই সবজির দাম বেড়ে হয়ে গেছে দ্বিগুণ। বেগুন, শসাসহ রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন সবজি এক কেজি কিনতে লাগছে ১০০ টাকার বেশি। এর বাইরে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকার ওপরে। অন্যান্য নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই।

খুচরা বিক্রেতাদের অজুহাত, ঘাটে (পাইকারি বাজার) সবজির সরবরাহ সংকট রয়েছে, দাম বাড়তি। সকালে গিয়ে অনেক খুচরা বিক্রেতা সবজি কিনতে পারেননি, শেষ হয়ে গেছে।

পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, কিছু পণ্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়েছে। বিপরীতে এগুলোর সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি।

ব্যবসায়ীরা যা-ই বলুক, বাজারের এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ। যাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে তারা তো এমনিতেই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তার ওপর বাজারের এই আগুন অবস্থা তাদের আরো ভাবিয়ে তুলেছে।

ক্রেতাদের দাবি, বাজারে সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে। আসলে রোজা এলেই কিছু সবজির দাম বিক্রেতারা ইচ্ছা করে বাড়িয়ে দেন। মানুষের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে অতিমুনাফা করেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে জানা যায়, লকডাউনের প্রথম দিন বুধবার সবজির দাম বেড়ে তিন গুণ হয়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেগুন, শসাসহ রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন সবজিগুলোর দাম। গতকালও মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আগের দিন কোনো কোনো বাজারে বেগুন দেড় শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অথচ লকডাউনের আগে বেগুনের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গতকাল শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, আগে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পাওয়া যেত। ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া গাজরের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। একইভাবে দ্বিগুণ বেড়েছে ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, কাঁচা মরিচ, লেবুসহ রমজানে চাহিদা বাড়ে এমন সব সবজির দাম। কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা। যে লেবু ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি কেনা যেত, এখন তা ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

ঢেঁড়স, করলা, পটোল, শজনে-ডাঁটা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। যদিও এখন গ্রীষ্মের সবজির ভরা মৌসুম।

মালিবাগ বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, ঘাটে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরায়ও বেড়েছে। ভোরে যাঁরা কিছুটা কমে কিনেছিলেন তাঁদের অনেকে ঘাটেই বেশি দাম পেয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা যমুনা ভাণ্ডারের মালিক মো. দিপু বলেন, রোজায় শসা, বেগুন, গাজর, টমেটো, ধনেপাতা, পুদিনাপাতাসহ কয়েকটি সবজির চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এসব সবজি চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এ ছাড়া অন্য সবজিগুলোর চাহিদাও কিছুটা বাড়ে। তবে পণ্য পরিবহনে তেমন সমস্যা নেই বলে জানান তিনি।

রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা আলমগীর বলেন, যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করে তাদের আয় এখন বন্ধ। চাল ও ডালের দাম আগেই বেড়েছে। এখন সবজির দামও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। রোজা এলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন।

অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে চিনি আগের মতোই ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি, বড় দানার মসুর ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, ছোট দানার মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১২৮ থেকে ১৩০ টাকা, ছোলা ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আলু আগের মতোই ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ভালো মানের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল কিনতে লাগছে ৬২ থেকে ৬৬ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭২ টাকা, ব্রি-২৮ ৫২ থেকে ৫৮ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। এসব পণ্যের দাম আগে থেকেই স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বাড়তি।

বাজারে মুরগিও বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই বাড়তি দামে। ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, সোনালি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা এবং দেশি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচাবাজারগুলোতে গতকালও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো আগের মতোই ঢিলেঢালা ছিল। দোকানপাটও আগের স্থানেই বসেছে। বিশেষ করে মাছের বাজারগুলোতে ক্রেতাদের ঘেঁষাঘেঁষি ছিল বেশি। বাজার খোলা স্থানে নেওয়ার কোনো বিষয় দেখা যায়নি। কোনো কোনো বাজারে পুলিশের টহল দেখা গেলেও অনেক বাজারেই ছিল না।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/04/16/1024303