১৪ এপ্রিল ২০২১, বুধবার, ৩:০৬

এপ্রিলের ১৩ দিনে করোনায় রেকর্ড সংখ্যক ৮৪৫ জনের মৃত্যু

দেশে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে (মঙ্গলবার পর্যন্ত) এ ভাইরাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়েছেন। একই সময়ে বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার পরিমাণও। উল্লেখিত সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৪৫ জন।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর এ সংখ্যা। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৯১ জনে। একই সময়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ২৮ জনের শরীরে। এতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়ে ছয় লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫ জন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৮৫৩ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশে করোনা থেকে সুস্থ রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩২ হাজার ৯৫৫ জনের। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু ছিল ২৫০ জন। অপরদিকে ওই বছরের ১২ জুন পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃত্যু ছিল ১ হাজার ৯৫ জন। এরপর থেকে মৃত্যু কিছুটা বেড়ে যায়। এর মধ্যে জুলাইয়ে ১ হাজার ১০২ জন, আগস্টে ১ হাজার ৩১৬, সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ১৮৯, অক্টোবরে ৮৫৩ , নবেম্বরে ৫৮৫ ও ডিসেম্বরে মারা যান ৮৮০ জন। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে করোনায় মৃত্যু হয় ৭৯৯ জনের। ফেব্রুয়ারিতে আগের মাসগুলোর তুলনায় মৃত্যুহার অনেক কম ছিল। ওই মাসে মারা যান ৪৩৪ জন। এ কারণে অনেকেই মনে করেছিলেন বাংলাদেশে করোনা ঝুঁকি কমে গেছে। এরপর মার্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকান ও ইউকে ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুইটি ভ্যারিয়েন্ট খুবই সংক্রামক। ফলে মার্চে নতুন সংক্রমণ বাড়ে প্রচুর কিন্তু সে তুলনায় মৃত্যু বেশি ছিল না। মার্চে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬২ জন। সে তুলনায় চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে মৃত্যু হয়েছে ৮৪৫ জনের। মৃত্যু সংখ্যা বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত চিকিৎসকরাও। আগামীতে এ মৃত্যুর হার আরও বাড়ার আশঙ্কা তাদের।

এদিকে হাসপাতালে শয্যা পেতে অ্যাম্বুলেন্সে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালগুলোতে রোগীর জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। আইসিইউ সংকট দেখা দিয়েছে। সেবা বাড়াতে হলে হাসপাতালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। দরকার হলে স্কুল, কলেজ, মাদরাসাসহ খোলা মাঠকে হাসপাতালে রূপান্তর করতে হবে। এগুলো পরিচালনায় আরও চিকিৎসক-নার্স নিয়োগ দিতে হবে। জনবল না থাকলে হাসপাতাল বানিয়ে লাভ কী?

ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোয় করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হওয়ার মতো কোনো বেড খালি নেই। সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মধ্যে ২৮০০ বেডের মধ্যে মাত্র ৩০০টি বেড খালি রয়েছে। তবে সেগুলো বিশেষায়িত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে।

এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৮ হাজার ৭৬১ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৭১ জন। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৯ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৭২ লাখ ৫২ হাজার ৬২১ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ কোটি ৪ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৩ জন।

করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১৯ লাখ ৯০ হাজার ১৪৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জনের।
আক্রান্ত ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৭১ হাজার ৮৯ জন।

আক্রান্ত এবং মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিল এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৪০৯ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩১ জনের।

https://dailysangram.com/post/449643