১১ এপ্রিল ২০২১, রবিবার, ৪:৩৮

খননে অনিয়ম

অস্তিত্ব হারাচ্ছে চলনবিলের নদী

২২ নদী ভরাট, উদাসীন বিআইডব্লিউটিএ

চলনবিলের বুক চিরে প্রবহমান একটি নদী গোমতি। বাঘাবাড়ি থেকে উত্তর জনপদের প্রায় আটটি জেলার সঙ্গে নৌ চলাচলের মাধ্যম এটি। এক সময়ের উত্তাল গোমতি এখন দখল আর দূষণের কবলে। বর্ষা মৌসুমে কিছু ছোট নৌকা চলাচল করলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে জেগে ওঠে চর। তবে নদীর আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে খনন কাজ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল নদীর প্রস্থ ও গভীরতা বৃদ্ধি এবং নাব্য ফিরিয়ে নৌ চলাচল স্বাভাবিক করা। বিশেষ করে বিল এলাকার মানুষের জন্য নদীর পানি দিয়ে সেচ সুবিধা সৃষ্টি এবং উন্মুক্ত জলরাশিতে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কিন্তু বাস্তবে এসবের কিছুই হয়নি।

নদী খনন করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু নাব্য ফেরেনি। খনন করা মাটি ভেঙে আবার ভরাট হয়েছে নদী। শুধু গোমতি নদীর ক্ষেত্রেই এমনটি হয়েছে তা নয়। খনন কাজ চলছে চলনবিলের আত্রাই ও গুমানী তুলশীগঙ্গা নদীতেও। প্রতিটি নদী খননেই এমন অনিয়ম করা হয়েছে। কোনো নদীই নিয়ম মোতাবেক খনন করা হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, খনন করা মাটি নদী তীর হতে ১ হাজার মিটার দূরে রাখার কথা। অথচ খননের মাটি নদীর দুই পাশে রাখা হয়েছে। সেই মাটি আবার নদীতেই ঢলে যাচ্ছে। মাটি ভরাট হয়ে আবার ভরাট হচ্ছে নদী। তীর ঘেঁষে মাটির বাঁধ তৈরি হওয়ায় সংকুচিত হয়েছে নদী। নদী খননে এমন দৃশ্যমান অনিয়ম করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। শুধু খননে অনিয়ম নয়, দখল ও দূষণ আর ভরাটের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাচ্ছে চলনবিলের এমন প্রায় ২২টি নদী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাট থেকে উৎপত্তি হয়ে চলনবিলের মধ্য দিয়ে মুসা খাঁ, নন্দকুজা, চিকনাইসহ বাঘাবাড়ির হুরাসাগর হয়ে যমুনায় মিলিত হয়েছে বড়াল নদী। প্রমত্তা বড়ালের চারঘাট এলাকায় ৪শ থেকে ৬শ ফুট নদী দখল করে দুটি স্থাপনা নির্মাণসহ বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া থেকে বনপাড়া হয়ে জোনাইল বাজার পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার নদী দখল করে সরকারি অফিসসহ ব্যক্তিমালিকানা বহু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আত্রাই, নন্দকুঁজা, গুমানী, গুড়, করতোয়া, তুলসি চেঁচিয়া, তুলশীগঙ্গা, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গাসহ প্রায় ২২টি নদীর দুই পাড় দখল করে বসতি নির্মাণ অব্যাহত আছে। ১৮টি খালের মধ্যে নবীরহাজীর জোলা, হক সাহেবের খাল, নিমাইচড়া খাল, বেশানীর খাল, গুমানী খাল, উলিপুর খাল, সাঙ্গুয়া খাল, দোবিলা খাল, কিশোরখালির খাল, বেহুলার খাড়ি, বাকইখাড়া, গোহালখাড়া, গাড়াবাড়ি খাল, কুমারভাঙ্গা খাল, জানিগাছার জোলা, সাত্তার সাহেবের খাল, কিনু সরকারের ধর অস্তিত্ব হারাতে চলছে।

জানা গেছে, চলনবিলের তিনটি নদী কমপক্ষে ৯৭ ফুট (৩০ মিটার) প্রস্থ এবং ৮ ফুট (২.৫ মিটার) গভীর করে খনন করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই করা হয়নি। আত্রাই নদীর ভাঙ্গুড়ার এরশাদ নগর থেকে গুরুদাসপুর রাবারড্যাম পর্যন্ত ৯৭ কিলোমিটার খনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আত্রাই নদীর খনন কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে গুমানি নদীর খনন কাজ করেছেন কারাগারে থাকা ক্যাসিনো সাহেদ।

ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প ইনচার্জ ইয়াকুব আলী জানান, তারা উপরের নির্দেশনা মোতাবেক ২.২ থেকে ২.৪ মিটার পর্যন্ত গভীর করছেন। তবে সব স্থানে খনন করা হচ্ছে না। নদী খনন দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান নদী খননের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি। এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতেও রাজি হননি তিনি। নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান বলেন, নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান চলমান আছে। বড়াল ও নারদসহ অন্যান্য নদীর খনন কাজ অল্প দিনেই শুরু হবে বলে তিনি জানান।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/410665