১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার, ৮:৫১

রমযানকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা পকেট কাটছে ক্রেতাদের

রমযানকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে দেশে অস্বাভাবিক বাজার ব্যবস্থা চলছে। রমযানি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে করে ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তারা বলছেন বাজারে আসলে কোন ধরনের মনিটরিং নেই। আর এ কারণেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামত পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। রমযান যেনো ক্রেতার কাছে এক ধরনের বোঝা মনে হচ্ছে।

পুরো শীতের মৌসুমে শশা বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা কেজিতে। গত দুই দিন আগেও শশার কেজি ছিল ২৫/৩০ টাকা। সে শশা গতকাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে একশত টাকা দরে। ধনে পাতার দামও বেড়েছে কেজিতে একশ টাকা। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। গুড় মুড়ি চিনির দামও বেড়েছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে লেবুর বাজারে। প্রতি হালি ছোট লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩৫/৪০ টাকা হালিতে। ক্রেতা আব্দুল হালিম জানান,তিনি এক হালি লেবু কিনেছেন ৪০ টাকায়। এর আগেও তিনি লেবু কিনেছিলে ২০ হালিতে। কিন্তু রমজানের কারণে এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ। তার পরেও লেবুতে কোন রস নেই।

জানা গেছে যুগ যুগ ধরেই এ দেশে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে পিচ হিসাবে। এতে করে প্রতি কেজি তরমুজের দাম পরতো ১০/১২ টাকা কেজি। সে তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসাবে। সারা দেশেই এখন প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এতে করে মাঝারি একটি তরমুজে দাম পরে প্রায় ৪০০/৫০০ টাকা। যা এক জন গরিব মানুষের পক্ষে কিনে খাওয়া কষ্টকর হচ্ছে।

দেশি ফল বাঙ্গি বাজারে এসেছে কয়েকদিন আগেই। আগে ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে একটি বাঙ্গি কিনে খাওয়া গেছে। কিন্তু এ বছর বাঙ্গিতেও যেন আভিজাত্যের ছোঁয়া। ১০০ টাকার নিচে বাজারে কোনো বাঙ্গি মিলছে না। মাঝারি মানের একটি ভালো বাঙ্গির দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

অন্যদিকে এক ডজন সবরি বা মানিক কলা কিনতে লাগছে ১২০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কলার দাম ১০ টাকা। তাই রমজানের শেষরাতে যারা দুধ-কলা খেতে অভ্যস্থ, তারাও অনেকে কলা না নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন গত দু’দিন। এমনকি পাড়া-মহল্লার রাস্তায় যে চিনি চাম্পা কলা আগে ৩০ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে, সেই কলাও এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

করোনার সময় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ফল খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন কমবেশি সবাই। এরমধ্যে আবার বুধবার থেকে রমজানের বাড়তি ফলের চাহিদা যোগ হয়েছে। প্রত্যেকেরই ইফতার তালিকায় দু’একটা ফল রাখছেন। আর এ চাহিদাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে সবধরনের ফলের দাম।

বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বা আমদানি কম থাকায় ফলের দাম বেড়েছে। দেশি ও আমদানিনির্ভর সব ফলেই দামে বাড়তি। এছাড়াও লকডাউনে বাড়তি পরিবহন ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। খিলগাঁও ফলের দোকানদার রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমদানি নেই বলে মোকামে দাম বেশি। আমরা বেশি দামে কিনছি বলে বিক্রিও করছি একটু বেশি দামেই। দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা থাকলেও বিক্রি বাড়ছে না।

তিনি জানান, গত ১০-১৫ দিন আগেও যে আপেল বিক্রি করেছেন ১০০/১২০ টাকা কেজি। সেগুলো এখন বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। আর সবুজ আপেল বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দরে। মাল্টার কেজি এখন ১৮০ টাকা, যা দু’সপ্তাহ আগে ১৩০ টাকা ছিল। যে পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছিল, তা এখন ১২০ টাকা। একইভাবে নাসপাতি, কমলা, কেনু, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফলের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সবাজার ঘুরে আরও দেখা যায়, আঙ্গুরের কেজি ২৬০ টাকা, যা কয়েকদিন আগেও ছিল ২০০ টাকা। ৪০ টাকার পেয়ারা ৮০ টাকা, ২৬০ টাকার ডালিম ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি সবধরনের খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে বেড়েছে। ভালো মানের মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। আর খোলা ভালো মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায়। বাজারে আড়াইশ’ টাকার নিচে কোনো ধরনের খোলা খেজুর কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাজারে কথা হয় হারুনুর রশিদ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, গরিব আর মধ্যবিত্তদের ওপর সবসময় বাড়তির খড়গ বেশি থাকে। আমরা না পারছি সহ্য করতে, না পারছি ভালো-মন্দ কিনতে। বাজারে এতো ফল কিন্তু কেনার সক্ষমতা নেই আমাদের। একদিকে বাড়তি খরচ করলে অন্যদিকে টান পড়ে।

https://dailysangram.com/post/449776