১১ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৪:৪১

আইসিইউ পেতে হাহাকার

হাসপাতালে ঠাঁই নেই বিশেষজ্ঞদের দাবি- সব ধরনের হাসপাতালে করোনা ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে

প্রবীণ সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত দেড়টায় করোনার উপসর্গ নিয়ে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে তাকে আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে আইসিইউ বেড না পাওয়ায় নেয়া হয় ইমপালস হাসপাতালে। সেখানে তিনি ইন্তেকাল করেন। দেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী নায়িকা সারাহ বেগম কবরীর ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়ে। সেদিন রাতেই তাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বুধবার রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ বেড পাননি। অতপর সাবেক এমপি কবরীর অবস্থার অবনতি হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী নুর উদ্দিন রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে পারেনি। অতপর তিনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিষয়টি জানান। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কবরীকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। নায়িকা কবরীর ভাগ্য ভালো প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে যথাসময়ে আইসিইউ পেয়েছেন। কিন্তু সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ারকে যখন আইসিইউতে নেয়া হয় ততক্ষণে তার শরীরের অবস্থা শেষ। এই হলো বর্তমান করোনাকালে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার চিত্র। সাধারণ মানুষের অবস্থা কোন পর্যায়ে তা সহজেই অনুমেয়। অথচ রাজধানীসহ দেশের অনেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করানো হচ্ছে না।

রাজধানীর উত্তরখানের মোহাম্মদ রায়হানের মা মনোয়ারা বেগমকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সাপোর্ট দরকার ছিল। মনোয়ারাকে বাঁচাতে ছেলে রায়হান অ্যাম্বুলেন্সে মাকে নিয়ে রাজধানী ঢাকার এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটেছেন। গুরুতর অসুস্থ মাকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেন। সেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট মেলেনি। অতপর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও আল রাজি ইসলামী হাসপাতাল হয়ে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানেই অক্সিজেনের অভাবে অ্যাম্বুলেন্সেই পুত্রের কোলে মায়ের মৃত্যু হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুরের আলী মোর্শেদ নোটনের স্ত্রীর করোনাভাইরাস ধরা পড়লে ২৪ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চার দিন পর চিকিৎসক যখন তাকে আইসিইউতে নিতে বললে ঢাকা মেডিক্যালের কোভিড ইউনিটে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি সবগুলো কোভিড হাসপাতালে যোগাযোগ করে কোথাও আইসিইউ পাননি। পরে গ্রিনরোডের এক হাসপাতালে অধিক মূল্যে একটি আইসিইউ শয্যা পেয়ে স্ত্রীকে দ্রæত সেখানে ভর্তি করান। তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন। দেশের করোনা চিকিৎসার এই ভয়াবহ চিত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেও এসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে তিল ধরণের ঠাঁই নেই। মানুষের অসচেতনতার কারণে যে হারে করোনা রোগী বাড়ছে সামনে সারা দেশকে হাসপাতাল বানালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলো। বেসরকারি হাসপাতালেও শয্যা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। অথচ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালসহ অনেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের ভর্তি করানো হচ্ছে না। কোথাও আবার সাধারণ রোগীদের ভর্তি না করিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৪৩ জন। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৬৬১ জন।

জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সব ধরনের হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। আইসিইউ সেট-আপ করতে সময় লাগে। কিন্তু হাই-ফ্লো অক্সিজেনের সাপ্লাইটা আমাদের বাড়াতে হবে। সেটার সক্ষমতা আমাদের আছে। দ্রæত এটা করতে হবে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এদিকে নজর দিতে হবে। তাহলে আমরা অনেক মানুষকে বাঁচাতে পারব।

মার্কিন এক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা আইএইচএমই বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে যে হারে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণ চ‚ড়ায় উঠবে। তখন বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোয় শুধু করোনা রোগীর জন্যই সাধারণ শয্যার প্রয়োজন পড়বে ৭৪ হাজার। এর মধ্যে ৭ হাজার আইসিইউ শয্যার প্রয়োজন হবে। ভেন্টিলেটরের দরকার হবে ১৭ হাজারের কাছাকাছি।

অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি করোনা হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার। এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৬০০। এছাড়া সারা দেশে করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৩টি, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ১ হাজার ২২টি ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৮৯৭টি। গতকাল রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের বড় সরকারি ৭টি হাসপাতাল এবং বেসরকারি ৭ হাসপাতালের কোথাও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বেড ফাঁকা নেই। ৯ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ১৬টি বেড, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতলের ১০টি, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারের ১৬টি, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ৬টি, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৯টি, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের ১৫টি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বেডের সবকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২০ বেডের আইসিইউতে রোগী ভর্তি আছেন ২১ জন। বেডের অতিরিক্ত রোগী ভর্তি সেখানে। কেবল নতুন স্থাপিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৪টি। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকাভুক্ত সরকারি ১০ হাসপাতালের মোট ১৩২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে মাত্র ৩টি, রোগী ভর্তি ১২৯ জন।

অপরদিকে, অধিদফতরের তালিকাভুক্ত বেসরকারি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ২২টি বেড, আসগর আলী হাসপাতালের ১৮টি, ইবনে সিনা হাসপাতালের ৭টি, ইউনাইটেড হাসপাতালের ১৫টি, ইম্পালস হাসপাতালের ৫২টি, এ এম জেড হাসপাতালের ১০টি এবং বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৯টি বেডের সবগুলোতে রোগী ভর্তি আছেন। কেবল স্কয়ার হাসপাতালের ১৯ বেডের মধ্যে ৪টি এবং এভার কেয়ার হাসপাতালের ২১টির মধ্যে ১০টি বেড ফাঁকা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে অধিদফতরের তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলোর ১৭৩টি আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি আছেন ১৫৯ জন এবং বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ১৪টি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মোট ৩০৫টি আইসিইউ বেডে রোগী ভর্তি আছেন ২৮৮ জন এবং বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ১৭টি। রাজধানী ঢাকা ছাড়া এতদিন দেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ফাঁকা থাকলেও সেখানে রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছে, কমতে শুরু করেছে ফাঁকা বেডের সংখ্যা। দেশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড রয়েছে ৬০০টি। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছেন ৪৪৫ জন এবং বেড ফাঁকা রয়েছে মাত্র ১৫৫টি।

প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ বাড়ছে। এ অবস্থায় লকডাউনের পাশাপাশি হাসপাতালে সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা স¤প্রসারণ করে মহামারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সরকার। পরে রোগী কমে আসায় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কয়েকটি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরই মধ্যে ডিসেম্বরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের নি¤œমুখী প্রবণতা শুরু হয়। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দৈনিক শনাক্তের হার নেমে আসে তিন শতাংশের নিচে। কিন্তু ফেব্রæয়ারির শেষ দিক থেকে সংক্রমণ আবার বাড়ছে দ্রæত গতিতে। গত কয়েক দিনে প্রায় প্রতিদিনই হয় মৃত্যুর রেকর্ড নয়তো শনাক্তে রেকর্ড হচ্ছে।

মূলত হাসপাতালে করোনা রোগীদের আইসিইউ পেতে হাহাকার চলছে। এরই মধ্যে চিকিৎসা নাজুক হয়ে উঠেছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল নাজমুল হক বলেন, বিশাল চাপ এখন করোনা রোগীদের। কোনো বেড আমাদের ফাঁকা নেই। জেনারেল যারা মেডিসিনের কেইস নিয়ে আসছেন, তাদেরও ভর্তি করাতে পারছি না। আমাদের কোভিড সার্জারি ও গাইনির কিছু বেড ফাঁকা আছে। কোভিড মেডিসিনের কোনো বেড খালি নেই। ক্ষমতার চেয়েও বেশি রোগী নিয়ে আছি আমরা। আগের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগী এখন চিকিৎসার জন্য আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, বয়স্করা হয়তো বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিল। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় তারাও ক্রিটিক্যাল রোগী হিসেবে আসছেন। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা যদি লাগাম টেনে ধরতে না পারি, এটা কিন্তু দুই-তিন সপ্তাহ পরে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মানুষের দুর্দশাও বাড়বে।

