১৪ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ৩:১৩

এত মানুষ মুভমেন্ট পাস নিয়ে কি করবে?

লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য মুভমেন্ট পাস চালু করেছে পুলিশ। গতকাল ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ
লাইন্স অডিটোরিয়ামে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। মুভমেন্ট পাসের অ্যাপসটি উদ্বোধনের পর থেকেই আবেদনের হিড়িক পড়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাসটি নেয়ার জন্য মানুষ আবেদন করছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ৬ লাখ মানুষ অ্যাপটিতে আবেদন করেছেন। এরমধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পেরেছেন ৬০ হাজার মানুষ। এই সময় পর্যন্ত ৩০ হাজার পাস ইস্যু করা হয়েছে। এর আগে উদ্বোধনের প্রথম ঘণ্টায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করেন।
তারপর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ হাজার মানুষ আবেদন করছিলেন।

মুভমেন্ট পাসের আবেদনের চাপে এক পর্যায়ে সার্ভার জটিলতা শুরু হয়। জটিলতার কারণে অনেকেই অ্যাপসে ঢুকতে পারছেন না। সময় বিলম্বিত হচ্ছে। মুভমেন্ট পাসে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলাচলের সুবিধা থাকছে। একজন ব্যক্তি সপ্তাহে ১৫টির মতো পাস পাবেন। এ ছাড়া আবেদন বেশি পড়ছে মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকাতে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকা থেকেও আবেদন পড়ছে। প্রশ্ন উঠেছে এত মানুষ যদি মুভমেন্ট পাস নিয়ে সড়কে নামে তাহলে লকডাউন বাস্তবায়ন হবে কীভাবে। সর্বাত্মক লকডাউনে যেখানে জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানে এত মানুষ মুভমেন্ট পাস নিয়ে কি করবে? অনেকেই সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে মুভমেন্ট পাস নিয়ে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, বেশকিছু জরুরি ক্যাটাগরিতেই মুভমেন্ট পাস দেয়া হচ্ছে। যার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হবে তিনিই শুধু নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এটি ব্যবহার করতে পারবেন। যারা এই পাসটি ব্যবহার করবেন তাদের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। পুলিশ আটকালে পাসটি দেখাতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, মুভমেন্ট পাস সবাই পাবেন না। শুধু জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এ পাস। যিনি পাস পাবেন শুধু তিনিই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে টিকা গ্রহণ, মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচাবাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা, চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, মৃতদেহ সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে মুভমেন্ট পাস দেয়া হবে। পাস নিতে হলে মুভমেন্ট পাস লিংকে প্রবেশ করে আবেদন করতে হবে। মুভমেন্ট পাস ক্লিক করে প্রথমে মোবাইল নম্বরটি দিতে হবে। তারপর গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) চলে যাবে। ওটিপি প্রবেশ করালে পাসের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে। মুভমেন্ট পাস নিতে হলে উল্লেখ করতে হবে আপনার অবস্থান কোন থানায়, কোন থানা এলাকায় যাবেন, আপনার নাম, লিঙ্গ, বয়স, ভ্রমণের কারণ, পাস ব্যবহারের তারিখ ও সময়, পাসের মেয়াদ শেষের তারিখ ও সময়, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজস্ব গাড়ির তথ্য এবং ছবি এসব তথ্য দিতে হবে। সব তথ্য দেয়ার পর আবেদনকারীকে একটি পাস দেয়া হবে। এই পাসধারী ব্যক্তি বাধামুক্তভাবে সড়কে চলাচল করতে পারবেন।

এদিকে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে মুভমেন্ট পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমরা বিনা প্রয়োজনে কাউকে রাস্তায় দেখতে চাই না। প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে এবং ঘরে ফিরে স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার হবেন। আপনার মাধ্যমে যেন আপনার প্রিয়জন করোনায় সংক্রমিত না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হাতিরঝিলসহ অন্যান্য জায়গায় আপনারা জটলা করে আড্ডা দেবেন না। অভিভাবকদের অনুরোধ করবো, আপনারা সন্তানদের ঘর থেকে বের হতে দেবেন না। যদি খুব দরকার হয়, তাহলে পাস নিবেন। পুলিশ বের হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তাকে পাস দেখাবেন। তিনি বলেন, গত বছর পুলিশ করোনা পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে, এবারও দ্বিতীয় ঢেউ সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। গত বছর লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এবারও গত দু’দিন ধরে ঢাকা ছাড়ছেন, এগুলো ঠিক না। এগুলো নৈতিকভাবে খুবই অন্যায় কাজ। সোমবার বিভিন্নভাবে যারা যেখানে পৌঁছেছেন, তারা সেখানেই থাকবেন। আমি গ্রামবাসীকে অনুরোধ করবো, যারা ঢাকা থেকে গ্রামে গেছেন, তাদের আইসোলেটেড করুন। তারা যেন অন্যকে ইনফেক্টেড করতে না পারে।

আইজিপি বলেন, অতি প্রয়োজন ছাড়া মুভমেন্ট পাস ব্যবহার করা যাবে না। মহামারির মধ্যেও কেউ যদি বাইরে বের হওয়ার জন্য প্রতারণা করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া একটি ফোন নম্বর ও একটি গাড়ির নম্বর প্লেট দিয়ে একবার আবেদন করা যাবে। তবে প্রথমে কতোজন এ পাস পাবে সেই সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। যে কেউ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে পাস নিতে পারবেন। তিনি বলেন, মুভমেন্ট পাস নিতেই হবে এমন না। আমরা কাউকে বাধ্য করছি না। এখানে আইনগত কোনো বিষয় নেই। তবে পাস ছাড়া কেউ বের হলে তিনি পুলিশের জেরার মুখে পড়বেন। কেউ যদি মুভমেন্ট পাস নিতে না চায় তাহলে আমরা তাকে জোর করবো না, এটা জোর করার বিষয় না। আমরা কাউকে বাধ্য করছি না। তবে আমরা নাগরিকদের সহযোগিতা করছি। যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না বা স্মার্টফোন নেই তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ না পারে তাহলে প্রতিবেশীর সাহায্য নিতে পারে। তাছাড়া আমরা তো গণমাধ্যমের কাছ থেকে প্রতিদিনের ফিডব্যাক পাবো।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=270181&cat=3