১৪ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ৩:০৮

লকডাউনে পুলিশের মুভমেন্ট পাস নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি

লকডাউনে জরুরি প্রয়োজনে মানুষের চলাচলের জন্য চালু হয়েছে পুলিশের মুভমেন্ট পাস। গতকাল মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এক অনুষ্ঠানে এই মুভমেন্ট পাস অ্যাপের উদ্বোধন করেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।

আজ থেকে আগামী ২১ এপ্রিল দেশে চলবে কঠোর লকডাউন। এ সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে যেতে পারবে না। তবে সর্বাত্মক লকডাউন চলাকালে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে লাগবে পুলিশ পাস। এ জন্য নিতে হবে মুভমেন্ট পাস। দেশের যেকোনো নাগরিক এই পাস নিয়ে লকডাউনের সময় বাইরে যেতে পারবেন।

এ দিকে পুলিশের এই মুভমেন্ট পাস নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানা বিভ্রান্তি। এই পাস ব্যবহার করে নাগরিকরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন। তবে এক মোবাইল নম্বর ও গাড়ি নম্বর দিয়ে একবারই পাস নেয়া যাবে। তারা এটাকে হয়রানি বলে মনে করছেন।

বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ ব্যক্তিদের স্বজনরা পুলিশের এই মুভমেন্ট পাসকে এক ধরনের হয়রানি বলে মনে করছেন। টিকাটুলীর বাসিন্দা সাদেক মাহমুদ বলেন, পুলিশের এই মুভমেন্ট পাস সাধারণত একবারই ব্যবহার করা যাবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় পাসের জন্য আবারো অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনকে একদিনে হয়তো একাধিকবার হাসপাতালে যেতে হতে পারে। একই সাথে জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ কেনার জন্য রোগীর স্বজনকে বারবার যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু অনটাইম পাসে রোগীর স্বজনদের বারবার যাতায়াত করতে সমস্যা হবে। আবার দেখা গেল জরুরি চলাচলে পাসের জন্য দ্বিতীয় দফায় অনলাইনে আবেদন করা হলো। কিন্তু একই দিনে দ্বিতীয় দফা পাস তিনি পেলেন না। এ ক্ষেত্রে তাকে হয়রানির শিকার হতে হবে। একইভাবে পুলিশের মুভমেন্ট পাসের জন্য লোকজনকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। কিন্তু যাদের অনলাইনে আবেদনের সুযোগ নেই তারা জরুরি প্রয়োজনে চলাচলের জন্য কী করবেন? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের এই মুভমেন্ট পাস নিয়ে প্রান্তিক মানুষের কী হবে। যাদের ইন্টারেনট ব্যবস্থা নেই, স্মার্টফোন নেই, তারা কিভাবে এই পাস সংগ্রহ করবেন।

অবশ্য পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ মুভমেন্ট পাস অ্যাপসের উদ্বোধনকালে এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, দেশে প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কেউ না পারে তাহলে প্রতিবেশীর সাহায্য নিতে পারে। তা ছাড়া আমরা তো গণমাধ্যমের কাছ থেকে প্রতিদিনের ফিডব্যাক পাবো।

আইজিপি বলে, মুভমেন্ট পাস নিতেই হবে এমন না। আমরা কাউকে বাধ্য করছি না। এখানে আইনগত কোনো বিষয় নেই। তবে পাস ছাড়া কেউ বের হলে তিনি পুলিশের জেরার মুখে পড়বেন।

যেসব কারণে মুভমেন্ট পাস পাবেন : টিকা গ্রহণ, মুদিদোকানে কেনাকাটা, কাঁচাবাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা, চাকরি, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, লাশের সৎকার, ব্যবসা ও অন্যান্য ক্যাটাগরির লোকজনের পুলিশের মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করা যাবে।

যেভাবে আবেদন করতে হবে : আবেদনকারীকে (সড়াবসবহঃঢ়ধংং.ঢ়ড়ষরপব.মড়া.নফ) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে পাসের জন্য আবেদন করতে হবে।