রোগীর চাপ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করি। অবস্থা ভালো হলে আবার ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। খালি থাকলে বাইরে থেকে রোগী ভর্তি করা হয়। এখন প্রতিদিনই আইসিইউ বেডের জন্য রিকোয়েস্ট আসছে। রোগী ভর্তির পরিমাণ আগের থেকে চারগুণ বেড়েছে।

রোগীর চাপ বেড়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও। এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক ডা. আরিফ মাহমুদ জানালেন, কয়েক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রায় ফাঁকা ছিল। ১৯ মার্চের পর থেকে রোগীর চাপ আবার বেড়ে গেছে। ২৮টা কেবিন, ১২টা আইসিইউর একটাও ফাঁকা নেই। অনেক রোগীর স্বজনরা সিটের জন্য অনুরোধ করলেও ভর্তি নেয়া যাচ্ছে না। অনেক রোগীকে ফেরত দিতে হচ্ছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিউনিটেকশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্টের প্রধান ডা. সেগুফা আনোয়ার বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। কোনো সিট নেই। নতুন কোনো রোগীকে সিট দিতে পারব না। আইসিইউ থেকে কেবিনে নেব, কেবিন খালি পাই না। কেবিনের রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে, আইসিইউ নেই; এই হলো অবস্থা।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান বললেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নন-কোভিড রোগের চিকিৎসা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে কোভিডের চিকিৎসা চালানো হতে পারে। রোগীর খুবই চাপ, আমরা ঠাঁই দিতে পারছি না এমন একটা অবস্থা। বেডগুলো মোটামুটি পূর্ণ। দুই-এক দিনের মধ্যে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট চালু হবে আমাদের এখানে। এখন সাধারণ বেড আছে ১৫০টা। আরো ৫০টা বেড আমরা শনিবারের মধ্যে চালু করব। নতুন রোগীদের অধিকাংশেরই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে জানিয়ে তিনি চিকিৎসক বলেন, অক্সিজেনের রোগী ছাড়া আমরা ভর্তি নিচ্ছি না।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, গতবছর করোনা আস্তে আস্তে বেড়েছে। এবার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মহাখালীতে ডিএনসিসির আইসোলেশন সেন্টারে ১ হাজার ৫০০ বেডের কোভিড ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। আইসিইউ যতগুলো বাড়ানো দরকার বাড়াচ্ছি। আইসিইউ সংখ্যা আরো বাড়াতে হলে আমাদের হাসপাতালে আরো জায়গা থাকতে হবে, বেড লাগবে, এগুলো চালাতে পর্যাাপ্ত লোকবল লাগবে। আমরা কাজ করছি।

এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে প্রায় ৯০ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা টেলিমেডিসিনের ওপর নির্ভরশীল। তবে এসব রোগী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে কতটা কার্যকর সেবা পাচ্ছেন সুনির্দিষ্ট সে হিসাব অধিদপ্তরের কাছে নেই। জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন, সবার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়ার দরকার নেই। যাদের রক্তে দ্রবীভ‚ত অক্সিজেন কমে যায়, সংক্রমণে যাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার দরকার হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, এসব রোগীর একটি বড় অংশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ থেকে সেবা পাচ্ছেন। বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান থেকেও মানুষ সেবা পাচ্ছেন। অনেকে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর লকডাউনের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির প্রস্তুতি নিতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারকে সব ধরনের হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যেসব বড় হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি করাচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে সে সব হাসপাতালে রোগী ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোগী ভর্তি করাতে না পেলে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যু কাম্য নয়।

https://www.dailyinqilab.com/article/372851