শুরুতে একটি সংক্রিয় মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে। আবেদনকারী কোথা থেকে কোথায় যাবেন, তা জানতে চাওয়া হবে। বক্সে সেই তথ্য দিতে হবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট ফরমে আবেদনকারীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হবে। সেই তথ্য ধাপে ধাপে প্রদান করতে হবে। আবেদনে যে থানা এলাকা থেকে যাবেন, যে থানা এলাকায় যাবেন, আপনার নাম, লিঙ্গ, বয়স, ভ্রমণের কারণ, পাস ব্যবহারের তারিখ ও সময়, পাসের মেয়াদ শেষের তারিখ ও সময়, জাতীয় পরিচয়পত্র, নিজস্ব গাড়ির তথ্য, এরপর আবেদনকারীকে একটি ছবি আপলোড করে ফর্মটি জমা দিতে হবে। জমা দেয়া ফরমে আবেদনকারীর প্রদত্ত তথ্যাবলির ভিত্তিতে মুভমেন্ট পাস ইস্যু করা হবে। ওয়েবসাইট থেকে পাসটি ডাউনলোড করে সংগ্রহ করতে হবে। চলাচলের সময় কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারকে পাস প্রদর্শন করতে হবে। এই পাসধারী ব্যক্তি বাধামুক্তভাবে সড়কে চলাচল করতে পারবেন। তবে সবাই এই পাস পাচ্ছেন না। শুধু জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্টদের দেয়া হবে এ পাস। যিনি পাস পাবেন শুধু তিনিই এটি ব্যবহার করে কাজ করতে পারবেন।

ঘর থেকে বের হবেন না: আইজিপি
পুলিশের আইজি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সর্বাত্মক লকডাউনের মধ্যে কেউ ঘর থেকে বের হবেন না। আর যার অতি জরুরি প্রয়োজন, ঘর থেকে বের না হলে চলবে না এমন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশ পাস দেবে। এ জন্য অনলাইনে আবেদন করলেই যাচাই-বাছাই শেষে যেকোনো ব্যক্তি এ পাস পেতে পারেন।

গতকাল পুলিশ মুভমেন্ট পাস অ্যাপসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সরকার ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। এই সময় বেশ কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করেছে। যেগুলো বাস্তবায়নে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবে। এ জন্য সবার সহযোগিতাও দরকার। করোনা সংক্রমণ যে পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে তাতে করে সব ধরনের মুভমেন্ট বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আর এ কারণে আমরা যে যেখানে আছি ঠিক সেখানেই থাকব। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবো না। তিনি বলেন, জনগণের কথা চিন্তা করেই এই অ্যাপসটি চালু করা হয়েছে। যেমন কেউ কাঁচাবাজারে যাবেন, হাসপাতালে অসুস্থ রোগীকে নেয়া, মৃত ব্যক্তির দাফন, জরুরি সেবাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যক্তিরা এ সময় প্রয়োজনেই বের হতে চান। মূলত এসব বিষয় মাথায় রেখেই পুলিশ এ অ্যাপসটি চালু করেছে। অ্যাপসটি কোনো আইন নয়, মূলত মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ আরো সহজ হবে।

লকডাউন কার্যকরে রাজশাহীর এসপিদের ডিআইজির নির্দেশ
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে সরকার ঘোষিত ৮ দিনের ‘কঠোর লকডাউন’ কার্যকরের জন্য পুলিশ সুপারদের (এসপি) নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।

ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এ সভায় ডিআইজি আবদুল বাতেন তার কার্যালয়ের পদ্মা কনফারেন্স হল থেকে যোগ দেন। তিনি এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। রাজশাহী বিভাগের আট জেলার এসপিরা নিজ নিজ কার্যালয় থেকে সভায় যোগ দেন।

সভার শুরুতে ডিআইজি আবদুল বাতেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব পুলিশ সদস্যকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেন। সেই সাথে লকডাউন নিয়ে সব ধরনের সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে এসপিদের নির্দেশনা দেন তিনি।

এ সময় ডিআইজির কার্যালয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, টিএম মোজাহিদুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কমান্ড্যান্ট মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/575651